বুধবার

২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এভারগ্রীণ’র দখল করে নির্মাণাধীণ কাউন্টার উচ্ছেদ করলো আরডিএ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেতো : প্রধানমন্ত্রী শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানির তীব্র সংকট, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনরা নিয়ামতপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড রাজশাহীতে নারীর মোবাইল ফোন-ব্যাগ ছিনতাই, তিন ছিনতাইকারী গ্রেফতার

ভোগান্তির শেষ নেই রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের যে শাখায়

Paris
Update : সোমবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২২

শাহানুর রহমার রানা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও একই জেলার রাধাকান্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন সংক্রান্ত আবেদিত ফাইলগুলো মাসের পর মাস নিরলসভাবে পড়ে থাকে বিদ্যালয় শাখার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের টেবিলে। এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। একমাসে বেশ কয়েকবার শিক্ষা বোর্ডে আসার পরেও ভোগান্তির যেনো শেষ নেই শিক্ষক আর ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের। এই ভোগান্তি এতোটাই বেশি যে, বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ সাহস করে বলেই ফেলেন ‘কাজ সম্পন্ন করতে হলে রাজশাহী শহরে বাড়ী ভাড়া করে থাকতে হবে।’

বগুড়া জেলার শেরপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যায়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় শাখার অসহোযোগিতার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বকেয়া বেতন ভাতার আবর্তে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। অবশেষে শেরপুর উপজেলার কোন এক রাজনৈতিক নেতার ছায়াতলে আসায় বিদ্যালয় পরির্দশক দেবাশীষ রঞ্জন রায় উক্ত ফাইলটি অগ্রসর করেন এবং ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পান সেই শিক্ষক। এমন অনেক অভিযোগ প্রায় বছর জুড়ে গেলেই আছে বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবাশীষ এর বিরুদ্ধে। একদিকে অযাচিত কারণে ফাইল আটকে রাখা তো অন্যদিকে, প্রশিক্ষণবিহীন ‘ই-নথি’ কার্যক্রমের বিষয়গুলো বিদ্যালয় শাখার ভোগান্তি বৃদ্ধি করেছে কয়েকগুণ বলে জানান সেখানে কর্মরতরা।

এতো গেল ম্যানেজিং কমিটির ভোগান্তি। অন্যদিকে, আইনগত জটিলতায় এমপিওভুক্ত কিংবা বেতন সংক্রান্ত বিদ্যালয়ের কোন ফাইল শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় শাখাতে পৌছালে সেটার ভোগান্তি যেনো কয়েক বছরেও শেষ হয়না। মহামান্য হাই কোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের লিখিত নির্দেশনা ও উপলেজা নির্বাহী অফিসারের দেয়া চিঠি থাকলেও নানারকম টালবাহানায় উক্ত ফাইলগুলো আটকে রাখেন বিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তারা বলে অভিযোগের অন্ত নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, এমন ধরনের সমস্যায় আবর্ত থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিগত দুই বছরের অধিক সময় ধরে বেতনহীন জীবন যাবন করছি। উচ্চ আদালতের রায় থাকলেও বিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তারা আমাদের ফাইলগুলো অযাচিত কারণে আটকে রাখেন বছরের পর বছর ধরে।

আজ না কাল, কাল না সামনের মাসে, এভাবে বছর পেরিয়ে গেলেও ফাইলগুলোর কোন অগ্রগতি হয়না। এই ধরনের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন বিদ্যালয় শাখায় কর্মরতরাও। এই ধরনের অভিযোগের পেছনে মূল হোতা বিদ্যালয় পরিদর্শক বলেও জানান ভুক্তভোগীরা। উনার টেবিলে একবার ফাইল গেলে সেই ফাইলের নিস্তার নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা। বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর দেবাশীষ রঞ্জন রায় প্রতিদিন অফিসে আসেন বেলা ১টার পরে। জরুরী ফাইলগুলো স্বাক্ষর করা তো দূরের কথা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে করেন অসদাচরন বলেও বিস্তর অভিযোগ আছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নিজের পরিচিতি ও শক্ত লবিং আছে বলে তিন বছরের জন্য প্রেষণের মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডে যোগদান করেও তিনি থেকে গেছেন তিন টার্ম মেয়াদেও। চেয়ারম্যান, সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত বদলী হলেও বিদ্যালয় পরিদর্শকের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অভিযোগ থাকার পরেও উনার আজ অবদি বদলী হয়নি। বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবাশীষ রায়ের অনিয়মিত অফিস করা, শিক্ষকদের সাথে অসদাচরন করা ও অযাচিত কারণে যথাসময়ে ফাইলে স্বাক্ষর না করে ফাইল আটকে রাখার দায়ে বিগত চেয়ারম্যানের আমলে তিনি শোকজও হয়েছেন একাধিকবার।

এদিকে, বিদ্যালয় শাখাতে রয়েছে কর্মী স্বল্পতাও। বিভাগের আটটি জেলার প্রায় সাত হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের ফাইল মাত্র তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারি কে সম্পন্ন করতে হয়। কর্মী স্বল্পতা থাকলেও আগত সেবাগ্রহীতাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাদের কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব, যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যালয় পরিদর্শক ফাইলগুলো স্বাক্ষরপূর্বক ছেড়ে দিতেন বলে জানান সেখানে কর্মরতরা। তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শক যখন লম্বা ছুটিতে যান তখন নিয়মানুযায়ী উপ-বিদ্যালয় পরির্দশককে চলতি দায়িত্ব অর্পণ না করে তিনি অন্যকোন শাখার কর্মকর্তাকে নিজের দায়িত্ব দিয়ে যান।

যার কারণে, ফাইলগুলোর অগ্রগতি হওয়া তো দূরের কথা আরো স্থূলগতি ভর করে ফাইলগুলোতে। বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবাশীষ রঞ্জনের ফাইল আটকে রাখার প্রবণতা আর শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছেছে যে, অনেক শিক্ষক আবেকতাড়িত হয়ে সবার সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এমন ইতিহাস অহরহ বিদ্যালয় শাখাতে।

এদিকে, চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে ম্যানুয়ালী পন্থায় কাজ করে যাচ্ছেন ডিলিংস অফিসার ও কর্মচারিরা। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ব্যতীরেকেই হঠাৎ করে ‘ই-নথি’ পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য প্রশাসন থেকে আকস্মিক চাপে উক্ত শাখার কাজের গতিতে নেমে এসেছে ধীরতা। এদিকে, পূববর্তী সময়ে জমে থাকা প্রায় ছয়-সাতশ ম্যানুয়ালি ফাইল তো অন্যদিকে, নতুন ফাইলের সংযোজন। এযেনো ‘মরার উপর খারার ঘা’ বলে মন্তব্য সেখানে কর্মরতদের।

সেখানে কর্মরতদের মন্তব্যানুযায়ী, পূর্ববর্তী ফাইলগুলো ম্যানুয়ালী পদ্ধতিতে সম্পন্ন করে নতুন আগত ফাইলগুলোকে ‘ই-নথি’ পদ্ধতিতে ইনপুট দিলে ভোগান্তি হ্রাস পেতো শিক্ষক ও সেবাগ্রহীতাদের। কাজের মানোন্নয়ন লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনানুযায়ী ‘প্রায় দেড় বছর পূর্বে বিদ্যালয় শাখার জন্য চারটি কম্পিউটার ক্রয় করা হলেও বিগত সময়ে তেমন কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা বোর্ডের নতুন ভবনের পঞ্চম তলায় নিজস্ব ও স্বয়ংসম্পন্ন আইটি শাখা ও এক্সপার্ট থাকার পরেও টিটিসি’তে নামমাত্র সাতদিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল বোর্ড কর্তৃপক্ষ। উচ্চ মূল্যের কম্পিউটার সরঞ্জাম আর নামমাত্র প্রশিক্ষণ দেবার বিষয়টি তেমন কোন কাজেই আসেনি তখন। ফাইলের স্তুপ যখন প্রায় পাহাড়সম তখন এসে কর্তৃপক্ষ তাগাদা দিচ্ছে ‘ই-নথি’র উপর।

এবিষয়ে, সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু দারদা খান বলেন, ‘ই-নথি’ পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারিকে প্রথমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এটি সময়ের ব্যাপার। হঠাৎ করে তাদের উপর এমন সফটওয়ারভিত্তিক বিষয় চাপিয়ে দিলে তারা হিমশিম খাবে কাজ করতে। বোর্ডের আইটি শাখার সিনিয়র সিস্টেম এনালিষ্ট শফিকুল ইসলাশ জুয়েল এবিষয়ে বলেন, ‘ই-নথি’ পদ্ধতিতে কাজ করাটা খুব জটিল কিছু নয়। তবে এরজন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ নেয়া প্রয়োজন। আমাদের লজিস্টিক সার্পোট ও এক্সপার্ট আছে। আমাদেরকে কর্তৃপক্ষ বললে আমরা আইটি শাখাতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে নিয়ে এসে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ দেবার ব্যবস্থা করতে পারি। কিংবা প্রয়োজন হলে উক্ত শাখাগুলোতে গিয়েও আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবার ব্যবস্থা করতে পারি।

সরেজমিনে বিদ্যালয় শাখায় গিয়ে দেখাগেছে, গত ২৪-০১-২০২২ ইং তারিখ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে আইটি শাখার এক্সপার্টরা এসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কাজের ধীরগতি আর ভোগান্তি বিষয়ে উক্ত শাখায় কর্মরত ডিলিংস অফিসারগণ বলেন, এই শাখাতে ফাইল মাসের পর মাস আটকে রাখার ইতিহাস অহরহ। আবার স্বল্প সময়ের মধ্যে আবেদীত ফাইলের কাজ সম্পন্ন করে সেগুলো ছেড়ে দেবার নজিরও আছে। এমনকি ডকেট থেকে আসা কোন ফাইল একদিনের মধ্যেও ছেড়ে দেবার ইতিহাস আছে। তবে, সেক্ষেত্রে উক্ত আবেদীত ফাইলের পেছনে বড় কোন কর্মকর্তা কিংবা রাজনীতিবিদের হ্যালো থাকতে হবে।

ফাইল ভোগান্তি আর ‘ই-নথি’ সম্পর্কে উক্ত শাখার উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক আঞ্জু আরা বেগম বলেন, কোন আইনী জটিলতা কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অসংযুক্তি না থাকলে ডিলিংস অফিসারদের কাজ সম্পন্ন হবার পর উক্ত ফাইলগুলো স্বক্ষরপূর্বক ছেড়ে দেয়া উচিত। তবে, সিনিয়র কর্মকর্তাগণ কেনো ফাইল আটকে রেখে শিক্ষক ও প্রতিনিধিদের ভোগান্তি বৃদ্ধি করেন সেটি আমাদের জানা নেই। অন্যদিকে, সেবার সাথে ‘ই-নথি’ পদ্ধতিটি সংযোজিত হলে সেবার মানোন্নয়ন ঘটবে এটা ঠিক। কিন্তু পূর্ববর্তী সময়ে জমা হওয়া প্রায় ছয়-সাতশ ফাইলগুলো আটকে যাবে ই-নথির আবর্তে। কারণ, প্রশিক্ষণবিহীন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা একদিনে সর্বোচ্চ আট থেকে দশটি ফাইল ইনপুট দিতে সক্ষম হবেন। তাই, পূর্ববর্তী ফাইলগুলো যথাযথ নিয়মে সম্পন্ন করলে ভোগান্তি হ্রাস পেতো শিক্ষকদের।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris