শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইসি মাহবুব তালুকদারের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় ৪০ লাখ টাকা : সিইসি

Paris
Update : শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের বিভিন্ন মন্তব্যকে তার ‘ব্যক্তিগত এজেন্ডা’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। সিইসি বলেন, তিনি একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। উনি আসলেই অসুস্থ, শারীরিক দিক দিয়ে। তিনি কখনও আইসিইউতে, কখনও সিসিইউতে থাকেন। সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট (চিকিৎসা) করেছেন, ভারতে ট্রিটমেন্ট করেছেন। বছরে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ট্রিটমেন্ট করেন, এটা নির্বাচন কমিশন বহন করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘আরএফইডি টক’ অনুষ্ঠানে সিইসি এসব কথা বলেন। ইসি মাহবুব তালুকদার নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও বিনা ভোটের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কে এম নুরুল হুদা বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে ইসির কী করার আছে? এটা তো প্রার্থীদের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বিনা ভোটে নির্বাচিত কেন হলো সেটা দেখার এখতিয়ার ইসির নেই। মাহবুব তালুকদারের উদ্দেশে সিইসি বলেন, উনি এগুলো বলে থাকেন। কোনো নির্বাচন হলে ৬-৭ দিন ধরে বেছে বেছে বের করেন, কোন শব্দটা কোন জায়গায় ব্যবহার করবেন।

যেটা মিডিয়ায় ভালো প্রচারণা পাবে। এ কথা বারবার বলেছি। উনি ব্যক্তিগতভাবে যেটা বলেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত মতামত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে’ হওয়ার যে অভিযোগ, সেটির কোনো সত্যতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে এ অভিযোগ তদন্ত করা যেতো। অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে নির্বাচন বন্ধ করা যেতো। দিনের ভোট রাতে হওয়ার অভিযোগ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা তো অভিযোগ আকারে থেকে গেছে। আদালতের ইন্সট্রাকশন ছাড়া হয় না। অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে আমি কনক্লুসিভ কিছু বলতে পারি না।

আমি তো দেখিনি, আপনিও দেখেননি, আপনারা দেখেছেন? এটা একটা অভিযোগ। এখন তদন্ত হলে আদালতের নির্দেশে হয়তো সেটা বেরিয়ে আসতো। সেটা হলে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেতো। হয়তো সারাদেশের নির্বাচন বন্ধ হতো। তিনি বলেন, দিনের ভোট রাতে হয়েছে এ বিষয়ে কোনো প্রার্থীসহ কেউ নির্বাচন কমিশনে সরাসরি কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি এ অভিযোগ নিয়ে কেউ আদালতেও যাননি। ফলে আমরা ধরে নিচ্ছি, দিনের ভোট রাতে হওয়ার বিষয়টি নেহায়েত একটি অভিযোগ। সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কেউ কোথাও রাতে ভোট হওয়ার বিষয়টি দেখেননি, এমনকি কোনো সাংবাদিকও রাতে ভোট হয়েছে তা দেখেছেন কিংবা লিখেছেন বলে আমাদের জানা নেই।

নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলে আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ, এটা আইন। প্রকৃতপক্ষে আমাদের আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগও ছিলো না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকশ’ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নূরুল হুদা বলেন, গেজেট হওয়ার পর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এর আগে পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেনি। তাই এ বিষয়ে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি, ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও ছিল না। কোনো কেন্দ্রে শতভাগ পড়া অস্বাভাবিক কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শতভাগ ভোট অস্বাভাবিক। এটা আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি।

আমার সীমাবদ্ধতা হলো এটার গেজেট প্রকাশ করা হলে ইসির হাতে কিছুই থাকে না। এটা আইন, এ আইন তো আমি পরিবর্তন করতে পারবো না। সিইসি আরও বলেন, বদিউল আলম মজুমদারকে (সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক) ব্যক্তিগত সুবিধা না দেওয়ায় তিনি কমিশনের সমালোচনা করছেন। শামসুল হুদা কমিশনের আমলে বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কমিশনে। বদিউল আলম মজুমদারের সমালোচমা করে সিইসি বলেন, আমি কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আমার কাছে কয়েক বার এসেছিলেন আমাদের সঙ্গে কাজ করতে। আমি তাকে কাজ করার সুযোগ না দেওয়ায় তিনি কমিশনের সমালোচনা করেন।

অথচ তার বিরুদ্ধে কমিশনে এক কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সাবেক সিইসি শামসুল হুদা হঠাৎ করেই ছবক শিখাচ্ছেন উল্লেখ করে নূরুল হুদা বলেন, তিনি এতদিন পরে এসে আমাদের ছবক দিচ্ছেন। শামসুন হুদা ৯০ দিনের পরিবর্তে ৬৯০ দিন পর নির্বাচন করেছেন, এটা কিভাবে সম্ভব? দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা আর সামরিক শাসনের অধীনে নির্বাচন করা এক কথা নয়, এটা তাকে বুঝতে হবে। বদিউল আলম মজুমদারের মত একজন লোককে তিনি কীভাবে নির্বাচন কমিশনে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন! শামসুল হুদা কমিশন ক্যান্টনমেন্টের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচন করেছেন।

তার অধীনে কমিশনের কাজের নানা দিক তুলে ধরে সিইসি বলেন, সাত কোটি ছয় লাখের বেশি স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করা হয়ছে। পাঁচ কোটির বেশি বিতরণ করা হয়েছ। ইসির অনেকগুলো আইনি বিধি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছে। সমালোচনা গঠনমূলক হলে গ্রহণ করা হয়েছে। নূরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোনো চাপ ছিল না, আমরা আমাদের মত করে কাজ করতে পেরেছি। নির্বাচনে সংঘর্ষ, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়, যদি না প্রার্থীরা সহনশীল হয়। তবে রাজনৈতিক দলের অধীনে নির্বাচন করা কঠিন হলেও তা অসম্ভব নয়, এটা সামরিক সরকারের অধীনের চেয়ে অনেক ভালো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ ইভিএমে করা সম্ভব হবে না, তবে ৫০ ভাগ করা যেতে পারে। কে এম নূরুল হুদা বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন একটি ভালো বিষয়। এটাকে আপনারা এবানডন করবেন না। আমাদের বর্তমানে সক্ষমতা আছে, এতে ১৫০ আসনে আগামী নির্বাচন করা সম্ভব। লোকবল এবং মেশিন দুটোই আছে। প্রশিক্ষিত লোকবল আছে। সেই সক্ষমতা আমরা রেখে যাচ্ছি। কোনো সমস্যা হবে না। তবে সব আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব নয়। এই ইভিএম অনেক উন্নতমানের। সিইসি আগেও বলেছেন, বর্তমানে যে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে সেটি অনেক উন্নত মানের। বাইরে কোনো হ্যাক করা যায় না।

কোনো রকমের কারচুপিও করা যায় না। ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের হাতে বর্তমানে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হয় ৪০ হাজারের মতো। এ ক্ষেত্রে প্রতিকেন্দ্রে তিনটি ভোটকক্ষ ধরলেও মোপ ১ লাখ ২০ হাজার ইভিএমের প্রয়োজন পড়ে। আর ব্যাকআপ হিসেবে প্রয়োজন পড়ে আরও ৮০ হাজারের মতো ইভিএম। তাই ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম নেই। দেশে প্রথমবারের মতো ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের প্রচলন শুরু করে তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। তখন বুয়েটের কাছে ১২ হাজার টাকায় মেশিনটি তৈরি করে নিয়েছিল ইসি।

২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে ত্রুটি ধরা পড়লে সেই মেশিন বাতিল করে দেয় ইসি। এরপর ২ লাখ টাকা দামের উন্নত মেশিন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাজ থেকে তৈরি করে নিয়ে বর্তমানে ব্যবহার করছে ইসি। গত পাঁচ বছরে কমিশনপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজেকে ‘শতভাগ সফল নয়’ দাবি করলেও আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না বলে জানান নূরুল হুদা। ইসির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের করা অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ ছিল মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন আইন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে আসবে কি না, এমন প্রশ্নে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, সার্চ কমিটি ব্যবস্থা ভালো, তবে আইন হওয়া সবচেয়ে বেশি ভালো। আরএফইডি সভাপতি সোমা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেল।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris