বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

সম্মেলনে ডিসিদের গুরুত্বপুর্ণ নির্দেশ সরকারের

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) নতুন ধরন ওমিক্রন প্রতিরোধসহ সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের পঞ্চম অধিবেশনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। অধিবেশন শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। সিনিয়র সচিব বলেন, ওমিক্রন এসেছে। খুব বেশি ছড়াচ্ছে। ডিসিরা আগে যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, আগের মতো এখনো সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা পর্যায়ে যাতে সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আলী আজম বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য হাসপাতাল করতে তিনটি বিভাগ থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। বিভাগীয় পর্যায়ে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমরা এটি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি, এর কার্যক্রম চলমান আছে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ইউএন মিশনের বিষয়টি নির্ভর করে যে দেশে ইউএন মিশন যাবে এবং সেখানে ইউএন-এর পক্ষ থেকে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। যেসব দেশের লোকজন ইউএন মিশনে বেশি কাজ করেন, সেসব দেশের লোকজন এই সুযোগ-সুবিধাগুলো পান। যাতে করে আমরা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পেতে পারি সেজন্য আমাদের যে স্থায়ী প্রতিনিধি আছেন তার কাছে এবং আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আলী আজম আরও বলেন, জেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা উন্নয়ন শাখা গঠনে আইএমইডি (বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের যেহেতু জেলা পর্যায়ে অফিস নেই, তাদের পক্ষে ডিসিরা যাতে এই কার্যক্রম মনিটর করেন, সেজন্য একটি শাখা গঠন করার জন্য। শাখা গঠন করতে হলে জনবল লাগবে, একটি পদ্ধতিও আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে এটি করতে হবে। স্বল্প সময়ে গঠন করতে চাইলে বর্তমান জনবল কাঠামো দিয়েই একটি শাখা গঠনের জন্য ডিসিদের অনুরোধ করেছি।

পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি ফাইল ঝুলে আছে। এ বিষয়ে সচিব বলেন, হয়ত পেন্ডিং আছে, পর্যালোচনা করে দেখবো। আইএমইডি থেকে প্রস্তাব আছে, যতদিন পর্যন্ত তাদের জনবল না থাকে ততদিন পর্যন্ত ডিসিদের মাধ্যমে আপাতত মনিটরিং কার্যক্রম করার জন্য। সেজন্য সেখানে যে জনবল আছে তাদের নিয়ে একটি শাখা গঠনের জন্য প্রস্তাব করেছি। তৃতীয় শ্রেণির সব ধরনের পদে নিয়োগের জন্য সিলেকশন বোর্ড গঠনে ডিসিদের প্রস্তাবের বিষয়ে সচিব বলেন, তৃতীয় শ্রেণির সব ধরনের পদে নিয়োগের জন্য সিলেকশন বোর্ড গঠন করা আছে। কোনো বিভাগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নিয়োগ ছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণির যেসব নিয়োগ হবে, সেখানে বিভাগীয় সিলেকশন বোর্ড করবে।

এদিকে বনভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ এবং অবৈধ ইটভাটা বন্ধের উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। অধিবেশন শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ কার্য অধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ। বনভূমিকে রক্ষা করা, পরিবেশ সুরক্ষা করা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে জেলা প্রশাসকদের অনেক সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। সেই বিষয়ে আমরা ওনাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য টিলা কাটা, পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন- এগুলোকে বন্ধ করার জন্য ওঁরা (ডিসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। বনভূমি যাতে কোনো অবৈধ দখলদার দখল করতে না পারে এবং অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার বিষয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। প্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের কথাও তাদের বলেছি। সবক্ষেত্রে ডিসিদের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।

তাই আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছি। বনভূমি রক্ষায় জেলা প্রশাসকদের কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ শতাংশ বনভূমি গড়ে তোলা। এসডিজি অর্জনের জন্য ১৬ শতাংশ আচ্ছাদিত বন আমাদের দেখাতে হবে। ১৬ শতাংশ বনায়নের জন্য আমরা ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছি। বর্তমানে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ বন রয়েছে। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে আমরা তো ২২ শতাংশের ওপরেই আছি। তিনি আরও বলেন, দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারে আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ওনাদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছি।

কোন জায়গায়, কোন এলাকায়, কোন মৌজায় কতটুকু বনভূমি বেদখল আছে, সেগুলো উদ্ধারের জন্য ডিসিদের সহযোগিতা আমরা আগেই চেয়েছি। তালিকা ওনাদের কাছে আছে, প্রত্যেক জেলায় আমরা পৌঁছে দিয়েছি। তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন। প্রভাবশালীরা অবৈধ ইটভাটার মালিক হাওয়ায় অনেক সময় জেলা প্রশাসকরা সেগুলো উচ্ছেদ করতে বাধার সম্মুখীন হন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, আমরা ইটের পরিবর্তে ব্লক প্রস্তুত করার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছি। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি স্থাপনায় শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

আমরা যখন শতভাগ ব্লকে যাবো তখন এমনিতেই ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে গিয়ে ডিসিদের কোনো সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি না। পুলিশ প্রশাসন তাদের সঙ্গে থাকবে। ফলে কোনো সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি না।
এদিকে রমজানে সরকার নির্ধারিত দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখতে কঠোরভাবে তদারকির জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়নে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা জানান। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিসিদের বলেছি সামনে রমজান মাস আসছে, কিছুকিছু জিনিসের দাম আমরা ঠিক করে দেই।

সেগুলো কঠোরভাবে তদারকি করতে। সে সময় যেন তারা খুব শক্ত ভূমিকায় থাকেন, আইনগত ব্যবস্থা যেন নেন। কোরবানির সময় চামড়া কেনাবেচার বিষয়টি যেন তদারকি করেন। কেউ যাতে দাম থেকে বঞ্চিত না হন। ডিসিদের ওপর আমাদের অনেকখানি নির্ভরতা আছে। জিনিসপত্র যখন মফস্বল থেকে আসে, চাঁদাবাজিতে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, দাম যাতে না বাড়ে, মধ্যস্বত্বভোগী যাতে কমিয়ে আনা যায়, কৃষক যাতে ন্যায্য দাম পায়- এসব ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। টিপু মুনশি বলেন, প্রতি বছর ২০ লাখ টন ভোজ্যতেল দরকার হয়। দেশে দুই লাখ টন হয়। বাইরে থেকে তেল আনতে হয় বলে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বাড়ে তখন দেশেও এর প্রভাব পড়ে।

এখন তেলের কন্টেইনারের দাম যেটা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ছিল সেটার দাম ৮-১০ হাজার হয়েছে। এর ফলে দামের ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে দেড়-দুই মাস পর পর বসে দাম অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। এটা না করলে সামনে রমজান মাসে তারা তো এলসি ওপেন করবে না, সেটা আরও ভয়াবহ হবে। এজন্য তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, আগামী মাসের ৬/৭ তারিখে বসে আন্তর্জাতিক বাজার এবং এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে দাম নির্ধারণ করবো। এ বিষয়ে আজ (গতকাল বুধবার) আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তেল, ডাল, চিনি আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের উৎপাদন এবার ভালো হওয়ার কারণে এবং ভারত থেকে সরবরাহ হচ্ছে বলে দাম রিজনেবল রাখতে পেরেছি। তেলের দামের বিষয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, যদি ব্যবসায়ী দেখে লস হবে, তখন কি সরকার তাকে ফোর্স করতে পারে? এজন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। আমাদের দেখতে হবে তারা যাতে বেশি লাভ করতে না পারে। লস দিয়ে তারা তো আমদানি করবে না।

এদিকে সার চোরাচালান যাতে না হয় এবং ডিলারদের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে নিতে না পারে তা মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এ কথা জানান। তিনি বলেন, সার ডিলাররা মজুত করেছিল। আমরা তাদের নিয়ে মিটিং করি। দেশে যে সার উৎপন্ন হয় তা যথেষ্ট নয়, এজন্য সার আমদানি করতে হয়। যে টার্গেট আছে ফুলফিল হয়েছে। এখন বাফার স্টকও আছে। শর্টেজের কোনো সম্ভাবনা নেই। সারে সরকার ভর্তুকি দেয়। মন্ত্রী বলেন, চোরাচালান যাতে না হয় এবং ডিলারদের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে নিতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ডিসিরা মনিটরিং করবেন।

মজুত ঠিক আছে কিনা এবং সঠিকভাবে তা বিতরণ করছে কিনা ডিসিরা তা দেখবেন। যেসব ডিলার ফলস কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বিষয়টি দেখবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নিয়ে আমরা বলেছি, যেসব প্লট অনেকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রেখে দিয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে যোগ্য ব্যক্তিদের দেওয়া হবে। প্রত্যেকটাকে উৎপাদনমুখী করার জন্য কাজ চলছে। যেগুলো অনেক দিন ধরে পড়েছিল সেগুলোকে নতুন করে করা হচ্ছে। নতুন কিছু বিসিকও করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris