বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে অনিয়ম ঠেকাতে অর্ধশতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপন

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আশেপাশে গড়ে উঠা ক্লিনিকের দালালরা। যেকোন ভাবে ভুল বুঝিয়ে অপারেশন, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা করাতে ক্লিনিকে নিয়ে যেতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয় দালালরা। পরে ক্লিনিকে নেয়ার পর ইচ্ছেমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয়। এতে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয় প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরকারি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা।

এমনকি হাসপাতালের ভেতরে প্রকাশ্যে তাদের এই কৌশলী প্রতারণার শিকার হতে হয় রোগীদের। আরও অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের সরকারি ওষুধ চুরিসহ একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে বারবার ওষুধ নেয়ার। তবে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় কেন ব্যবস্থা নিতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এখন থেকে হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকাংশেই কমবে বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে ৫৩টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা।

পুরো হাসপাতালের ভেতর ও বাইরের নিরাপত্তাব্যবস্থা করতেই নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। ৮ তলা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের নতুন ভবনে ৩১টি ও পুরাতন ভবনে রয়েছে ২২টি সিসি ক্যামেরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আগে থেকেই পুরাতন ভবনে ২২টি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে নতুন ভবনে আরও ৩১টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালের বাইরের চারদিক, জরুরি বিভাগ, বর্হিবিভাগ, ফার্মেসী, করিডোর, অপারেশন থিয়েটারসহ পুরো হাসপাতাল এখন ক্যামেরার আওতায়। হাসপাতালে বিভিন্ন অপরাধীদের শনাক্ত করাসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়বে সার্কিট ক্যামেরায়।

সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হায়াতমোড় গ্রামের কলেজছাত্র নুরুল ইসলাম বলেন, কয়েকমাস আগে নানা অসুস্থ হলে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। এসে দালাল এক মহিলার নানারকম প্রচারণায় পড়ে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়। এমনকি মোটা অঙ্কের মতো টাকা লাগে। অথচ সেই মহিলা যাওয়ার আগে বলেছিল অল্প খরচেই হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, পরে জানলাম আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজিসহ যেসব পরীক্ষা করিয়েছিলাম, সেগুলো কম খরচে সরকারি হাসপাতালেই রয়েছে।

তার দাবি, এভাবেই হয়রানির শিকার হয় চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। বর্হিবিভাগের সামনে কয়েকদিক থেকে ক্যামেরা স্থাপনের ফলে এমন হয়রানি কমবে এবং অভিযোগ করলে তাদেরকে খুঁজে বের করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। স্থানীয় একটি এনজিও-তে চাকুরি করেন আফসানা খাতুন। এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। আফসানা খাতুন জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিজে দেখেছি এক মহিলাকে দুইবার ওষুধ নিতে। পরে হাসপাতালের এক স্টাফ সেই মহিলাকে ধরে ফেলেছিল।

সিসি ক্যামেরা থাকলে এসব বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক স্টাফ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের। অবস্থা এমন যে, মাসের প্রথম ২০ দিনেই শেষ হয়ে যায় এই ওষুধ। এর অন্যতম প্রধান কারন ওষুধ চুরি ও একই ব্যক্তির বারবার ওষুধ নিয়ে যাওয়া। তবে হাসপাতালের কে বা কারা ওষুধ চুরি করে সেবিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব জানান, হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের মোবাইল, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়।

অপরাধী শনাক্তে ও চুরি ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সিসি ক্যামেরাগুলো। কারন এতে অপরাধ করে কোনভাবেই পার পাবেনা অপরাধীরা। হাসপাতালের সাবেক এক কর্মকর্তা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, একটি বড় অপরাধ করে একজন আসামী। পরে পুলিশকে সে জানায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এমনকি প্রমাণ হিসেবে অপরাধী হাসপাতালের পুরাতন ভবনের একটি ওয়ার্ডে ভর্তির কাগজপত্র দেখায়৷ হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়ে সে হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। এমন ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয় হাসপাতালে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।

সেখানে দেখা যায়, ছাড়পত্র না নিয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করে অপরাধ করার পর পুনরায় হাসপাতালের বেডে আসে সেই অপরাধী। হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোশাররফ হোসেন জানান, আমার কাজের ক্ষেত্র এক্স-রে ও ইসিজি বিভাগের সামনেও কয়েকদিন আগে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গার নিরাপত্তা বাড়বে। সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। এখন বারবার আর কেউ ওষুধ নিতে পারবে না। এমনকি কমবে দালালদের দৌরাত্ম। কাজের স্বচ্ছতা বাড়াতে নিজ কর্মক্ষেত্র এক্স-রে ও ইসিজি রুমের মধ্যেও সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের দাবি এই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোসা. নুরুন্নাহার নাসু বলেন, পুরো হাসপাতাল ভবনে ক্যামেরা স্থাপনের ফলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাড়বে। এমনকি নানা অপরাধ ধরা পড়বে ক্যামেরায়। মাঝেমধ্যে এখানে রোগী ও তাদের স্বজনদের মোবাইল, টাকাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হারিয়ে যায়। তা উদ্ধার ও অপরাধী শনাক্তে ভূমিকা রাখবে সিসি ক্যামেরা। তিনি আরও বলেন, জেলা হাসপাতালে করোনার টিকা চালু হওয়ার পর মানুষের মাঝে বর্হিবিভাগ থেকে ওষুধ নেয়ার প্রবনতা বেড়েছে।

কারন টিকা দিতে এসে অনেকেই ভাবছেন, এসেছি তখন কিছু ওষুধও নিয়ে যায়। একারনে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন অনেক ভিড় হচ্ছে। বেশি ভিড়ের কারনে প্রতিদিনই একটু ঠেলাঠেলি বা ঝামেলা হয়। তবে আমার কাছে ওষুধ চুরির কোন তথ্য জানা নাই। উল্লেখ্য, নতুন ভবনের ৩১টি ক্যামেরা জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও পুরাতন ভবনের ২২টি ক্যামেরা আবাসিক মেডিকেল অফিসার-আরএমও’র কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris