শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোমস্তাপুরে বোরো চাষে ব্যস্ত কৃষক

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২

গোমস্তাপুর সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষকরা কুয়াশামাখা দিনে বোরো আবাদ চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা সম্প্রতি কয়েক বছর থেকে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় এ মৌসুমে তাদের মাঝে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ধানের চারা পরিচর্যা ও জমি প্রস্তুত করতে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে উপজেলার কৃষান-কৃষাণীরা। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও কোথাও গভীর নলকুপ থেকে চলছে পানিসেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের কাজ, গরু-মহিষ ও মানুষের দ্বারা মই দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ।

আবার বোরো ধান রোপনের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা।। শরীরে রয়েছে হালকা শীতের পোষাক, মাথায় গরম কাপড়। কৃষান-কৃষাণীরা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। কেউবা জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন, কেউ জমির আইলে কোদাল মাড়ছে, কেউ জৈব সার দিতে ব্যস্ত, আবার কেউ সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ কিংবা পাম্পের বা শ্যালো মেশিনের জন্য ঘর তৈরি করছেন। আবার অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন, কেউ আবার বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে তা রোপণ করছেন। গত আমন মৌসুমে ধানের ভালো ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা এবার বোরো আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন।

বর্তমানের ন্যায় শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় ১৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবার ৮৭০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা বেশী ধরা হয়েছে। তার মধ্যে উফসী জাতের বোরো ধান ১৪ হাজার ২’শ ২০ হেক্টর , হাইব্রিড জাতের ধান ১ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ১’শ ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপন অর্জিত হয়েছে। উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের বংপুর গ্রামের চাষি কলিমুদ্দিন বলেন, গত বছর আমন চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছি।

এবারও সে আশায় ৪ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ শুরু করেছি। বোরো ধান রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। দুইদিনের মধ্যে জমি প্রস্তুত হলে ধান রোপণ করে ফেলবো। গোমস্তাপুর ইউনিয়নের নয়াদিয়াড়ী গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, গত আমন মৌসুমে ব্রি-জাতের ব্রি -৮১, জিরাশাইল ধানের ফলন ও বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে আবাদ করতে আমরা বেশি আগ্রহী। আমার জমি থেকে সরিষা তুলেছি। কয়েকদিনের মধ্যে জমিতে বোরো ধান রোপন করবো। শ্রমিক লীলাবতি জানান, করোনা মহামারীর কারনে অনেক বিপদগ্রস্থ হয়ে আছি। বাইরে কাজে যেতে পারিনি।

এলাকায় তেমন কোন কাজ না থাকায়, পরিবারকে নিয়ে বেশ অভাব অনটনের মধ্যে পড়ে আছি। তাই বোরো মৌসুমে সকালে কুয়াশা ও ঠান্ডার পরিমাণ বেশি হলেও বোরো ধান লাগাতে একটু কষ্ট হচ্ছে। আমরা ধান রোপন করে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি পায়। গত বোরো মৌসুমে ৫০০০ হাজার টাকা আয় করেছিলাম। এবার একটু বেশী করবো বলে আশা করছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাকিব জানান, বোরো মৌসুমে এবার বীজ তলায় তেমন ক্ষতি লক্ষ্য করা যায় নি। বীজতলার চারার ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য বীজতলার উপর সকাল সন্ধ্যায় পলিথিন দিয়ে রাখা, দড়ি দিয়ে শিশির ভাঙ্গা,

বীজতলা থেকে বীজ রোপনের পূর্বে বীজতলায় পানি রাখা, রোপনের সময় লাইন করে বোরো ধান রোপন করা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক পরামর্শ সাধারণ কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সীমা কর্মকার জানান, জমিতে লাইন ও লোগো করে ধান রোপন করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ধানের চারা একটু বড় হলে জমিতে দশ হাত অন্তর লাঠি পুতে রাখার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। এতে করে পোকাড় আক্রমন থেকে ধানের চারা রক্ষা পাবে। কৃষকদের মাঝে যথেষ্ট পরিমানে বীজ ও সার প্রনোদনা প্রদান করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris