শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপুরে এমপি’র বিদ্রোহী সমর্থনে তৃণমূলে ক্ষোভ

Paris
Update : রবিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে নৌকা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে সক্ষতার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগ লিখিত অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামীগ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলার সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন গুলোর নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

ম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া দুর্গাপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহনে মদদ দেওয়া এবং নির্বাচনে অংশগ্রহনের পরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে সক্ষতা’র অভিযোগ তুলেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এবিষয়ে তদন্ত করে সক্ষতার প্রমান মিললে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেছেন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

দুর্গাপুর উপজেলার তৃনমূল থেকে ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান নৌকা’র বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে দ্রুত সাংগঠনিক সভা ডেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। চতুর্থধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজুল ইসলাম।

দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম নৌকার প্রার্থী আহসান হাবিবকে পরাজিত করে তার নির্বাচন পরিচালনাকারী উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু’র নেতৃত্বে নৌকাকে হারাতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে এমপি মনসুর রহমানের রাজশাহীস্থ বাসভবনে গিয়ে এমপি মহোদয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে নৌকাকে পরাজিত করার বিজয়ী আনন্দ বিনিময় করেন এবং এমপি মহোদয়ের আর্শিবাদ নেন।

মূহুর্তের মধ্যে এমপি’র সাথে বিজয়ী আনন্দের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দুর্গাপুর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। আরো জানা যায়, চতুর্থধাপে একই সাথে অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলার আরো ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে পানানগর, ঝালুকা ইউনিয়নে তার ব্যক্তি রাজনীতিতে বিশ্বাসী নেতারা মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় নৌকার বিজয় ঠেকিয়ে ব্যক্তি রাজনীতির বিজয় ঘটাতে পানানগর ইউনিয়নে আদম আলী,

ঝালুকা ইউনিয়নে তার ব্যাক্তি রাজনৈতিক উপদেষ্টা মোজাহার আলীকে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ইউনিয়ন গুলো এমপি মনসুর রহমানের পছন্দের প্রার্থীরা মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের নৌকার বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহনে সহযোগীতা করার সক্ষ্যতার অভিযোগ প্রমানিত হলে এমপি মনসুরের বিরুদ্ধে দলীয় কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন পানানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি রমজান আলী ও ঝালুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর আলী।

ঝালুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিজয় ঠেকাতে পানানগর ইউনিয়নে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত নেতা আদম আলী ও ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত নেতা মোজাহার আলীকে সঙ্গে নিয়ে ঝালুকা ইউনিয়নের আমগাছী সাহারবানু উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তী সূবর্নজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান।

এমপি মহোদয় সাথে এসে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনাকারী উপদেষ্টা দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু, ঝালুকা ইউনিয়নে নৌকা বিরোধী বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপদেষ্টা কবিরুল ইসলাম আনিস, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি এমরান আলী সহ ইউপি নির্বাচনে নৌকা’র বিপক্ষে সরাসরি অংশ নেয়া অনেক নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে এমপি মহোদয়ের সাথে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আহসান হাবিব বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী এমপি’র সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় ও আনন্দ উৎসব করছে এর থেকে আর কি প্রমান লাগবে যে এমপি মনসুর সাহেব নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করেননি। এমপি সাহেবের এমন আচরনের ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নৌকার বিপক্ষে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে এমপি মনসুরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছিলো বলেও জানান তিনি।

দুর্গাপুর-পুঠিয়া আসনের সংসদ সদস্য’র বিরুদ্ধে আনা এসকল অভিযোগের সঠিক তদন্তের দাবী করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নৌকার বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে এমপি ডা. মনসুর রহমানের সক্ষতার প্রমান পাওয়া গেলে দলীয় কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারনী নেতাদের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা ।

তিনি আরো বলেন, দুর্গাপুর উপজেলা ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদক সহ নেতৃবৃন্দের কাছে দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমপি মহোদয়ের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মদদ দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি করা হোক। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে এমপি মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া দুর্গাপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীদের গোপনে মদদ ও সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে দুইটি অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে।

কয়েকদিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এমপি সভা সমাবেশ বা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে যাওয়া চলাফেরা সম্পূর্ন দলীয় সাংগঠনিক নিয়ম পরিপন্থি বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর কোন সত্যতা নেই। আমার রাজনৈতিক জীবনকে ধ্বংস করার জন্য আমার দলীয় লোকজন ও কুচক্রিমহল অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। ইউপি নির্বাচনের সময় আমি নৌকা প্রতীকের পক্ষে সরাসরি কাজ করেছি। ‘চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে বিজয়ের পর বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার উপদেষ্টারা আপনার রাজশাহীস্থ বাসাতে এসে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে, এমন অভিযোগের সত্যতা এমপি মনসুর সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি আরো একটি প্রশ্নের প্রতুত্তরে বলেন, কোন অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলে আমার পেছনে অন্যান্য কারা বসে আছেন সেটি দেখার বা বোঝার কোন উপায় থাকেনা।

ডা. মনসুর রহমান আরো বলেন, আমি কখনো নৌকার বাইরে যায়নি। নৌকার প্রার্থীদের সাথেই কাজ করেছি। জননেত্রী আ’লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু’ স্থানীয় দলীয় কিছু নেতাদের কারণে ভুল তথ্য উপস্থাপন করায় যোগ্য ব্যক্তি নৌকার মনোনয়ন পায়নি। আমি নৌকার বিরুদ্ধে ছিলাম এমন অভিযোগ সত্য নয়। কেউ এমন অভিযোগ করলে আমি সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করবো।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার জানান, শুধু রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন নয়’ রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কিছু কিছু জায়গায় দলের অনেকে নৌকার বিরোধিতা করেছে আমরা সেই অভিযোগ পেয়েছি। যারা বিরোধিতা করেছে তাদের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে কেন্দ্রে জানানো হবে। কেন্দ্র তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া দুর্গাপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীদের গোপনে মদদ ও সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে দুইটি অভিযোগ পেয়েছি।

বিষয়টি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এমপি সভা সমাবেশ বা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে যাওয়া চলাফেরা সম্পূর্ন দলীয় সাংগঠনিক নিয়ম পরিপন্থি বলেও জানান তিনি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris