শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা বিদ্রোহী প্রার্থী ছেলে পর্নোগ্রাফি মামলার আসামী বেলপুকুরের বদি আ’লীগ থেকে বহিস্কার

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান বদিকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। গতকাল সোমবার এ সংক্রান্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক সাক্ষরিত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ ও জেলা কমিটির পরামর্শক্রমে দলীয় মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় গঠনতন্ত্রের ৪৭ এর ১১ ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সকল পদ ও সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হইল।

বেলপুকুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান বদি গত নির্বাচনে দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবার এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম। আব্দুল মালেক বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল থেকে বদিউজ্জামান বদিকে বহিস্কার করা হয়েছে। তার দুই ছেলে যদি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালায় তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার অন্তর্গত বেলপুকুর ইউনিয়ন এর আ’লীগ সভাপতি বদীউজ্জামান বদীসহ একই ইউনিয়নের থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমনুজ্জামান সুমন এর নানামুখি প্রশ্নবিদ্ধ ও বেআইনী কার্যক্রমকে ঘিরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে বইছে সমালোচনার ঝড়। সভাপতি বাবা বদীউজ্জমানা বদী আর তারই ছোট ছেলে সুমন এর অবৈধ, অনৈতিক আর অসামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারায় প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার বিষয়গুলো অমান্য করার মতো ঘটনাও।

এদিকে, গত ২৯-৯-২০২১ ইং তারিখে পুঠিয়া থানায় বদীউজ্জামান বোদীর ছোট ছেলে, বেলপুকুর ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারী সুমনুজ্জামান সুমনের নামে হয়েছে পর্ণোগ্রাফি আইনের ৮(১)/ ৮(২)/ ৮(৩) ধারায় একটি মামলা। যেটি এখন তদন্তাধিন আছে। ভুক্তভোগী ঐ নারীর দেয়া তথ্য ও পুঠিয়া থানায় করা অভিযোগ ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া এলাকার হিন্দু ধর্মের একটি মেয়ের সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নানা কৌশলে বছরের পর বছর ধরে একাধিকবার লিপ্ত হয়েছেন শারীরিক সম্পর্কে। অবশেষে ভুক্তভোগী মেয়েটি সুমনকে বিয়ের জন্য একাধিকবার অনুরোধ করলেও সুমন নানা টালবাহানায় সময়ক্ষেপন করতে থাকে বলে জানান ভুক্তভোগী ঐ নারী।

ঐ নারীর পক্ষ থেকে বিয়ের চাপ বৃদ্ধি পাওয়াতে সুমন পূর্বের ন্যায় আবারো ঐ নারীকে কৌশলে রাজশাহী নগরীতে অবস্থিত এক মহিলার বাড়িতে নিয়ে এসে আবারো মিথ্যে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে পুনরায় শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ঐ নারীর অজান্তে তাদের শারীরিক সম্পর্কের মুহুর্তটি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে সুমন। ওই নারীর ভাষ্যমতে, মোবাইল ফোনের স্ক্রীন বন্ধ রেখে চার্জ দেবার নাম করে সুমন আমাদের শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করেছিল। তাকে একাধিকবার আমি বলেছিলাম, সুমন তোমার মোবাইলে কি ভিডিও হচ্ছে। সে প্রতুত্তরে বলেছিল ‘না’, আমি মোবাইল চার্জ দিচ্ছি।

দেড় থেকে দুই বছর অতিক্রম হবার পরেও সুমন নানা টালবাহানায় যখন বিয়ে করছিল না তখন আবারো বিয়ের জন্য নানাভাবে অনুরোধ ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে ওই নারী। কোন উপায়ন্তর না দেখে ঐ নারী অবশেষে গত ২৪-০৩-২০২১ ইং তারিখে সুমনের নামে পুঠিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুমন ও তার বাবা বদীউজ্জামান বদী রাজনৈতিক নেতা ও ভাড়া করা বহিরাগত ক্যাডারবাহীনি দিয়ে ওই নারীকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রাখে। যা এখন অবদি চলমান রয়েছে বলেও জানান ওই নারী। এতেও অভিযুক্ত সুমন ক্ষান্ত না হয়ে তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া শারীরিক সম্পর্কের ভিডিওটি গত ২৩-৯-২০২১ ইং তারিখ সন্ধ্যায় ওই নারীকে দেখায় এবং ঐ ভিডিওটি একটি পেনড্রাইভে আপলোড করে তার হাতে দিয়ে বলে,

“দুই লাখ টাকা না দিলে তোর এই নগ্ন ভিডিওটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দিব!” নিজের ও পরিবারের আত্মসম্মান রক্ষার জন্য এবং ভিডিওটি ডিলেট করে দেবার শর্তে নিজের কাছে থাকা কিছু অর্থ ও স্বর্নের গহণা সুমনকে দিতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগী মেয়েটি। কয়েক সপ্তাহ না যেতেই আবারো সুমন চাপ দেয় টাকা কিংবা সোনার অলঙ্কার দেবার জন্য। এবার টাকা ও সোনার অলঙ্কার দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরেরদিন ২৪-৯-২০২১ ইং তারিখে সেই অন্তরঙ্গ মূহুর্তের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়া হয়। যার কারণে সেদিন থেকে ওই নারীসহ তার পরিবার পড়েন সামাজিক চাপের মুখে। অপমান আর অপদস্তে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন তার পরিবার বলে জানান ভুক্তভোগী ঐ নারী। থানায় অভিযোগ ও এজাহার দায়েরের পর থেকে সার্বক্ষণিক সুমন ও তার বাবা বদীউজ্জামান বদী কর্তৃক ভুক্তভোগী ঐ নারীর উপর অব্যাহত রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পন্থায় নানা হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বলে জানান ওই মেয়ের পরিবার।

এদিকে, স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে থাকার পরেও অবৈধ পরোকীয়া প্রেম, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক, গোপনে ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত ভিডিওটি ভাইরাল করার মতো নানা অপরাধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বেলপুকুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা সুমনুজ্জামান সুমনের অপকর্ম। নিজেকে আইনের হাত থেকে কিছুটা রক্ষার জন্য তিনি উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের অগ্রীম জামিন নিয়ে মামলা তুলে নেবার জন্য ঐ নারীর উপর অনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, আগামী মাসের ১৩ তারিখে অগ্রীম জামিনের মেয়াদ শেষ হবে বলে জানা গেছে। এদিকে, অভিযুক্ত সুমন নিজেকে সমাজের হাত থেকে রক্ষার জন্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তৈরি করেছেন মিথ্যে একটি বিয়ের এফিডেভিট।

স্বাক্ষর নকল করে সনাতন ধর্মের নারীকে বানিয়েছেন ইসলাম ধর্মের! উল্লেখ্য, একশ টাকা মূল্যমানের পূর্বের ননজুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করে সেখানে এক লাখ টাকার কাবিননামায় বিয়ে করার একটি এফিডেভিট তৈরি করেছে অভিযুক্ত সুমন। যার ষ্ট্যাম্প নং-ক ল ৭৪৭৮৭৮৭ ও রেজিঃ নং- ০০০০০১৭০। কিন্তু, এই কাগজের কোন সত্যতা নেই বলে দাবি করেন ওই নারীর। সুমনের কাছে এফিডেভিট এর মূল কপি দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার ‘এমপি’ ডা. মনসুর রহমান সাহেবের (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) ‘পিএস’ শফিক ভাইয়ের কাছে এফিডেভিট এর মূল কপি আছে। পিএস এর কাছ থেকে এফিডেভিট এর মূল কপি আনতে বললে সুমন বলেন, আমি শুনেছি শফিক ভাই নাকি ডকুমেন্টের মূল কপিগুলো হারিয়ে ফেলেছেন!

বিষয়টি নিশ্চিত হবার জন্য এমপি সাহেবের পিএস শফিকের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করাতে বিষয়টি নিশ্চিত হবার জন্য অবশেষে এমপি ডা. মনসুর রহমানকে ফোন দেয়া হয়। রাজশাহী ৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পর্ণোগ্রাফী মামলায় অভিযুক্ত সুমনুজ্জামান সুমনের বিয়ে সংক্রান্ত কোন দলীল বা এফিডেভিট আমার কিংবা আমার ‘পিএস’ শফিকের কাছে নেই। যদি কেউ এমন কথা বলে থাকে তবে সে মিথ্যা বলেছে। তিনি আরো বলেন, অন্যকারো দলীল বা ডকুমেন্ট আমরা কেনো রাখবো। বিষয়টি আইনগতভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাই সেটি আইনগত ভাবেই এগোবে। এতে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

এদিকে, অভিযুক্ত সুমন দাবি করেন, তাদের দুজনার অন্তরঙ্গ মূহুর্তের সেই ভিডিওটা তিনি তার মোবাইল থেকে করেননি। সেটি ওই নারীর মোবাইল থেকে করা হয়েছে। কিন্তু, ওই নারী সুমনের এইসকল দাবি প্রত্যাক্ষান করে বলেন, সুমন নিজেই আমার অজান্তে আমাদের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ভিডিও ধারণ করেছে এবং আমার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে কাউকে দিয়ে ঐ গোপন ভিডিওটি সে ভাইরাল করেছে। দেশের আইনানুযায়ী আমি সুমনের বিচার চাই।

এদিকে, এই ধরনের নারীঘটিত কেলেঙ্কারি ও নোংরা কাজে শুধু সুমনই জড়িত নয়। বছর দুয়েক পূর্বে সুমনের মতো নারী ঘটিত কেলেঙ্কারী ও নোংরামি কাজ তার বাবা বেলপুকুর ইউনিয়নের আ’লীগ সভাপতি বদীউজ্জামান বদীও করেছিলেন। উভয়ের সেই পর্ণগ্রাফি ভিডিও দুটো সংগ্রহে আছে অনেকের কাছেই। বদীউজ্জামান বদী তার বেলপুকুরস্থ নিজের ডাউল মিলে এক মহিলার সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পরেছিলেন। কিন্তু, টাকা আর রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে বদী সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বাবা ছেলের বর্তমান ও অতীতের সেই অপকর্মের ঘটনাগুলো সমস্ত ইউনিয়ন জুড়ে তোলপারে রূপ নিয়েছে।

এবিষয়ে, রাজশাহী জেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রদুত্ত কুমার সরকার বলেন, বাবা বদীউজ্জামান বদী ও ছেলে সুমনুজ্জামান সুমন দুজনেই নারী কেলেঙ্কারীর মতো অপকর্মের সাথে জড়িত। এছাড়াও বদীউজ্জামান বদী এবারের ইউপি নির্বাচনে দলের গঠণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হওয়াতে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭-এর (১১) ধারা প্রত্যক্ষভাবে লঙ্ঘন করেছে। গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারায় প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেহ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হইলে দল হইতে সরাসরি বহিষ্কার হইবেন এবং যাহারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করিবেন, তাহারা তদন্তসাপেক্ষে মূল দল বা সহযোগী সংগঠন হইতে বহিষ্কৃত হইবেন।’

উল্লেখ যে, বদিউজ্জামান বদি এ ইউনিয়নে চারবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এই প্রবীন নেতার বড় ছেলে আসাদুজ্জামান মাসুদ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক। তার অপর ছেলে সুমনুজ্জামান সুমন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তার দুই ছেলে পিতার পক্ষে প্রতিদিনই প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris