শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাগমারার মহির উদ্দিন খাঁনের মিলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

মচমইল থেকে সংবাদদাতা : স্বীকৃতি না পাওয়া অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্বীকৃতির জন্য। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হলে মিলেনি আজও মুক্তিযোদ্ধা তলিকায় তাদের নাম। এমন একজন হলেন মহির উদ্দিন খাঁন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন তিনি। তাঁর বাড়ি উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের বালানগর গ্রামে। ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে যান তিনি। স্বাধীনাতা যুদ্ধে পাকসেনা, আল সামস, আল বদর রাজাকার এবং শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভাবে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করায় শহীদ হয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনাতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম মিলেনি আজও।

শহীদ পিতার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন পরিবারে বড় মেয়ে মমেনা ও ছেলে জয়নাল হক। গত সোমবার বাগমারা প্রেসক্লাবে এসে মমেনা বিবি তার পিতা নিহতের ঘটনায় মামলার নথি আর মুক্তিযুদ্ধো তালিকা অন্তর্ভূক্তির আবেদনের একগাদা কাগজপত্রাদি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় মমেনা বিবি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনাতা যুদ্ধে তার পিতা মহির উদ্দিন খাঁন নিহত হন। তখন তার বয়স ৬/৭ বছর আর তার একমাত্র ভাই জয়নালের বয়স ২/৩ বছর। অর্থনৈতিক দৈন্যতা ও অভিভাবকহীনতার আমার বুঝ হওয়ার আগেই মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কোন রকম ভাবে আমরা বেড়ে উঠেছি। নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি সংসারের অভাব অনটনে ছোট ভাইয়ের লেখা পড়াও হয়নি।

দ্বারে দ্বারে পিতা হত্যার বিচার ও পিতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করে কাজ অব্যাহত রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ অফিসে বাবার আত্মত্যাগের স্বীকৃতিটুকু পেতে একাধিক বার আবেদন করে কাজ হয়নি। দেশের জন্য বাবা শহীত হয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদের কোন সহায়তা মিলছে না। আমার কষ্ট সব সংকট কাটিয়ে বড় হলেও আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবার পরিচয় পাচ্ছি না। আমার বাবাকে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিঃ আদালতে ১লা জুন ২০০৯ সালে মামলা দায়ের করেছি। যার মামলা নং/৯ ধারা ০২/৩৬৪/২০১/৩৭৬/৩৪ দঃ বিঃ।

“আমি তো টাকা চাই না, আমার শহীদ পিতার পরিচয় চাই।” স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকার করে প্রত্যায়ন দিয়েছেন। কিন্তু শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আমার বাবার নাম আজও স্থান পায়নি। কথা গুলো আবেগ ও হতাশায় যখন বলছিলেন তখন মমেনা বিবির চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছিল। মমেনা তার মায়ের বরাদ দিয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধে অবস্থানরত এক দিন বাবা বাড়ি আসে। এ বিষয়টা একই গ্রামের পাক বাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সক্রিয় সদস্যরা জানতে পারে। তার পিতা ও বিমাতা নুরজাহান বেগম খুবই ধার্মিক ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবে তারা স্বাধীনতার পক্ষে লোক ছিলেন।

২১ আগষ্ট ১৯৭১ সাল ঘটনার তারিখে সন্ধ্যায় পিতা মহির উদ্দিন খাঁ ও বিমাতা নুরজাহান মাগরিবের নামজ আদায় করছিলেন। এ সময় বাড়ির দক্ষিনের দরজায় শত্রুবাহিনী ডাকাডাকি করতে থাকে। আমার নিজ মা জরিনা বেওয়া দরজা খুলে দিলে রাজাকার বাহিনী বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে আমার পিতাকে ধরে। আমার বিমাতা তাকে ছড়াতে চেষ্টা করলে তাকেও সঙ্গে নিয়ে গ্রামের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমার ওই মা নুরজাহান অপূর্ব সুন্দরী ছিল। রাজাকার বাহিনীরা আমার মাকে সারা রাত্রি জোর পূর্বক শারীরিক নির্যাতন করে। ওই রাতে মা ও বাবাকে হত্যা করে লাশ গুম করে। পরে অনেক খোঁজাখুজি করে তাদের লাশ পাওয়া যায়নি। মমেনা তার পিতা হত্যার বিচার ও পিতার মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য এখনো নিরাশ না হয়ে স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরা অব্যাহত রেখেছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris