শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিতর্কিত কমিটি নিয়ে গণপদত্যাগের হুমকি দিলেন রাজশাহী নগর বিএনপির নেতারা

Paris
Update : সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে গণপদত্যাগের হুমকি দিলেন রাজশাহী মহনগর বিএনপির নেতারা। গতকাল রবিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ হুমকি দেন মহানগর বিএনপি ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা। এসময় লিখিত বক্তব্যে যেসব অভিযোগ করা হয়-তা পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো ঃ অনির্বাচিত শাসক গোষ্ঠীর একতরফা শোষণ ও নির্যাতনে সাধারণ জনগণ যখন মুক্তির বার্তার জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন গুরুতর অসুস্থ ঠিক এই সময় আমাদেরকে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে নবগঠিত রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিতর্কিত কমিটির বিষয়ে গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে ধরতে হচ্ছে।

আমরা এখানে যারা উপস্থিত রয়েছি, সকলেই রাজশাহী মহানগর বিএনপিসহ মহানগর বিএনপি’র আওতাধীন সকল থানা ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ রাজশাহী মহানগরের সকল ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ এবং বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অসীম ত্যাগ স্বীকার করে, হাসিমুখে সকল নির্যাতন সহ্য করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আদর্শকে বুকে ধারণ করে দলীয় সকল কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করে আসছি, তারাই আজকে গত ৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইং হঠাৎ গঠিত হওয়া রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিতর্কিত আহবায়ক কমিটির তথাকথিত নেতৃবৃন্দের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে এসেছি। আমাদের দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যখন দিনদিন অবনতি হচ্ছে ঠিক তখনই রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র ৯ সদস্য বিশিষ্ট অচল কমিটি গঠিত হলো কর্মী বিচ্ছিন্ন, দীর্ঘদিন কর্মসূচি বিমুখ, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন কারী বিতর্কিত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যা হলো : ১. রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক হিসেবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যাডঃ এরশাদ আলী ইশা। তার বিগত ২২ বছর বিএনপি’র কোন কর্মসূচির সাথে কোনরুপ কোন সম্পর্ক নাই। ১/১১ পরবর্তীতে আওয়ামী দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে রাজশাহীতে শত শত নেতা কর্মীরা ডজন- ডজন মামলার আসামী হলেও রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র নবগঠিত আহ্বায়ক এর নামে কোন মামলা হয়নি কারণ তিনি রাজনীতি করতেন না।, ২০১৩ সালের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায়ের আন্দোলন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে হরতাল, অবরোধ কোন কর্মসূচিতেই ছিলেন না।

২০১৮ সালের বর্তমান অবৈধ সরকার কর্তৃক বিএনপির মাননীয় চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী রায়ে কারাবন্দী করা হলে তার মুক্তির দাবীতে বিএনপি কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে তাকো কখনই দেখা যায়নি। ১/১১ সরকারের সময় তথাকথিত সংস্কারবাদিদের দলে যুক্ত ছিল উক্ত বিতর্কিত কমেটির আহ্বায়ক এ্যাডঃ এরশাদ আলী ঈশা। এছাড়াও তিনি সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম রাজশাহী জেলার কাউন্সিলে দলীয় আইনজীবীরা তাকে বর্জন করেন। ফলে মাত্র ৩২টি ভোট পেয়ে তিনি সভাপতি পদে লজ্জাজনক পরাজয় বরন করেন। ১১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এ্যাডঃ মাইনুল হাসান পান্না। এই থেকে তার গ্রহণযোগ্যতা সহজেই অনুমেয়।

রাজশাহী মহানগর বিএনপি অধিনস্থ সাংগঠনিক ৩৫টি ওয়ার্ড বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের সাথে কোনরকম সম্পর্ক নাই অথচ তাঁকেই রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যা রাজশাহী মহানগরের সকল নেতা কর্মীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ২. সদ্য ঘোষিত রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির দুই নম্বর যুগ্ন আহবায়ক মোঃ দেলোয়ার হোসেন। রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সদস্য হিসেবে থাকা অবস্থায় তাকে মহানগর বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক পদে পদায়ন করা হয়েছে। যা এক নেতার এক পদ নীতির পরিপন্থী। আহবায়ক এর ন্যায় তার বিরুদ্ধে কোনো হামলা-মামলা নজির নেই ও দলীয় কর্মসূচিতে দুই যুগের অধিক সময় কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই।

৩. নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু বর্তমানে মহানগরের একটি ওয়ার্ডের বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন এবং তাকে সরাসরি মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে পদায়ন করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মাঝে এ ব্যাপারে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ও এরূপ পদায়ন দলীয় ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। ৪. নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন শিবলী বিগত দিনে দলীয় কোনো প্রকার কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সাবেক এক বিএনপি নেতার ভাই হওয়ার ‘’বিশেষ যোগ্যতায়’’ তাকে পদে আসীন করা হয়েছে। ৫. নবগঠিত কমিটির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন একজন আওয়ামী লীগের এজেন্ট।

বিগত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরাসরি তার নিজ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকার পক্ষে এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী, রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন এর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসহ সকল ধরনের কার্যকলাপ নিজস্ব দলবল সহকারে অংশ নেন। তাদেরই (আওয়ামীলীগ) আঁতাত ও যোগসাজশে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিএনপিতে এজেন্ট হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সে স্থানীয় ভাবে নিউমার্কেট, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাস টার্মিনাল, রেলভবনের চিহ্নিত চাঁদাবাজ। তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে আইন-শঙ্খলা বাহিনীর কাছে কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তি। শিক্ষা মহানগরী রাজশাহীতে ঐতিহ্যবাহী বিএনপি’র মত বৃহৎ সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা তার নাই। জনশ্রুতি রয়েছে তাকে মাদক সেবনের কারণে একাধিকবার রিহাবে (মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র) যেতে হয়েছে।

রাজশাহীর প্রবীণ, নিস্ক্রিয় এক নেতা ও তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত, বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার যোগসাজশে রাজশাহী মহানগর বিএনপিকে ধ্বংস করতেই অচল, নিষ্ক্রিয় ও আওয়ামী লীগ এজেন্ট দ্বারা এই বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছে। গত ৫ বছর যাবত ঢাকায় বসে নানান ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকৃত ও পরীক্ষিত নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয়, কর্মীবিহীন, বিএনপির নেতৃত্ব তৈরি করার অপকৌশল হিসাবে এই রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। সরকার চায় বিএনপি দুর্বল হোক এবং আমাদের দলের ভিতরে কিছু ষড়যন্ত্রকারীর চাওয়া একই। যার ফলসরুপ এই বিতর্কিত কমেটি। এমতাবস্থায় আমরা রাজশাহী মহানগর সকল থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ উক্ত বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি।

আপানদের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান এবং বিএনপির মাননীয় মহাসচিব মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন করছি যে, দ্রুততম সময়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিতর্কিত কমেটি বাতিল করতে হবে। একই সাথে বিএনপির দুর্গ হিসাবে খ্যাত রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র ঐতিহ্য এবং দলীয় বৃহত্তর স্বার্থে নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগ এজেন্টের বাদ দিয়ে ত্যাগী জনপ্রিয় পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দ দিয়ে নতুন মহানগর কমিটি গঠনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি, অন্যথায় আমরা সকল থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ গণ-পদত্যাগ করতে বাধ্য হব।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris