বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বিশে^র প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর আগমী রোববার থেকে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে

ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, সতর্ক হচ্ছে বাংলাদেশ

Paris
Update : রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

এফএনএস : করোনা মহামারীর কবল থেকে বিশ্ব এখনো মুক্ত হতে পারেনি। সময়ে সময়ে রূপ পরিবর্তন করছে ভাইরাসটি। সর্বশেষ ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক ছড়ায় বিশ্বজুড়ে। তবে আক্রান্তদের অবস্থা গুরুতর না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম করোনার নতুন ধরন শনাক্ত ঘোষণার পর বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনই ভাইরাসটিকে অতিসংক্রামক বলতে নারাজ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচওর হিসাবে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৭টি দেশে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এটি দিন দিন বাড়ছে। তবে সংস্থাটির মহামারী তথ্য বলছে, এখনো ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বেশি। তাই ওমিক্রনের বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে এখনই উপসংহারে পৌঁছা সমীচীন হবে না। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের অনুমান, মাস খানেকের ভেতর ইউরোপে ওমিক্রন প্রভাবশালী ধরন হয়ে উঠতে পারে।
ডব্লিউএইচও বলছে, এখনো ডেল্টাই কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ভূমিকায় রয়েছে। তবে ওমিক্রনে আক্রান্ত এবং গুরুতর অসুস্থতার বিষয়ে আরো তথ্য প্রয়োজন।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বেশি ছড়ানোর নজির আছে, তবু বাড়তি সংক্রামক কিনা তা এখনো অজানা। গত দুই মাসের বৈশ্বিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কভিড-১৯ আক্রান্ত ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৫ জনের মধ্যে ডেল্টা আক্রান্ত ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৬ জন। ডেল্টার ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশের বিপরীতে ওমিক্রন মাত্র দশমিক ১ শতাংশ (৭১৩ জন)। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্ত শনাক্ত ৬২ হাজার ২১ জন, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১১১ শতাংশ বেশি।

দেশটিতে ৪ ডিসেম্বর থেকে আগের এক সপ্তাহে কভিড-১৯-এর কারণে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও ৮২ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহের ৫০২ জন থেকে বেড়ে ৯১২ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এটি এখনো নিশ্চিত নয় যে তারা সবাই ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী। আগের কভিড সংক্রমণের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। অনুমান করা হয় মোট জনসংখ্যার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ এরইমধ্যে কভিড আক্রান্ত হয়েছে।

দেশটিতে টিকা কার্যক্রম খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে। টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি মাত্র ৩৫ শতাংশের মতো। ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৮টি দেশে ২১২ জনের ওমিক্রন আক্রান্ত নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে তাদের লক্ষণ খুব সামান্য। কিন্তু ডব্লিউএইচও বলছে, যদি ওমিক্রনে তুলনামূলক অসুস্থতা সমান কিংবা ডেল্টার চেয়ে কমও হয়, তবু আরো মানুষ আক্রান্ত হলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। ওমিক্রন আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানা দরকার।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ক্রমেই বেড়ে চলেছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা।

জানা যায়, মুম্বাই বিমানবন্দরে যত সংখ্যক জঞ-চঈজ হচ্ছে, তার মধ্যে ৩৫ শতাংশই পজিটিভ। কর্ণাটকে আরও দুই ব্যক্তির শরীরেও সম্প্রতি ধরা পড়েছে ওমিক্রন। যদিও এখনও পর্যন্ত যতজনের দেহে এই ভাইরাসের হদিশ মিলেছে, তাঁদের সবারই হালকা উপসর্গ দেখা দিয়েছে। কারোর ক্ষেত্রেই রোগ লক্ষণ কিন্তু কোভিডের মত জটিল নয়। তবে এই ওমিক্রন অত্যন্ত সংক্রামক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যে কারণে সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেও বিলম্ব না করে দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে যাবতীয় সুরক্ষা বিধিও কিন্তু মেনে চলতে হবে।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত দুই রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে সিঙ্গাপুরে। তারা উভয়েই করোনা প্রতিরোধে বুস্টার ডোজ নিয়েছিলেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ওমক্রিনে শনাক্ত রোগীদের কথা জানানো হয়। তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। তাই সিঙ্গাপুরেও আরও শনাক্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সিঙ্গাপুরে মোট জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশ করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পন্ন করেছেন। যাদের বেশিরভাগই ফাইজার অথবা মডার্নার টিকা গ্রহিতা। সেইসঙ্গে দেশটির ২৯ শতাংশ মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে ফাইজার-বায়োনএটেক টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, ওমিক্রন মোকাবিলায় ফাইজারের বুস্টার ডোজ কাজ করবে। গত বুধবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বোরলা জানান, টিকার তৃতীয় ডোজ দিয়েই এই নতুন ধরনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। করোনা ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব করোনা টিকার প্রথম দুই ডোজ পুরোপুরি সম্পন্ন করে এবং তৃতীয় ডোজ নিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ওমিক্রন পরিস্থিতি খুব একটা খারাপ নয়। তবে এ নিয়ে শঙ্কায় আছে সরকার। ওমিক্রন প্রতিরোধে নানা ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওমিক্রন প্রতিরোধে শুধু আফ্রিকান দেশগুলো থেকে যারা আসবে, তাদেরই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করতে হবে বলে জানিয়েছে অধিদফতর। বাকি দেশগুলোর বিষয়ে অধিদফতর জানিয়েছে, আফ্রিকান দেশগুলোতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলেই তাদের জন্য বাড়তি বিধিনিষেধ। অন্য যেকোন দেশেও যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়, তাহলে তাদের বেলায়ও নেয়া হবে একই সিদ্ধান্ত।

জানা যায়, সংক্রমণের হার বাংলাদেশে এখনও দুই শতাংশের নিচে। তবে ওমিক্রন বাংলাদেশের দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই করোনা সংক্রমণ কম থাকায়ও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, আমরা যদি এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করতে পারি, পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সঠিক উপায়ে নাক-মুখ ঢেকে আমরা যদি মাস্ক পরি, একইসঙ্গে টিকা কার্যক্রমকে যদি আরও বেগবান করতে সহায়তা করি, তাহলে সেটি ওমিক্রন হোক বা অন্য কোন ভ্যারিয়েন্ট হোক সেটিকে যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।

এদিকে, দেশে কভিড সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ার আগেই নতুন করে কভিড ডেটিকেটেড এ হাসপাতালে শয্যা ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করছে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো। চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালসহ সরকারী বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সম্প্রতি পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ জন কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে নগরীর ৭৪ হাজার ১২৪ ও নগরীর ২৮ হাজার ৩২০ জন। এ ছাড়া কভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৩১ জন। এছাড়া, বিদেশ থেকে আসা যাত্রী বা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামে আবাসিক হোটেল প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ আবাসিক হোটেলগুলোতে বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris