শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাজশাহীতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাইমারি স্কুলে অ্যাসেম্বলি না করানোর নির্দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে : জাতিসংঘ রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত রাজশাহীতে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ধামুইরহাটে ভূয়া সিআইডি গ্রেফতার রাজশাহীতে বিভাগীয় পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত স্ত্রীকে কারাদণ্ড দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ইমরান খানের হুমকি ইরানের ইসফাহান কেন হামলার টার্গেট?

ওমিক্রন প্রতিরোধে তৎপর গোটা বিশ্ব, সতর্কতার অভাব বাংলাদেশে

Paris
Update : বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১

এফএনএস : নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওমিক্রনের দ্রুত ছড়ানোর সক্ষমতার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের মন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে দেরি হয়ে গেছে। এদিকে ভারতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা দুই অংকে পৌঁছেছে। রোববার কভিড-১৯-এ জুলাইয়ের পর একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে ভারতে।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশটির রয়েল কলেজ অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট ক্যাথেরিন হেন্ডারসন বলেছেন, শীতের শুরু হতে না হতেই হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে, যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি ওমিক্রন আক্রান্তের হার বেড়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন। এ অবস্থায় দেশটির হেলথ সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ আসন্ন ক্রিসমাসে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর আগে বুস্টার ডোজ টিকা নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে যখন কঠোর অবস্থানে রয়েছে অধিকাংশ দেশ। ডেল্টার চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে এমন আশঙ্কায় আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে যখন তারা তৎপর, তখন বাংলাদেশের প্রস্তুতি অনেকটাই নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ। অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ রোধে একগুচ্ছ নির্দেশনার বাইরে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপই দেখা যাচ্ছে না। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ হবেই, এটি অনেকটা নিশ্চিত। কিন্তু আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এটিকে বিলম্বিত করা যেতে পারে। একই সঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি দেরিতে শনাক্ত হলে সেই সময়ের মধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া সহজ হবে।

গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ধরনটি শনাক্ত হয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এটিকে ওমিক্রন নাম দেয়। একই সঙ্গে ধরনটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা দেয় তারা। ডেল্টার চেয়ে এটি ভয়াবহ হতে পারে এমন সতর্কবার্তাও দিয়েছে সংস্থাটি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দ্রুত অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার জেরে বাংলাদেশেও ধরনটি নিয়ে উদ্বেগ ও আলোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত সপ্তাহে ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে স্থল ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং জোরদারের পাশাপাশি বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দেশনার বাইরে দেশের মধ্যে অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো নয়। ডেল্টার মতো এটি দ্রুত জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লে সেটি মোকাবেলা বেশ কঠিন হবে। এজন্য দেশে ধরনটি প্রবেশ করলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া যেন রোধ করা যায়, সেজন্য আরো কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। বিশেষ করে ভারতে এরইমধ্যে এটি শনাক্ত হওয়ায় সীমান্তে আরো কঠোরতা আরোপ করা প্রয়োজন বলে মত তাদের।

ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, এক সপ্তাহের মধ্যে অতিসংক্রামক ওমিক্রন বিশ্বের ৪০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও যেকোনো সময় এটির উপস্থিতি শনাক্ত হতে পারে বলে মনে করছেন ভাইরাস ও রোগতত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক অতিমারীর এ সময়ে করোনার সংক্রমণ নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ রাখা যায়নি। তেমনি সব দেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ ছড়াবেই। তবে নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে সংক্রমণ বিলম্বিত করা যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হতে সময় পাওয়া যায়। ভারতে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় ঘাটতি রাখা যাবে না। প্রবেশপথগুলোতে কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি দেশের মধ্যে জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজধানীসহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জনসম্পৃক্ত কার্যক্রম নিতে হবে। ওমিক্রন ঠেকাতে সরকার গঠিত করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গত মাসের শেষে সরকারকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। এ অনুযায়ী সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও স্থানীয় পর্যায়ে আরো পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গত বছরও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে জনসাধারণের আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন তা আর দেখা যাচ্ছে না। করোনা ও টিকার বিষয়ে সরকার গঠিত কয়েকটি পরামর্শক কমিটি রয়েছে। তবে এসব কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবেলায় এখনই দেশের সীমান্ত বন্ধের পরিকল্পনা নেই। তবে ওমিক্রন মোকাবেলায় সারা দেশে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার দুপুরে ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্টে (বিআইএইচএম) নবনির্মিত ভবন পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। দেশ ভালো আছে, নিরাপদে আছে। এখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি। সীমান্ত এলাকার প্রতিটি বর্ডারে স্ক্রিনিং ও পরীক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ওমিক্রন মোকাবেলায় আমাদের যা যা প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব, তা এরইমধ্যে নেয়া হয়েছে। আমরা এর মধ্যেই ওমিক্রন মোকাবেলায় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। সেই সভা থেকে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাউথ আফ্রিকা ও ওমিক্রন আক্রান্ত অন্যান্য দেশ থেকে যেই আসবে, তাকে ৪৮ ঘণ্টা আগে কভিড-১৯ টেস্ট করে আসতে হবে এবং দেশে তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

সংক্রমিত দেশ থেকে বাংলাদেশীদের এখনই দেশে না ফিরতে অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যারা বিদেশে আছেন, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশে আছেন, এ মুহূর্তে দেশে না এলেই ভালো হয়। আপনারা আপনাদের পরিবার ও দেশকে নিরাপদে রাখতে চাইবেন। তাই যে যেখানে আছেন, সেখানেই নিরাপদে থাকুন। দেশে সব জেলায় করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি হলে যেন সংকট সৃষ্টি না হয়, সেজন্যে সব জেলা হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বেলজিয়ামের একটি চিড়িয়াখানায় দুই জলহস্তীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। চিড়িয়াখানাটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়, এন্টার্প চিড়িয়াখানায় ১৪ বছর বয়সী ইমানি ও ৪১ বছর বয়সী হারমিয়েনের কভিড-১৯ ধরা পড়ে। যদিও চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবু সতর্কতার জন্য জলহস্তী দুটিকে আলাদা রাখা হয়েছে। ধারণা হচ্ছে, প্রাণীদের মধ্যে করোনা শনাক্তের এটিই প্রথম নজির।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris