শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অর্ধেকেরই নিজস্ব হাসপাতাল নেই

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১

এফএনএস : দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অর্ধেকেরই নিজস্ব হাসপাতাল নেই। অথচ সরকারি প্রতিটি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে সব ধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা সংবলিত নিজস্ব একটি হাসপাতাল থাকার কথা। ওসব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের অধীনে জটিল ও বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবায় হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেয়া। বর্তমানে যেসব সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল নেই ওসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জেলা ও জেনারেল হাসপাতালগুলোয় প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে ওসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। ওসব মেডিকেল কলেজের মধ্যে ১৯টির নিজস্ব হাসপাতাল রয়েছে। তার মধ্যে পূর্ণরূপে ১৮টি চালু রয়েছে। সম্প্রতি পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালকে ৫শ শয্যায় উন্নীত করে স্থানীয় মেডিকেল কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনো তার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বাকি ১৮টির মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জেলা ও জেনারেল হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তার মধ্যে ৬টির জন্য বর্তমানে হাসপাতাল নির্মাণাধীন রয়েছে।

অন্য ১২টির কোনো কোনোটিতে এখনো ওই সংক্রান্ত কোনো প্রকল্প চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমানে যে ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল নির্মাণাধীন রয়েছে সেগুলোর মধ্যে মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের নির্মাণাধীন হাসপাতালের বহির্বিভাগ এরই মধ্যে চালু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কোনো রোগী ভর্তি করা যায়নি। হাসপাতাল নির্মাণাধীন রয়েছে এমন আরেকটি মেডিকেল কলেজ হলো সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ।

সূত্র জানায়, সরকার দেশে তিন পর্যায়ের হাসপাতালের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা পর্যায়ের ও তার চেয়ে ছোট পরিসরের হাসপাতালগুলোকে ধরা হয়। জেলা (১০০-২০০ শয্যাবিশিষ্ট) ও জেনারেল হাসপাতালগুলোকে (২৫০ শয্যাবিশিষ্ট) মাধ্যমিক পর্যায়ের হাসপাতাল ধরা হয়। আর কমপক্ষে ৫শ শয্যার হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট হাসপাতালগুলোকে বলা হয় তৃতীয় বা টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। কারণ সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষায়িত ও জটিল রোগের চিকিৎসা প্রধানত টারশিয়ারি পর্যায়ের বড় হাসপাতালগুলোয় হয়। ওসব হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে ছাত্রাবস্থায়ই বিশেষায়িত ও জটিল রোগের চিকিৎসা-সংক্রান্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকে। আর নিজস্ব হাসপাতালের অভাবে যেসব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জেলা ও জেনারেল হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নেয় তাদের ওই অভিজ্ঞতায় কিছুটা হলেও ঘাটতি থেকে যায়।

সূত্র আরো জানায়, দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য সরকারের প্রণয়নকৃত নীতিমালা থাকলেও সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে ওসব কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। তার মধ্যে বিএমডিসির নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি মেডিকেল কলেজের অবশ্যই নিজস্ব হাসপাতাল থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে কলেজের সঙ্গে একই জমিতে ভিন্ন ভবনে হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে।

তাছাড়া হাসপাতালের শয্যা সংখ্যাসহ কলেজে কোন বিভাগের কতজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী থাকবে তাও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা রয়েছে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকারি যেসব মেডিকেল কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল গড়ে তোলা যায়নি, বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়াই সেগুলোর শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক হচ্ছে। ফলে প্রশিক্ষণের ঘাটতির কারণে তারা সরকারি অন্য মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের সমান দক্ষতা নিয়ে চিকিৎসাসেবায় আসতে পারছে না।

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসা পেশা অন্যান্য পেশার মতো নয়। এর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ একই মানের হতে হবে। মানুষের সুস্থতার প্রশ্নে প্রয়োজনীয় সেবা একজন উপযুক্ত প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের কাছে পাওয়া যাবে। যেসব কলেজের হাসপাতাল নেই, সেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা জেলা বা জেনারেল হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। ওসব শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণ পরিপূর্ণতা পাচ্ছে না। কারণ জেলা বা জেনারেল হাসপাতালে খুবই সাধারণ চিকিৎসা হয়। দেশের চিকিৎসকদের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য রাখা যাবে না। দেশের প্রথম দিককার একটি কলেজ থেকে যে শিক্ষার্থী চিকিৎসক হয়ে বের হচ্ছে, তার সঙ্গে নতুন কলেজের চিকিৎসকের বড় রকমের পার্থক্য দেখা যায়।

মূলত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কারণে তা ঘটছে। আর সার্বিক চিকিৎসাসেবায়ই তার বিরূপ প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আরমান হোসেন জানান, একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার পর নির্দিষ্ট শর্তপূরণ সাপেক্ষে চিকিৎসকদের নিবন্ধন দেয়া হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য নিজস্ব হাসপাতাল না থাকলে তা সরকারের বিষয়। তা নিয়ে বিএমডিসি কিছু বলতে পারে না। তবে বিশেষায়িত না হলেও ওসব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্তত জেনারেল হাসপাতালে প্র্যাকটিস করে আসে।

নিজস্ব হাসপাতাল না থাকায় হাতে-কলমে শিক্ষার অপূর্ণতার বিষয়টি আপেক্ষিক বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন জানান, সব মেডিকেল কলেজে নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করে তৃতীয় বর্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল প্রাকটিসে যায়। যেসব কলেজের হাসপাতাল নেই, সেগুলোকে স্থানীয় জেনারেল হাসপাতালে যুক্ত করা হয়েছে। তার কোনোটিই ২৫০ শয্যার নিচে নয়। কোর্সে যতটুকু ক্লিনিক্যাল বিষয় রয়েছে, তা জেনারেল হাসপাতালে থাকে। তারপর যদি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অপূর্ণ বলা হয় তা আপেক্ষিক। কেননা তার শেষ নেই। যেসব কলেজের হাসপাতাল নেই, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটির জন্য প্রকল্প প্রস্তাব ইতিমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris