শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী ছোটবনগ্রাম আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের ধীরগতি!

Paris
Update : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

শাহানুর রহমান রানা : শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ শিক্ষার এই শ্লোগানটি সারাদেশে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি যেনো প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্থ হয়ে আবির্র্ভূত হচ্ছে শিক্ষা সেবার বিষয়টির ক্ষেত্রে। এমনই অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধীরগতির গোলক ধাধায় পতিত হয়ে শিক্ষা সেবার গতিকে থামিয়ে দিচ্ছে রাজশাহী নগরীর ১৯নং ওয়ার্ড অন্তর্গত ছোটবনগ্রাম মাধ্যমিক আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। এমন অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও স্থানীয়দের। বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে।

উক্ত ওয়ার্ডের মেয়েদের জন্য আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বিশাল আয়তনের জনবহুল ওয়ার্ডের ভরসা এই একটি মাত্র স্কুল। যার কারণে প্রথম থেকেই স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। করোনার পূর্বে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় পাঁচশ জন শিক্ষার্থী থাকলেও দীর্ঘ সময় দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রায় অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে, যেটা সত্যি অপ্রত্যাশিত বিষয় বলে মন্তব্য প্রধান শিক্ষক নাসিমা খাতুনের। তবে, এবার আবারো পূর্বের ন্যায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বর্তমানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭৩ জন আর শিক্ষক আছেন দশ জন। শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ফলে গত ০৭-১০-২০২১ ইং তারিখে বিদ্যালয়ের ভেতরে ছয় তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে পরবর্তী আঠারো মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও এখন অবদি একতলার কাজও পরিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার কারণে, স্কুলের পুরাতন ভবনের পাঁচটি কক্ষ নিয়ে চলছে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি প্রাত্যহিক ক্লাসের কার্যক্রম। পাঁচটি কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বসার স্থান ছাড়াও দশটি আলমিরা, কম্পিউটার, টেবিল চেয়ারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি, অন্য একটি কক্ষে পুরাতন ও নতুন আসবাবপত্র,

আরেকটি কক্ষ শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করার ফলে অবশিষ্ট দুটো কক্ষে চলছে কোনরকম প্রাত্যহিক শিক্ষা সেবা প্রদানের কার্যক্রম। যার কারণে, প্রতিনিয়তই ব্যহত হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা সেবার বিষয়টি। নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদার আর প্রকৌশলীদের ধীরগতির বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে পুরো স্কুল জুড়ে। এমন মন্তব্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা খাতুনসহ অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

এদিকে ধীরগতি কাজের গতি কিছুটা বৃদ্ধির জন্য গত ০২-১১-২০২১ ইং তারিখে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু তবুও কাজের গতি বৃদ্ধি পায়নি এখন অবদি। উক্ত নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব পাওয়া আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী উজ্জল কুমার রায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রথমতো করোনা মহামারির জন্য কাজের শুরুতেই আমরা একটা ধাক্কা খেয়েছি। পরবর্তীতে নির্মাণ উপকরণের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়াতে দাম কমার আশায় ঠিকাদার কিছুটা সময় ক্ষেপন করেছেন।

এছাড়াও উক্ত স্কুল ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে জমি ও ডিজাইন সংক্রান্ত একটু জটিলতা ছিল। উত্তর-পূর্ব কোণের পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে সরকারী নিয়মানুযায়ী ‘প্রটো টাইপ’ ডিজাইনের ভবন করাটা প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছিল। বিধায় ঢাকাতে গিয়ে ভবনটির নতুন করে ‘এল-প্যাটার্নের’ ডিজাইন করে নিয়ে আসতে সেখানেও অনেক সময় ক্ষেপন হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রথম তলার সাটারিং এর কাজ শুরু হয়েছে; কয়েকদিনের মধ্যেই ছাদ ঠালাই এর কাজও শুরু হবে। সমস্ত প্রতিকূলতাকে ওভারকাম করে যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারবো বলে আমরা আশা করছি।

তবে, নির্দিষ্ট সময়ের চাইতে সামান্য কিছু সময় বেশি লাগলেও সেটি আমাদের অদক্ষতা কিংবা ইচ্ছাকৃত কোন কারণ হিসেবে বিবেচনা করাটা ঠিক হবেনা। দেশের মহামারি, হঠাৎ করে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি আর নতুন করে ডিজাইন করার ফলেই অনাকাঙ্খিত ভাবে এই সময় ক্ষেপন হয়েছে বলেও দাবি প্রকৌশলী উজ্জলের। তিনি মানসম্পন্ন একটি ভবন উপহার দিবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসিমা খাতুন বলেন, আর কয়েকদিন পরেই নতুন বছরের ভর্তি মৌসুম শুরু হবে। ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবার পরে নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের কোথায় ক্লাস নেবো, কোথায় তাদেরকে বসতে দেবো? নতুন নির্মাণাধীন ভবনটির দেয়াল কিংবা ছাদের কোন কাজ এখনো শুরু হয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খুব বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকজন মিস্ত্রি আর লেবার মিলে সাটারিং এর কাজ করছে। এতো বড় ভবন নির্মাণ করতে মাত্র কয়েকজন সাটারিং মিস্ত্রির কাজ দেখে কাজের ধীরগতির বিষয়টি অনুমান করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। এছাড়াও কক্ষ আর স্থান স্বল্পতার জন্য পুরাতন স্কুল ভবনের বারান্দা ও উপরের একটি অব্যবহৃত কক্ষে শারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ক্লাসের বেঞ্চি, টেবিল চেয়ারসহ অন্যান্য ব্যবহৃত বস্তু।

এ বিষয়ে, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন বলেন, বৃহত্তর ও জনবহুল এই ওয়ার্ডটিতে মেয়েদের একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। যার কারণে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন বৃদ্ধির বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। সুনির্দিষ্ট সময় প্রায় অতিবাহিত হবার পথে ধাবিত হলেও বিদ্যালয়টির নতুন ছয়তলা ভবনের কাজের অগ্রগতির বিষয়টি সত্যি হতাশাজনক। শিক্ষার্থীদের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা করা। কারণ, সামনের মাস থেকেই যেহেতু নতুন বছরের ভর্তি প্রক্রিয়া আরম্ভ হতে যাচ্ছে তাই নতুন ভবনের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris