শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
পুঠিয়ায় দশ চাকার ট্রাকে গিলে খাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সড়ক! রাজশাহীসহ দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, বাড়তে পারে আরো তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৭ দিন বন্ধ তীব্র তাপদাহে রাজশাহীতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাইমারি স্কুলে অ্যাসেম্বলি না করানোর নির্দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে : জাতিসংঘ রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত রাজশাহীতে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ধামুইরহাটে ভূয়া সিআইডি গ্রেফতার

ইউপি নির্বাচন নিয়ে আ’লীগের তৃণমূলে ক্ষোভ বাড়ছে

Paris
Update : শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১

এফএনএস : আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেই জয়লাভ নিশ্চিত। তাই টানা এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা এই দলটির অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠ গোছানোর চেয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই বেশি মরিয়া। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই মরিয়া আচরণের সুযোগ নিচ্ছে দলটির তৃণমূলের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার রাস্তা করে দেওয়ার বিনিময়ে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এতে দলের যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়নবঞ্চিত হচ্ছেন। উপায় না পেয়ে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। এতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড তৃণমূলের মতামত ও বিভিন্ন জরিপের ওপর ভিত্তি করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। সেখানে মনোনয়ন বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের পুরনো ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার জোর আছে এমন নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে অনেক ইউপিতে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। ফলে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ৪২ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা পরাজিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার মূল অভিযোগ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে থাকে দলটির স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড। এ বোর্ডের কাছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকজন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা হয়। এর জন্য প্রথমে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ একটি বর্ধিত সভা ডেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি করে। এরপর এই তালিকায় ইউনিয়ন, থানা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষর যুক্ত করে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়। এখানে দৃশ্যত সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়নি আওয়ামী লীগ। কিন্তু সব অভিযোগ উঠছে এমপিদের বিরুদ্ধে।
দলীয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যরা তাঁর নির্বাচনী এলাকার সব ইউনিয়নে প্রার্থীদের বিষয়ে একটি সুপারিশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং মনোনয়ন বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের কাছে দিয়ে থাকেন। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের চাওয়ার প্রতিফলনই দেখা যায় বোর্ডের সিদ্ধান্তে। এ কারণে অভিযোগের তীরও এখন এমপিদের দিকে।

দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন হলেও এখন আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের ভোট দলীয়ভাবে না করার দাবি জোরালো হচ্ছে বলে জানা গেছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারাতে দলের ভেতরেই একটি অংশ উঠেপড়ে লেগেছে। এমন পরিস্থিতিতে দলের নীতিনির্ধারকেরা বিব্রত। কিন্তু কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হিমশিম অবস্থায় পড়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৩৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৪১টিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩১টি ইউনিয়নে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই ছিলেন না দলের প্রার্থীরা। যদিও বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এবার ইউপি নির্বাচনে নেই।

এরপরও দ্বিতীয় ধাপের ভোটের এমন ফল দলের নীতিনির্ধারকদের ভাবাচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ৬৪টি ইউপিতে বিএনপির নেতাদের চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়টিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবাক করেছে।
সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছিলেন ৮৯৭ জন। তৃতীয় ধাপে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৯ জন। প্রথম দুই ধাপে ভোটের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ৩২ জনের। নিহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাশিদুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল সারা দেশে বিদ্রোহী প্রার্থী চিহ্নিত করতে কাজ করছে। তাঁদের অনুমান হচ্ছে, পরবর্তী ধাপগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থী আরও বাড়বে।

দলীয় সূত্র বলছে, বিদ্রোহীদের পেছনে দলের স্থানীয় নেতাদের একটা অংশ আছেন। কোথাও কোথাও আছেন মন্ত্রী-সাংসদ। আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু একজন বিদ্রোহীর সঙ্গে পাঁচ-দশ হাজার মানুষ আছেন। সে ক্ষেত্রেও তাঁদেরও কি দল বাদ দেবে?

এদিকে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে দলীয় মনোনয়নে অর্থ লেনদেনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি লিখেছেন, ‘২০৬ ইউপিতে আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী দল নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হারবে কেন? অর্থ পরিষ্কারÑসেই বিদ্রোহী প্রার্থীর টাকার জোর ছিল না; কিন্তু তিনি ছিলেন এলাকায় জনপ্রিয়, তিনি কোনো নেতা-এমপির পকেটে যাননি। তিনি জনগণকে ভালোবেসে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করেছেন। তাই দল নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁরা জানুনÑএবার আওয়ামী লীগ হেরেছে আওয়ামী লীগের কাছে।

মনোনয়ন দেওয়ার সময় অনেক স্থানে বাণিজ্যের কাছে হার মেনেছে জনপ্রিয়তা। অন্যদিকে দিনশেষে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় মানুষটিই জয়ী হয়েছেনÑআওয়ামী লীগ তো হারেনি। মনোনয়ন বাণিজ্য পরাজিত হয়েছে। সবার কথা বলছি না, কিন্তু যেসব আতিপাতি ও মহানেতারা অর্থের কাছে নৌকাকে বিক্রি করেছেন, তাঁরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও বেঈমানি করেছেন। মনোনয়ন বাণিজ্য এভাবেই পরাজিত হোক। ধন্যবাদ তাঁদের যাঁরা আজীবন আওয়ামী লীগ করা ত্যাগী জনপ্রিয় প্রার্থীকে জয়ী করেছেন। আপনাদের দ্বারাই বন্ধ হবে মনোনয়ন বাণিজ্য।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে দলীয় প্রতীকে ইউপি ভোট হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৭ জনের দলীয় মনোনয়ন বোর্ড আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য উপজেলা, জেলা থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা তৃণমূল থেকে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানো হয়। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সেই তালিকা উপস্থাপন করা হয়।

এর বাইরে দলীয় সভাপতি তাঁর নিজস্ব সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করেন। এতে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার ক্রম সাজানো থাকে।
সূত্র জানায়, প্রতিটি পর্বেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের টাকা খরচ করতে হয়। প্রথমে তৃণমূলের তালিকায় নাম ওঠানো এবং জেলায় তা অটুট রাখার জন্য টাকা খরচ করতে হয়। কোন্দলের কারণে তৃণমূলের তালিকায় নাম না থাকলে পাল্টা কমিটির মাধ্যমে তালিকা পাঠানোর নজিরও আছে। এ ক্ষেত্রেও টাকা খরচ হয়। এর বাইরে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নিজের জনপ্রিয়তা দেখাতেও টাকা খরচ করেন কোনো কোনো প্রার্থী। মনোনয়ন বোর্ডের এক বা একাধিক সদস্যকেও নানাভাবে খুশি রাখতে হয়। মনোনয়ন পেতে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। একইভাবে মনোনয়নবঞ্চিতদেরও টাকা খরচ হয়।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris