বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইউপি নির্বাচন : দ্বিতীয় ধাপ শেষ তৃতীয় ধাপেও সহিংসতা হবে কী?

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১

এফএনএস : সহিংসতা, হত্যা, মারামারি, কাটাকাটি, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হল ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ। প্রথম ধাপের থেকে দ্বিতীয় ধাপে নৌকা মনোনীত প্রার্থীদের বিজয় এসেছে বেশ কম। প্রথম ধাপে নৌকা প্রতীকে লড়াই করা প্রার্থীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন শতকরা ৭৩ জন, কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে তা নেমে এসেছে শতকরা ৫৮ জনে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের প্রায় ৪২ শতাংশই হেরে গেছেন। নানা কারণে পরিস্থিতি অনুকূল থাকার পরও এই প্রতীকের প্রার্থীদের একটি বড় অংশের পরাজয় সরকারি দলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দল থেকে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়ার কারণেই এমন ফল হয়েছে। নৌকা প্রার্থীরা অবশ্য তাদের পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন। একই সঙ্গে এসব ইউপিতে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছেন পরাজিত প্রার্থীরা। সূত্র জানায়, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৩৯.৫৬ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে বিএনপি নেতারাও আছেন। বিএনপি দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও নেতাদের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছে। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হিসাব আলাদাভাবে জানা যায়নি। তবে এই সংখ্যা ৫০-এর ওপর বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিএনপি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের অনেকে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন। তৃতীয় ধাপের ইউপি ভোটে অংশ নিচ্ছেন দলটির প্রায় ৩৭৯ জন নেতা-কর্মী। এর মধ্যে বগুড়ায় সর্বোচ্চ ৩৩ জন, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে ১৫ জন করে, লালমনিরহাটে ১৭ জন, কুড়িগ্রামে ২০ জন, নওগাঁয় ২৮ জন, কুষ্টিয়ায় ১৫ জন, যশোরে ১৯ জন, সিলেটে ২১ জন ও মৌলভীবাজারে ১৯ জন রয়েছেন।

জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৪৮৬টিতে। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮১ জন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০৫ জন জয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩৩০টিতে। এ ছাড়া এই ধাপে জাতীয় পার্টি ১০টি, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ চারটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়েছে।

এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী লড়েছেন খুব অল্প সংখ্যক। সূত্র জানায়, বিএনপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন এমন ইউপিগুলোর মধ্যে রয়েছে রংপুরের পীরগাছা সদর, ছাওলা ও কান্দি; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ধরমণ্ডল, কুণ্ডা ও গোকর্ণ; যশোর চৌগাছার পাতিবিলা ও হাকিমপুর; মৌলভীবাজারের জুড়ীর জায়ফরনগর ও গোয়ালবাড়ী; পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তিরনইহাট, বুড়াবুড়ি ও ভজনপুর এবং দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের নাফানগর ও মুর্শিদহাট।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগে এবার ছিল বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। তৃতীয় ধাপে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন প্রার্থী বিনা ভোটে জয়ী হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ১০০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। বাকিরা সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য।
তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৪টি ইউপিতে ভোট হচ্ছে। ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

এদিনই স্পষ্ট হয়ে যায়, অনেকের চেয়ারম্যান ও সদস্য হতে ভোট লাগছে না। তৃতীয় ধাপের ভোটের আরেকটি দিক হলো, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কমেনি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১ হাজার ৬৯ জন নেতা অথবা কর্মী। দ্বিতীয় ধাপে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন প্রায় ৮৯৭ জন। তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে যেসব এলাকায় বিদ্রোহী বেশি, তার মধ্যে রয়েছে নরসিংদী, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মাগুরা।

নরসিংদীর দুটি উপজেলার ২২টি ইউপিতে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১ জনে। জেলার রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আসাদুল্লাহ ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি বলেন, গত নির্বাচনেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এবারও তিনি দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। কিন্তু এলাকার মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁদের পক্ষে কাজ করা নেতা-কর্মীদের দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। দলীয় নেতারা বিভিন্ন সময় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে তাতে কাজ হয়নি। বিদ্রোহীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তৃতীয় ধাপের ভোটেও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রচার শুরু থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত ২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এবারের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়া প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। জানা যায়, এবার বিনা ভোটে যে ১০০ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, এবং তাঁদের ৯৯ জনই আওয়ামী লীগের। বাকি যে একজন বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী। এই প্রার্থী হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরের ছলিমাবাদ ইউনিয়নের মো. জালাল মিয়া। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

উল্লেখ্য, দশম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৩ ডিসেম্বর সারাদেশের ৮৪০টি ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে। বুধবার দুপুরে কমিশনের বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তফসিল ঘোষণা করেন ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের ৮৯তম কমিশন বৈঠক শেষে এই তফসিল ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর জানান, নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ীÑ ইউপি চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচন করতে আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২৯ নভেম্বর। তফসিলের তথ্য বলছে, এরপর ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে ৬ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। দুই সপ্তাহের প্রচার-প্রচারণা শেষে ২৩ ডিসেম্বর ভোট নেওয়া হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris