শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

Paris
Update : শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

এফএনএস : করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আগামীকাল রোববার থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার হলে প্রতি বেঞ্চে বসানো হবে একজন শিক্ষার্থী। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবক জমায়েতে থাকবে কঠোরতা। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার আয়োজনে স্বস্তি অভিভাবকদের। তবে দ্রুত ফল প্রকাশ করে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর দাবি তাদের। সীমিত পরিসরে সশরীরে ক্লাস, পরীক্ষা ও স্কুল উপস্থিতির মধ্য দিয়ে করোনাকালের দেড় বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাজীবনকে স্বাভাবিক করতে সেপ্টেম্বরে খুলে দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে স্কুলগুলোতে ছিল সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের কঠোরতা। স্কুলগুলো বলছে, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা পাবলিক পরীক্ষা নেওয়াকে সহজ করবে।

২২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী, কেন্দ্র ৩ হাজার ৬৭৯টি: চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। গতবছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন। গত বছরের থেকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, চলতি বছর ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে মোট ২৯ হাজার ৩৫টি স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। ৯টি সাধারণ বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৭ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের ১৮ লাখ ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী। আর ৯ হাজার ১১০টি মাদ্রাসার ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭জন পরীক্ষার্থী ৭১০টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবে ২ হাজার ৩৪৯টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন শিক্ষার্থী। গতবছরের থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বেড়েছে ১৬৭টি। আর প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫১টি।

কবে কোন পরীক্ষা : এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ১৪ নভেম্বর (আগামীকাল রোববার)। ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলবে। প্রথম দিন ১৪ নভেম্বর সকালে পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ নভেম্বর সকালে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং বিকেলে হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ নভেম্বর সকালে রসায়ন (তত্ত্বীয়) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ নভেম্বর সকালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (তত্ত্বীয়) অনুষ্ঠিত হবে। ২১ নভেম্বর সকালে ভূগোল ও পরিবেশ এবং বিকেলে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২২ নভেম্বর সকালে উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ নভেম্বর সকালে পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আর বিকেলে ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়ের পরীক্ষা হবে। জানা গেছে, ১৪ নভেম্বর দাখিলের কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের, ১৮ নভেম্বর হাদিস শরিফ বিষয়ের এবং ২১ নভেম্বর ইসলামের ইতিহাস, রসায়ন, তাজভিদ নসর ও নজম (মুজাব্বিদ গ্রুপ) এবং তাজভিদ (হিফজুল গ্রুপ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত দিনে সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

ফল কবে: ২৮ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে এসএসসি ও দাখিলের ব্যাবহারিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে আগামী ডিসেম্বর মাসেই ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে।

অ্যাডমিট কার্ড: চলতি নভেম্বর মাসের শুরুতেই কেন্দ্রগুলোকে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট বিতরণ করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। ইতোমধ্যে কেন্দ্রগুলো স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোকে অ্যাডমিট কার্ড বিতরণ করেছে কেন্দ্রগুলো। পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহ করছেন।

পরীক্ষার্থীর সাথে একজনের বেশি অভিভাবক নয়: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি অভিভাবক কেন্দ্রে আসতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এজন্য একজনের বেশী অভিভাবক পরীক্ষার্থীর সাথে আসতে পারবে না। তাছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর জারি করা গাইড লাইনের নির্দেশনা পালন করতে হবে।

ত্রিশ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর পরীক্ষা কেন্দ্রে আসলে রেজিস্টারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। বিলম্বে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নয়: কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীগণের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে যাবে প্রশ্ন: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তাঁর মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না। ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে বহুমুখী নির্বাচনী প্রশ্নসহ রচনামূলক বা সৃজনশীলের সকল সেট প্রশ্নই নিতে হবে। সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে।

সে অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্র সচিব এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে বিধি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে। অনিবার্য কারণবশত কোন পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে।

পরীক্ষা কেন্দ্রে বহিরাগতদের প্রবেশ নয়: পরীক্ষা চলাকালীন এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যান্যের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন।

নজরদারি : মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজরদারী জোরদার করবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris