শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চারঘাটে সমবায় সমিতির কার্যক্রম নেই?

Paris
Update : শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

চারঘাট প্রতিনিধি : চারঘাট উপজেলায় ৯২টি নিবন্ধিত সমবায় সমিতি রয়েছে। কাগজে-কলমে ৮৭ টি সমিতি সচল থাকলেও অধিকাংশ সমিতিই অকার্যকর। কার্যক্রম খুবই সীমিত পর্যায়ে। এসব সমবায় সমিতি লুটপাট-অনিয়ম ও দাদন ব্যবসায়ীদের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সমিতিগুলো নিবন্ধন নিয়ে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করলেও কোনো জবাবদিহি নেই। এ সমিতিগুলো সমবায় অধিদপ্তর ও পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত।

সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সর্বমোট ৯২ টি নিবন্ধিত সমবায় সমিতি রয়েছে। সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি রয়েছে ২২ টি ও সঞ্চয় খণদান সমিতি রয়েছে ৫ টি। যার সবগুলোই রয়েছে দাদন ব্যবসায়ীদের দখলে। নিয়ম নীতি অমান্য করে খণ প্রদান ও জোর করে আদায়ই এ সমিতি গুলোর কাজ। মৎস্যজীবি সমিতি রয়েছে ৭টি। মৎস্যজীবি সমিতির সবগুলোই নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজনৈতিক নেতারা। সরকারী জলমহাল ইজারা নেয়ার জন্যই এসব সমিতি গুলো গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া কোনো কার্যক্রম নেই।

এছাড়াও উপজেলায় মৎস্য চাষী সমিতি ১টি, কুলি ৭টি, সিএনজি অটো রিকশা ১টি, সিইজি সমিতি ১২টি, শিল্প মালিক ১টি, মটর পরিবহন ২ টি, পানি ব্যবস্থাপনা ২টি, ব্যবসায়ী সমিতি ২টি, আবাসন গুচ্ছ গ্রাম ৪টি, কৃষি ৭টি ও ইউনিয়ন বহুমুখী সমিতি ৫ টি আছে। এসব সমবায় সমিতির মোট সদস্য ৬ হাজার ২৭৫ জন। কিন্তু অনেক সদস্য নিজেও জানে না তারা সমিতির সদস্য। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের সুবিধা আদায়ে সমিতি গুলো ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলায় নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলোর মূলধন কত, ভৌত সম্পদ কেমন, বিনিয়োগ কত টাকা-তার কোনো হিসাব নেই স্থানীয় সমবায় দপ্তরে।

উপজেলা সমবায় অফিসের কর্মকর্তারা সমিতিগুলোর নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয় স্বীকার করে জানায়, সদস্যদের লক্ষ্য পূরণসহ নানা কারণেই দিনে দিনে এসব সমবায় সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে। তবে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁদের খুব একটা করণীয় নেই। তাঁরা রেগুলেটরি বডি হিসেবে কেবল উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। সমিতির সদস্যদেরই এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

উপজেলার নিমপাড়া কৃষি সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মহিদুল ইসলাম জানান, আশির দশকে কৃষি সমবায় সমিতিগুলো খুবই কার্যকর থাকলেও বর্তমানে সেগুলো প্রায় নিষ্ক্রিয়। আগে তাঁরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষি ঋণসহ নানা ধরনের সুযোগ–সুবিধা পেতেন। কিন্তু এখন সেটা আগের মতো আর দেওয়া হয় না। তা ছাড়া সমিতি সক্রিয় রাখতে হলে নিয়মিত সভা, নির্বাচন ও অডিট করানোসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু কোনো কার্যক্রম না থাকায় সদস্যরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
স্থানীয় শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, সমবায় সমিতির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। দাদন ব্যবসায়ীরা সমবায়ের আড়ালে সমিতির নিবন্ধন নিয়ে ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে সুদের ব্যবসা করছেন। সাধারণ মানুষ তাতে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সমবায় অফিস সবকিছু দেখেও না বোঝার ভান করে আছে।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সুভাষ কুমার দাস জানান, সমবায় সমিতি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠন করা হয়। এরপর তারা নিবন্ধন পেয়েই সরকারি সুবিধা নেওয়া শুরু করে। আমরা নিয়মিত অডিট করে সমিতি গুলোকে খণদানসহ অন্যান্য কার্যক্রমে আইন মানতে নির্দেশনা দিই। কিন্তু তারপরও তারা নির্দেশনা মানেন না। আমরা সমিতির সদস্যদের কথা চিন্তা করে সমিতিগুলো বন্ধ করিনা। সমবায় সমিতি গুলোকে বাঁচাতে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। রাজশাহী জেলা সমবায় কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, সরকারী নিয়ম নীতি মেনেই সমবায় সমিতি গুলো পরিচালিত হবে। আমরা এ ইতিমধ্যে চারঘাটে অডিট শুরু হয়েছে। কোনো সমিতিতে অনিয়ম পেলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris