শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী নগরীর ২ হত্যার রহস্য উদঘাটন পাঁচ ঘাতক গ্রেফতার

Paris
Update : সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মহানগরীতে অটোরিক্সা চালককে গলাকেটে হত্যার করে অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত ৩ জনকে আটক করেছে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। এসময় আসামীদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু, মোবাইল ফোনসহ ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার মিয়াপাড়ার মোঃ রবিউল ইসলামের ছেলে মোঃ আল-আমিন (২১), বাঘা থানার মালি আনদাহো গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে মোঃ জনি (২১) ও নাটোর জেলার লালপুর থানার মহরকয়া গ্রামের মোঃ দিরাজ মন্ডলের ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম (৩৫)। গতকাল আরএমপি সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয় বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ৭ অক্টোবর রাত ১টায় বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ সাগরপাড়া নেসকো অফিসের পূর্বে ড্রেনে পরে থাকা একটি লাশ উদ্ধার করে। এরপর মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের পকেটে থাকা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পরিচয় সনাক্ত করেন। জানা যায়, সে রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার মৃত কবেজ প্রামানিকের ছেলে আঃ কাদের (৫৫)। এ হত্যান্ডের বিষয়ে মৃতের বড় ছেলে সাইফুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।

মামলা রুজু পরবর্তীতে আরএমপি’র কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক মামলার ঘটনার জড়িতদের সনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারসহ মামলার রহস্য উদঘাটন করার নির্দেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) সাজিদ হোসেনের দিকনির্দেশনায় বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নিবারন চন্দ্র বর্মন পিপিএম এর নেতৃত্বে এসআই মোঃ সাহাবুল ইসলাম ও তার টিম এই ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে অভিযানে নামে।

এরপর আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় আরএমপি অপারেশন কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসামীদের সনাক্ত করা হয়। অবশেষে বোয়ালিয়া মডেল থানা ঐ টিম গত ৬ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে মূল অভিযুক্ত আল-আমিন (২১)কে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকুসহ চারঘাট হতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামী আল-আমিনের দেয়া তথ্য মতে তার সহযোগী অপর আসামী জনি (২১)কে বাঘা হতে গ্রেফতার হয় এবং চোরাই অটোরিক্সা কেনার অপরাধে নাটোর লালপুর হতে অটোরিক্সার যন্ত্রাংশ সহ আসামী অটোরিক্সা গ্যারেজ মালিক মোঃ আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইতোপূর্বে আল-আমিন ও পলাতক আসামী কাউসার (২০) অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কাউসার হাতেনাতে আটক হলেও আল-আমিন পালিয়ে যায়।

সেখানে উপস্থিত লোকজন কাউসারকে গণধোলাই দিয়ে চারঘাট থানা পুলিশের নিকটে সোপর্দ করে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে কাউসারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর কাউসার ও আল-আমিন এই জরিমানার টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে রাত ১২ টায় আঃ কাদেরে অটোরিক্সাটি ভাড়া করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নির্জন এলাকায় চাকু দ্বারা গলাকেটে হত্যা করে লাশ সাগরপাড়া নেসকো অফিসের পূর্বে ড্রেনে ফেলে অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ছিনতাই করা অটোরিক্সাটি আসামী আরিফুলের নিকটে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রয় করে।

আরিফুল নগদ ২২ হাজার টাকা প্রদান করে এবং অটোরিক্সার চার্জার পেলে অবশিষ্ট ২ হাজার টাকা পরিশোধ করবে বলে জানায়। ২২ হাজার টাকার মধ্যে কাউসার পূর্বের জরিমানা বাবদ ১৫ হাজার টাকা নেয়। অবশিষ্ট টাকা আসামী আল-আমিন, জনি এবং কাউসারের পিতা মাহাবুবুর ভাগাভাগি করে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায়, হত্যাকান্ডের সহযোগী অপর আসামী কাউসার (২০) ঘটনার পরদিনই গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পালিয়ে যায়। ঘটনার দিন কাউসার যে ফোন ব্যবহার করেছিলো, সেটা তার বাড়ি থেকে তার বাবার হেফাজত হতে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।

পলাতক অপর আসামীকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের তৎপরতায় সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপারেশন কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় একটি ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ আসামীদের গ্রেফতার করলো বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ।

এদিকে রাজশাহী মহানগরীর রাণীনগর এলাকায় বাড়ীতে প্রবেশ করে ছুরিকাঘাতে পিয়ারুল ইসলাম পিরু (৩৪)কে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ২ ঘাতককে গ্রেফতার করেছে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। এসময় আসামীদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার রড, জিআই পাইপ উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার রাণানগরের মোঃ হাসিবুলের ছেলে মোঃ শিমুল (২১) ও সাধুর মোড়ের মোঃ তারিকের ছেলে মোঃ সোহানুর রহমান সোহান (২২)।

গতকাল বেলা ১১.৩০ টায় আরএমপি সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয় বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর ২০২১ রাত ৭ টায় মোঃ পিয়ারুল ইসলাম পিরু (৩৪) তার বাসার সামনে ছিলো। ঐ সময় আসামী মোঃ হাসান আলী জয় (২৭) তাকে তুমি বলে সম্বোধন করায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। উক্ত ঘটনার জেরে কিছুক্ষন পরে আসামী হাসান আলী জয়সহ কয়েকজন মিলে হাতে ধারালো চাকু, লোহার রড, জিআই পাইপ, বাঁশের লাঠি নিয়ে এসে বাড়ীতে প্রবেশ করে পিয়ারুলকে এলোপাথাড়ীভাবে মারধর করে এবং বুকে ও হাঁটুর উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।

পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নিবারন চন্দ্র বর্মন পিপিএম ও তার টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাক্ষীদের সনাক্ত মতে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আসামী মোঃ শিমুল ও সোহানুর রহমান সোহানকে আটক করে। এসময় আসামীদের কাছ থেকে পিয়ারুলকে মারধরসহ হত্যার কাজে ব্যবহৃত লোহার রড, জিআই পাইপ উদ্ধার হয়। মৃতের বড় ভাই মোঃ নজরুল ইসলাম খসরুর লিখিত এজাহারের প্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইতোপূর্বে আসামী শিমুল ও তার অন্যান্য সহযোগীরা পিয়ারুলকে মেরে পা ভেঙ্গে দিয়েছিল। সেই ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মূলত ঐ মামলাকে কেন্দ্র করে আসামীরা পূর্ব শক্রতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে পিয়ারুলকে হত্যা করে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris