শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দায়িত্ব পালনে যৌন হয়রানির শিকার ৫.৭ শতাংশ নারী ইউএনও : টিআইবি

Paris
Update : শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

এফএনএস : দেশে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রতি এখনো নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। উন্নয়নকাজ তদারকিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় ৫ দশমকি ৭ শতাংশ ইউএনও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। টিআইবির গবষেণা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদে সাচিবিক সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী ইউএনও অবৈধ আর্থিক সুবিধা অনুমোদন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন।

এ ধরনের অবৈধ আর্থিক সুবিধা অনুমোদন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ প্রধানত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আসে। নারী ইউএনওর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, জেন্ডার চাহিদা বিবেচনায় রেখে মাঠপর্যায়ে উন্নয়নকাজ পরিদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উপজেলা নারী নির্বাহী কর্মকর্তার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

এসময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি (পরিচালক) মোহাম্মাদ রফিকুল হাসান, সিনিয়র ফেলো-রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি শাহজাদা এম আকরাম, প্রাক্তন সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউএনও একটি উপজেলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ইউএনও বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের পদমর্যাদা ক্রমানুসারে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একটি।

স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নারী ইউএনও কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, তা বিশ্লেষণ করাই ছিল এ গবেষণার উদ্দেশ্য। এ গবেষণায় উপজেলা পরিষদে সাচিবিক সহায়তা প্রদান, উপজেলা চেয়ারম্যানকে সহায়তা প্রদান, উপজেলা পরিষদসহ অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং উপজেলা প্রশাসনের সরকারি নির্দেশনাবলী পালন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জসমূহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ইউএনও জানিয়েছেন- ত্রাণসামগ্রী বিতরণে অনিয়ম করার জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়।

এ ধরনের চাপ প্রয়োগের ফলে অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রীর জন্য সুপারিশ করতে বাধ্য হতে হয় বলেছেন ২০ শতাংশ ইউএনও। এছাড়া ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ ইউএনও জানিয়েছেন, ব্যয়ের যথার্থতা যাচাই না করার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। ভুয়া ব্যয়ের বিল অনুমোদন দিতে বাধ্য করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ইউএনও। উপজেলা পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কাজে অনিয়ম করার জন্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় বলেছেন ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইউএনও। ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ ইউএনও বলেছেন- কাজ সম্পাদন করার ক্ষেত্রে তারা সহকর্মীদের থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পান না।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উপজেলা চেয়ারম্যানকে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে নারী ইউএনও যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, তার মধ্যে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়া (৪০ দশমিক ৫ শতাংশ) অন্যতম। ৩১ দশমকি ৪ শতাংশ ইউএনও জানিয়েছেন, উপজেলায় দুর্নীতিবিরোধী কাজের ক্ষেত্রে তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। এ ছাড়া প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ইউএনও (৩১ দশমিক ৪ শতাংশ) জানিয়েছেন, তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে অনৈতিক কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। উপজেলার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ইউএনওরা (৩১ শতাংশ) রাজনৈতিক প্রভাবের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।

টিআইবির গবেষণা অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইউএনও বাধার সম্মুখীন হন। এ ছাড়া উন্নয়ন কার‌্যাবলী তদারকিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইউএনও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব দায়িত্ব ইউএনও পালন করেন চেয়ারম্যানের কার্যক্রমকে সহজতর করার জন্য। এছাড়াও রয়েছে সমন্বয় সাধন, সরকারি নির্দেশ পালন, দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতির শিকার হলে অভিযোগ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন ৫৭.৮% ইউএনও। ৩৫.৬% ইউএনও জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য তারা প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।

কারও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয় বলে জানিয়েছেন ২৮.৯% ইউএনও। উপজেলায় দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেন ২৮.৯% ইউএনও। এ ছাড়া উপজেলায় দুর্নীতির প্রবণতা কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য নৈতিকতা কমিটি গঠন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির বিরদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন যথাক্রমে ২২.২% ও ৪.৫% নারী ইউএনও। এছাড়া কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ইউএনও’রা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে পুরষতান্ত্রিক/পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের মুখোমুখি হন।

ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের পরিকল্পনা ও সম্পাদনকালীন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের থেকে অনিয়ম করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। এ ছাড়া ইউএন’রা দুর্নীতিবিরোধী কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন এবং অনেক সময় তাদেরকে অনৈতিক কাজ করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়।এসব দূর করার জন্য ৮টি সুপারিশ করেছে টিআইবি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris