বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রংপুরে পুলিশের অভিযানে মৃত্যু পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট

Paris
Update : বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১

এফএনএস : রংপুরের হারাগাছ থানা পুলিশের ‘অভিযানে’ তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর উচ্চ আদালতের নজরে আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে বিষয়টি নজরে আনেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, ঘটনার পুরো বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে খবর নিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা উচ্চ আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনানি ও আদেশ দেওয়া হবে।এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় রংপুরের হারাগাছ এলাকায় পুলিশের অভিযানের পর তাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তিনি হারাগাছ পৌর এলাকার দালালহাট নয়াটারী গ্রামের বাসিন্দা। ‘পুলিশি নির্যাতনে’ তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যার পর হারাগাছের নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপথি মোড়ে অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটকের পর মারধর করা হয়। তখন ধাক্কায় দেয়ালে লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল। এর প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।তবে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী বলেন, তাজুল হেরোইন সেবন করছিলেন- এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। তাকে আটকের পর হ্যান্ডকাপ পরানো হলে তিনি মলত্যাগ করে ফেলেন। এ ঘটনার পর পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে যে তাজুল মারা গেছেন।

এ ঘটনায় গত সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা চলে। বিক্ষুব্ধ জনতা হারাগাছ থানায় হামলা চালিয়ে আসবাবপত্রসহ মালামাল ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। হামলা ও সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ক্রাইম) মারুফ হোসেন দাবি করেন, তাজুল ইসলাম একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। মাদকবিরোধী অভিযানে তাকে আটক করে থানায় আনার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। তাকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি।

পরে নিহত তাজুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে থানায় এনে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু সুবিধাবাদী লোক থানায় হামলা করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছেন। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের কাজে বাধা, থানায় হামলা ও ভাঙচুরে ঘটনায় একটি এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে।পুলিশের দাবি এ ঘটনায় কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে স্থানীয়রা জানান, ঘটনা পর ৫-৬ জনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। তাদের দাবি, তাজুল ইসলাম মাদকসেবী নন এবং মাদকের ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত নন।

তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা। নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা আফজাল বলেন, আমার সামনে পুলিশ তাজুলকে গ্রেপ্তার করে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে নির্যাতন করেছে। পরে আমার সামনেই তার মৃত্যু হয়। অথচ এখন বলা হচ্ছে সে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। এটা পুরোপুরি বানানো এবং মিথ্যা তথ্য। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সোহরাব হোসেন বলেন, বাজারে সবার সামনে তাজুলকে আটক করা হয়।

হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মারধরের ঘটনাকে পুলিশ এখন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের দাবি জানান তিনি। এদিকে ঘটনার পর থেকে পুলিশি হয়রানির ভয়ে নয়াবাজারসহ আশপাশের এলাকার বাড়ি-ঘর থেকে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। বেশিরভাগ বাড়িতে পুরুষ সদস্য নেই। পুলিশ নিরীহ লোকদের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris