শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রায়ত্ত অর্ধডজন প্রতিষ্ঠান বিপুল লোকসান গুনেছে

Paris
Update : শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

এফএনএস : রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি প্রতিষ্ঠান বিপুল লোকসান গুনে চলেছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া ভর্তুকি ছাড়া চলতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ১৬ প্রতিষ্ঠান। বিগত পাঁচ অর্থবছরে (২০১৬-২১) ওসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি হিসাবে ৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। আর শুধু গত এক বছরে দেয়া হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ১১টি লাভজনক প্রতিষ্ঠানও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকির টাকা নিচ্ছে। কিন্তু এতোকিছুর পরও রাষ্ট্রায়ত্ত ৫টি করপোরেশন লাভের মুখ দেখতে পারেনি বাকি। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত ৪৮টি করপোরেশন ও প্রতিষ্ঠানের নিট মুনাফা কমেছে ২২১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তার মধ্যে শুধু ৬টি করপোরেশনের লোকসান হয়েছে ১৯৯৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৯৭২ কোটি টাকা। বিএসএফআইসি দীর্ঘদিন চিনি উৎপাদন করে লোকসান দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির কারণে অনেক মিলে উৎপাদন বন্ধ। প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির সন্ধানে সরকারের নিরীক্ষা বিভাগ কাজ করছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনের লোকসানের দিক থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (বিসিআইসি)। যার লোকসান ৬৭৬ কোটি টাকা।

তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। সংস্থাটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা। বিজেএমসির অনেক মিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও ওই প্রতিষ্ঠানে গত অর্থবছরও ৪০ কোটি টাকারও বেশি ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের লোকসান হয়েছে ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৬টি রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) প্রায় ৫০৮ কোটি টাকা দেয়া হয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানটি ভর্তুকি নেয়ার পরও গত অর্থবছরে ৮১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। করোনায় টানা লকডাউন থাকায় নৌপথে যাত্রী পরিবহণ কমে যায়। আর তার প্রভাব প্রতিষ্ঠানটির ওপর পড়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি ওই বছরে লোকসান দিয়েছে ৮১ কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিএসসিআইসি) ভর্তুকি হিসাবে দেয়া হয়েছে ১৯৭ কোটি টাকা। আর ওই প্রতিষ্ঠানও লোকসান করেছে ১১ কোটি টাকা। তাছাড়া বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডে (বিএসবি) ভর্তুকি দেয়া হয়েছে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। তবে ওই প্রতিষ্ঠানটি গত বছর লাভজনক ছিল।

সূত্র আরো জানায়, লাভজনক থাকা অবস্থায় যেসব প্রতিষ্ঠান ভর্তুকি নিচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), খুলনা ও রাজশাহী ওয়াসা, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএসআরটিআই), বিএসএমআরএন, সিবিডিএ ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)।

তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬টি করপোরেশনকে ভর্তুকি বাবদ দেয়া হয়েছিল ১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গেছে ১৩৬২ কোটি টাকা। তাছাড়া ২০১৭-১৮ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যথাক্রমে ভর্তুকি হিসাবে ১২৬১ কোটি টাকা ও ১১০৯ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া গত অর্থবছরে ৪৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশন ও প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিট মুনাফা ২ হাজার ২১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা কমেছে। অর্থবছরে (২০১৯-২০) লাভ-লোকসান মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের মুনাফা হয়েছে ৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।

এদিকে এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের অভিমত, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো চলমান লোকসান দিচ্ছে। আর পূরণ করতেই ভর্তুকি ও অনুদান দেয়া হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা ও দক্ষতা বাড়াতে না পারলে এভাইে চলতে থাকবে। সরকারের টাকা যদি লোকসানি সংস্থাগুলোর পেছনে ব্যয় করা না হতো তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে আরো বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় সম্ভব হতো। অবশ্য রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সঙ্গে যুক্ত এমন কিছু পণ্য উৎপাদন, বিতরণ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি দেয়াকে সমর্থন করা যায়। যেমন পানি ও বিদ্যুৎ খাত।

ওসব পণ্য প্রতিটি মানুষ ব্যবহার করছে। কিন্তু ভর্তুকির টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন নেবে, পরিচালনা ব্যয় মেটানো হবে, ওসব ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করা প্রয়োজন। ওই ধরনের প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে ঠিকই লাভজনক হয়ে উঠবে। তবে সেগুলো বন্ধ করতে গেলে রাজনৈতিক একটি চাপ থাকে। যে কারণে অনেক সময় সরকার চাইলেও বন্ধ করতে পারে না।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris