শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলাহাটে চেয়ারম্যানের কক্ষে হামলার ঘটনায় ৯ জন আটক

Paris
Update : রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি জমিতে থাকা একটি ক্লাব উচ্ছেদের জেরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুরসহ চেয়ারম্যানের কক্ষের সকল আসবাবপত্রে তান্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ৷

গতকাল শনিবার দুপুরে দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরজেদ আলী ভুট্টু বাদি হয়ে ভোলাহাট থানায় মামলা করেছেন। ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়। শুক্রবার রাতে আটককৃতরা হলেন- মুশরীভুজা গ্রামেরমৃত জোহরদীর ছেলে মোহাম্মদ মতি (৩৬), আইনালের ছেলে তাইস উদ্দিন (৩৩), পুরাতন বাড়ইপাড়া গ্রামের মৃত ইসরাইলের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৪৬), মো. ইউসুফ আলী (৫০), একই গ্রামের নাজির হোসেনের ছেলে নারুল হল (১৮), আসাদুল হকের ছেলে রাসেল আলী (২০)৷ আশিক আলী (১৮), ঘাইবাড়ি গ্রামের রবজুল হকের ছেলে নিপুল ইসলাম (৩০) ও ইয়াসিন মোল্লার ছেলে আব্দুল জলিল (৪২)

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় বাসিন্দা, ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দলদলী ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া-চুরিয়ালী মোড়ের সবুজ সংঘ নামের একটি ক্লাবের ঘর উচ্ছেদের জেরেই এই হামলা হয়। প্রায় ৮ মাস আগে সরকারি জায়গায় ক্লাবের ঘর উচ্ছেদ করে উপজেলা প্রশাসন। পরে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একই জায়গায় নতুন করে ঘর বসানো হয়। রাত আটটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ দিয়ে ঘরটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন। গ্রাম পুলিশের সদস্যরা ঘরটি ভেঙে দেয়ার পর ক্লাবের সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে হামলা চালায়।

ইউপি চেয়ারম্যানের কক্ষে হামলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউপি চেয়ারম্যান আরজেদ আলী ভুট্টুর ছবি ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। এমনকি চেয়ারম্যানের কক্ষে থাকা টিভি, চেয়ার, টেবিল ভাংচুর করা হয়। এদিকে, ক্লাব কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং চেয়ারম্যানের কক্ষে হামলার কথা অস্বীকার করছে। উল্টো তাদের দাবি, ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নিজেরাই এসব ভেঙে তাদেরকে দোষী করছেন। ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল বারী জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ আরও ৩ ইউপি সদস্যকে নিয়ে চেয়ারম্যানের রুমেই ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম অনেক লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে লাঠিসোটা নিয়ে আসছে।

অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চেয়রাম্যানকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তৃতীয় তলায় পালিয়ে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করি। উপর থেকেই শুনতে পায়, ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুরের শব্দ। পরিস্থিতি ভালো হলে নিচে এসে দেখি ঘরকে তছনছ করেছে এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে। মামলার বাদি ও ইউপি চেয়ারম্যান আরজেদ আলী ভুট্টু বলেন, সরকারি জায়গায় কোনরকম স্থাপনা নির্মাণ করা বেআইনি। তাই প্রায় ৮ মাস আগে ইউএনও মহোদয় নিজেই এই ঘরটিসহ রাস্তার ধারের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একই জায়গায় ঘর দেয়ার কথা জানতে পেরে ইউএনও স্যারকে অবহিত করে গ্রাম পুলিশ পাঠায়।

কিন্তু ঘর তোলার কথা কেউ স্বীকার না করায় গ্রাম পুলিশ তা পুনরায় ভেঙে দেয়। এরই জের ধরে ইউনিয়ন পরিষদে তারা হামলা চালায়। তিনি আরও বলেন, সরকারি জমিতে ঘর উচ্ছেদ করায় আমার উপর এই হামলা হয়েছে। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যই তারা এই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। আমি পালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তৃতীয় তলায় অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে তাদের সহায়তায় আমি ঘর থেকে বের হয়। সরকারি জমিতে ক্লাবের ঘর নির্মাণ ছাড়াও ক্লাবের বিরুদ্ধে মাদক ও সুদের কারবার করার অভিযোগ রয়েছে। একারনেই মূলত ঘরটি উচ্ছেদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন পরিষদে হামলার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সংঘবদ্ধ হয়ে ২৫-৩০ জন দুর্বৃত্তরা দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করে। প্রথমবার ফিরে গিয়ে পরেরবার লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। এসময় তারা বারবার বলতে থাকে, চেয়ারম্যান কই, তাকে ধরে নিয়ে আয়, শেষ করে দিব। ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র তারা ইচ্ছেমতো ভাংচুর করে। সবুজ সংঘ ক্লাবের সভাপতি একরামুল হক বলেন, গ্রামের স্থানীয় কৃষক ও যুবকদের নিয়ে ১৯৯৭ সালে ক্লাবটির যাত্রা। ৬০ জন সদস্য নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করছে সবুজ সংঘ ক্লাব। মাসিক ১০০ টাকা চাঁদা তুলে সমাজের অসহায়, অসচ্ছল পরিবারের বিয়েতে আর্থিক সহায়তা, কারো অসুখ হলে তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কাজ করে থাকে।

গত ২৪ বছর ধরে এই জায়গাটিতে অস্থায়ী একটি টিনের চালা দিয়ে আমরা ঘর তৈরি করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করি। গত ৮ মাস আগে হঠাৎ এখানে উপজেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ক্লাবের সহ-সভাপতি আসাদুল হক বলেন, গত ৮ মাসে ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে অসংখ্যবার চেয়ারম্যানের কাছে ঘরটি করার অনুমতি চাইতে গেছি। চেয়ারম্যান ঘরটি করার অনুমতি ও পাঁকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। এরপর গতকাল (শুক্রবার) চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে ঘরটি তোলা হয়। এরপর এশার নামাজের সময় চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে ভেঙে দেয়। পরে চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দিতে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আমরা ঘুরে আসি। পরে শুনলাম কে বা কারা চেয়ারম্যানের কক্ষে হামলা চালিয়েছে। হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে উল্টো অভিযোগ করেন তিনি।

আসাদুল হক বলেন, চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এসব ভাংচুর করে আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদে হামলার প্রধান অভিযুক্ত মুদি দোকানী খলিল জানান, ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। অথচ রাত ২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার দোকানে হামলা চালায়। এসময় দোকানের ক্যাশে থাকা ১৩ হাজার ৮০০ টাকা নিয়েছে তারা। এমনকি দোকানে ব্যাপক ভাংচুর চালায় চেয়ারম্যানের লোকজন। ভোলাহাট থানার ওসি মাহবুবুর রহমান জানান, শুক্রবার রাতেই ঘটনায় জড়িত ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।

তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে। এছাড়াও বাকি আসামিদের আটক অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল বলেন, সরকারি জমি ব্যবহার করে কোনরকম স্থাপনা নির্মাণ ও অপরাধমূলক কাজ করতে দেয়া হবে। তাই ক্লাবের ঘরটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে হামলা চালিয়েছে। এঘটনার পর সারারাত অভিযান পরিচালনা করে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris