বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে রাজশাহী এলজিইডির অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের চোখ এড়াতে পারেনি

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১

এফএনএস : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রস্তাব করেছে। বিটুমিনাস কার্পেটিং (বিসি) করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অথচ বাস্তবে তাতে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। আর আরসিসি (রড, সিমেন্ট, কংক্রিট) রাস্তা নির্মাণ করতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। সেটিও অস্বাভাবিক প্রাক্কলন। সেখানে প্রতি কিলোমিটারে বড়জোর দেড় কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু অস্বাভাবিক ব্যয়ের ওই প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের চোখ এড়াতে পারেনি। সেজন্যই আপত্তি দিয়ে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এবং এলজিইডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলার ৬৭টি উপজেলার পল্লী এলাকায় আধুনিক নাগরিক সুবিধা স্থাপন করে উন্নত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। সেজন্য ১৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ উপজেলা সড়ক ও শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালী করতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ২৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি প্রকল্পে কেন এভাবে পরামর্শ নিতে টাকা খরচ করতে হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের হাজারো প্রশ্ন রয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির জন্য ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা মোট ব্যয় ধরা হয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয় সংবলিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) করানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পে সংযোজিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে স্থানীয়ভাবে প্রকল্প এলাকার কোনো তথ্য নেই। কেবল কিছু জাতীয় পরিসংখ্যান যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া সমীক্ষা প্রতিবেদনে পরিকল্পনা বিভাগের নির্ধারিত ফরম্যাট অনুযায়ী তথ্য সংযোজন করা হয়নি।

এমন অবস্থায় তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে নির্ধারিত ফরম্যাট অনুযায়ী ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিকমতো না হলে সঠিকভাবে ব্যয় প্রাক্কলন করা যায় না। বরং অনেক সময় ধারণা করেই ব্যয় প্রস্তাব দেয়া হয়। এমনকি কখনো ইচ্ছা করেই বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব করে। তার পেছনে দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের মানসিকতা কাজ করে। কারণ শুরুতেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়াতে পারলে ঠিকাদারের কাছ থেকে আগাম বেশি ঘুস নেয়া সহজ। এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়ের এমন ধরনের প্রস্তাব শুধু সংশোধন করার জন্য ফেরত নয়, বরং তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এমন কাজের ক্ষেত্রে পরামর্শক কেন লাগবে? আর লাগলেও এতো টাকা কেন ব্যয় হবে তা খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে এলজিইডির পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড-২) শেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, সুনির্দিষ্টভাবে একটি প্রকল্পের বিষয়ে বলা কঠিন। তবে যে কোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের বেশি ব্যয় হলে তা সমীক্ষা ছাড়া প্রস্তাব করার কথা নয়। কেননা একটি প্রকল্প যখন প্রস্তাব করা হয়, তখন অনেক ধাপ পার হয়েই পরিকল্পনা কমিশনে যায়। আর এলজিইডি পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যদি সঠিক না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে গোড়াতেই গলদ।

কেননা তার ফলে প্রকল্প প্রস্তাবে যেমন নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, তেমনই বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়েও নানা জটিলতা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত সময়মতো বাস্তবায়ন হয় না। আর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে যায়, যা অনাকাক্সিক্ষত। সেজন্য উন্নয়ন প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব থাকলে তা পরিকল্পনা কমিশনকে আরও শক্তভাবে দেখা প্রয়োজন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris