শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপুর কিসমত গনকৈড় ইউপি চেয়ারম্যান আফসারের বিরুদ্ধে আট সদস্যর অভিযোগ

Paris
Update : রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ২নং কিসমত গনকৈড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফসার আলী মোল্লার বিরুদ্ধে অনাস্থা, অনিয়ম, দুর্নিতী ও তার অসদাচরনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ইউপির সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যসহ ৮ ইউপি সদস্য। চেয়ারম্যান আফসার আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, দূর্নিতি, অর্থ আত্বসাত ও মারপিটের হুমকি ও ইউপি সদস্যদের সাথে দূর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে গত অক্টোবরে তারিখে স্থানিয় সংসদ সদস্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইউপির ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কারিরা হলেন, ২নং কিসমত গনকৈড় ইউপির ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেহের আলী, ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান, ১,২,৩ নং সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য মোছা নাছিমা বেগম, ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আযম আলী, ৪,৫,৬ নং সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য মোছা ফরিদা বিবি, ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকরাম আলী সরদার, ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াছিন আলী প্রাং ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল সরকার। লিখিত অভিযোগ ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ২নং কিসমত গনকৈড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফসার আলী মোল্লার বিরুদ্ধে ভিজিএফ কার্ডের তালিকা অনিয়ম

ও অর্থ নিয়ে কার্ড দেয়া। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার কার্ড বিতরনে অনিয়ম ও দূর্নিতি, ইউপির শরীক, এডিপি এবং ননওয়েজ কাজের কোন হিসাব নিকাশ ও মিটিং ইউপি সদস্যদের সাথে না করা। ইউপির সকল কাজ নিজ গ্রামে নিয়ে গিয়ে করা। পরিষদে মিটিং ডেকে ফাঁকা খাতাই সাক্ষর করতে ইউপি সদস্যদের বাধ্য করা। কেউ স্বাক্ষর না করতে চাইলে তাকে মারপিট করার হুমকি দেন সব সময় চেয়ারম্যান আফসার ইউপি সদস্যদের। চেয়ারম্যান আফসার আলীর বিরুদ্ধে সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য ফরিদা বিবি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ইউপিতে ভিজিডি কার্ড এসেছিলো ২৫৭টি। যার মধ্যে তাকে মাত্র ৩টি দেন চেয়ারম্যান। এ বিষয় প্রতিবাদ করায় সকলের সামনে তাকে অপমান ও গালাগালি করে সকলের সামনে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে হুমকি দেয় চেয়ারম্যান।

এছাড়া ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকরাম সরদার চেয়ারম্যান আফসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন যাবত তাকে হয়রানি করছেন। প্রজেক্ট দিলে চেয়ারম্যান প্রজেক্টে স্বাক্ষর দিতে চাইনা। ভিজিএফসহ বিভিন্ন কার্ড ইউপি সদস্যদের তালিকা কেটে তিনি তালিকা করেন এবং বিধবা, বয়স্ক ভাতার কার্ডে ইউপি সদস্যদের ফরর্মে স্বাক্ষর করতে চায় না। ইউপির বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন ইউপি সদস্যদের। এছাড়াও শরিক, এডিপি, ননওয়েস্টকস্ট, ভিজিডি, মার্তৃকালীন, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরনে অনিয়ম ও ইউপি সদস্যদের অমূল্যায়ন করেন।

চেয়ারম্যান আফসারের প্রতি অনাস্থা, এডিপি, এলজিএসপি, ভিজিএফ প্রকল্পে দুর্নিতী অনিয়ম করে অর্থ আত্বসাতসহ নানান অভিযোগ এসব ইউপি সদস্যদের। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিদিন চা আপ্যায়ন খরচ বাবদ পরিষধের অর্থ তহবিল থেকে ২ হাজার টাকা করে কেটে নিয়ে সেই অর্থ আত্মসাত করেন চেয়ারম্যান।

বিভিন্ন প্রকল্পে চেয়ারম্যান তার ক্যডারবাহীনি দিয়ে এসব প্রকল্পে অনিয়ম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব বিষয় কোন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তাকে বিভিন্ন হুমকির কবলে পড়তে হয়। হতে হয় চেয়ারম্যনের ক্যডারবাহীনির হাতে লাঞ্চিত। ইউপি সদস্যদের প্রতিটি কাজের বাধা সৃষ্টি, অশ্লিল ভাষায় গালাগালি, তার ক্যডারবাহীনি নিয়ে পরিষদে অবস্থান করে ইউপি সদস্যদের হুমকির মুখে রাখেন যেন তার কাজে বাধা না থাকে বলেও অভিযোগ করেন ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আযম আলী। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ইউনিয়নে দুস্থ মানুষের বয়স্ক ভাতা,

বিধবা ভাতার কার্ড করতে গেলে প্রতি জনকে অর্থের বিনিময় এসব সেবা নিতে হয়। এছাড়া চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, বিভিন্ন কাজে ঘুষ গ্রহন ও সাধারণ মানুষকে মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করতে গেলে ১০০ টাকা করে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষ কে। গত ২৮/০৫/২০১৬ ইং সালে ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে শুরু হয় তার অত্যাচার।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, কোন ইউপি সদস্যদের তোয়াক্কা না করে ইউপি সদস্যদের হুমকি দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি, আমার চাইতে বড় নেতা কে আছে। আমিই সবকিছুর অধিকারী, আমিই সবচাইতে বড় নেতা। আমি যা বলি ইউপি সদস্যরা সেই কথা নিরবে মেনে যাও। না হলে অসুবিধা আছে এবং কথায় কথায় ইউপি সদস্যদের মারার হুমকি দেন চেয়ারম্যান আফসার আলী বলেও অভিযোগ করেন। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে সে আ.লীগের বিদ্রহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। ওই সময় নির্বাচনে আচরন বিধি ভঙ্গ করার অপরাধে অন্যরা গ্রেপ্তার হলেও আফসার আলী চেয়ারম্যান পালিয়ে বেচে যায়।

সাম্প্রতিক পুকুর লিজের ৮৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ২নং কিসমত গনকৈড় ইউপি চেয়ারম্যন আফসার আলী মোল্লার বিরুদ্ধে। গত ২ আগস্ট দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আলীপুর বাজারে সেই টাকা আদায় করার জন্য পাওনাদার কালাম নামের এক ব্যবসায়ী চেয়ারম্যনকে আটকে রাখে। পরে চেয়ারম্যন ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করলে দূর্গাপুর থানা পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনাটি বিভিন্ন গনমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে।

এছাড়া ইউনিয়নের ভুমিহীন মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত খাশ জমি নিজের নামে লিজ করে নেন চেয়ারম্যান। পরে সেই লিজকৃত জমির ভূমির পরিবর্তন করে দখল করেন তিনি। এ বিষয় চেয়ারম্যান আফসার আলী বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। রাজনৈতিকভাবে আমার সম্মান ক্ষুন্ন করতে এসব অপপ্রচার করছে আমার বিরুদ্ধে। দুর্গাপুর-পুঠিয়ার সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমান এ বিষয় বলেন, তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ। এসব বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris