শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় পার্টিতে নিরব কোন্দল!

Paris
Update : রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১

এফএনএস : জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা গেছেন গত শনিবার। তাঁর মৃত্যুর পর দুই দিন না যেতেই দলে মহাসচিব পদ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে এই পদ পেতে আগ্রহী। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবার অপেক্ষাকৃত তরুণ কাউকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিতে চান বলে জানা গেছে।

মহাসচিব পদ নিয়ে ইতোমধ্যে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। মহাসচিব পদের আলোচনায় নতুন করে আরও যুক্ত হয়েছেন দলের কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক ও সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ। আর তরুণ নেতাদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার নামও আলোচনায় আছে। তবে মুজিবুল হক ও রেজাউল ইসলামকে নিয়ে এখন আলোচনা বেশি হচ্ছে।

জাপার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে এ মুহূর্তে দলের কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক মহাসচিব পদের জন্য খুবই তৎপর। তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাপার দলীয় সাংসদ। তাঁর পাশাপাশি দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহও সক্রিয় হয়েছেন। তবে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হননি। এ মুহূর্তে দলে তাঁর কোনো পদও নেই।

মহাসচিব পদে ওই দুই নেতার একজনের জন্য রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকেও চেষ্টা-তদবির হচ্ছে বলে জাপায় গুঞ্জন আছে। অন্যজনের প্রতি সংসদের বিরোধী দলের নেতা ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সমর্থন রয়েছে। যদিও মহাসচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বকে নানা কিছু বিবেচনায় নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ বিষয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদের ভাষ্য, ‘পার্টির চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু আমাদের তো দায়বদ্ধতা আছে অনেক জায়গায়।’ তারুণ্যের ব্যাপারটা মাথায় রেখে দলের অতিরিক্ত মহাসচিব (রংপুর বিভাগ) ও সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া চলছিল।

এটি জানাজানি হওয়ার পর সম্প্রতি দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা, এবং দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের কলাবাগানের সুলতানা টাওয়ারে বৈঠকে করেন। সেখানে উপস্থিত নেতারা শামীম পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিযুক্ত করার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেন। তাঁরা জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে মহাসচিব করার পক্ষে। ওই বৈঠকে জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান, মুজিবুল হক ও সৈয়দ আবু হোসেন, অতিরিক্ত মহাসচিব (খুলনা) সাহিদুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহিরুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব করা হচ্ছে, এমন কথা জানাজানি হওয়ার পর সিনিয়র নেতাদের অনেকে আমার অফিসে এসেছিলেন। তাঁরা খুব উত্তেজিত। শামীম দু-তিন বছর হলো পার্টিতে এসেছেন। তাঁকে মহাসচিব করা হলে কেউ মানবে না।’ জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ভাষ্য, ‘মহাসচিব পদটি দলে একটি প্রশাসনিক পদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মহাসচিবের পদ দলের চিফ প্যাট্রন ও কো-চেয়ারম্যান পদের নিচে। আমি বুঝতে পারছি না, কো-চেয়ারম্যানরা এই পদের জন্য এত লালায়িত কেন?’

জানা যায়, মহাসচিব হতে পারেন- এমন অন্তত একডজন নেতার নাম রয়েছে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের হাতে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, কো চেয়ারম্যান ও সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব সাইদুর রহমান টেপা। এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ১৯ বছর জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা আগে একবার মহাসচিব ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তাকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেন। অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এখনো ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অতিরিক্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করা সাইদুর রহমান টেপাও আছেন সম্ভাব্য মহাসচিবের তালিকায়। সিনিয়র জুনিয়রের ব্যাপারে সাইদুর রহমান টেপার মতামত অবশ্য ভিন্ন।

তাঁর মতে, ‘মহাসচিব নিয়োগের বেলায় সিনিয়র-জুনিয়রের বিধান জাতীয় পার্টিতে নেই। এ ক্ষেত্রে পার্টি চেয়ারম্যান তার ক্ষমতাবলে যে কাউকে মহাসচিব করতে পারেন।’
জাপার গঠনতন্ত্র অনুসারে অবশ্য পার্টির চেয়ারম্যান তাঁর ক্ষমতাবলে যে কাউকে মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করতে পারেন। এ বিষয়ে মুজিবুল হক বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা আছে যে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার। দলের স্বার্থে তিনি যাঁকে নিয়োগ দেবেন, আমরা তাঁকে মেনে নেব। তবে আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি, এমন একজনকে দায়িত্ব দেন, যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন।’ উল্লেখ্য, ২ অক্টোবর জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা যান। তাঁর মৃত্যুর দুই দিন পার না হতেই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে মহাসচিব হতে তৎপরতা চালান। তাঁদের মধ্যে দলের সাবেক দুই মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও মসিউর রহমান, ঢাকার সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন, অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী উল্লেখযোগ্য। কিন্তু কেউ সরাসরি নিজের আগ্রহের কথা না বলে নানাভাবে চেষ্টা-তৎপরতা চালাচ্ছেন।

দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাপার প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর শোকসভা আছে। তাঁর শোকসভার পর যেকোনো দিন নতুন মহাসচিব নিয়োগ করা হবে। যেহেতু একমাত্র জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছাড়া বাকি সব কো-চেয়ারম্যানই মহাসচিব পদপ্রার্থী, সে কারণে দলের কোনো পর্যায়ে মহাসচিব নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হবে না। দলের চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘সময়মতো মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আমি একটা কথা খুব ক্লিয়ার বলে দিতে চাই, চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হচ্ছেন পার্টির ফেস (চেহারা)। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ইমেজের (ভাবমূর্তি) ওপরই পার্টির ইমেজ নির্ভর করে। যাকে মহাসচিব করলে দেশের মানুষ খুশি হবেন, এরকম কাউকেই করা হবে। যার বিরুদ্ধে মনোনয়ন ও পদ-পদবি বিক্রির অভিযোগ নেই এবং শিক্ষিত, তাকেই মহাসচিব করা হবে। অতীতে কারো কারো বিরুদ্ধে মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল, এ নিয়ে পার্টির ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যদি সেরকম কাউকে মহাসচিব করা হয়, তাহলে দলের নেতাকর্মীরা ও দেশের মানুষ বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখবে।’ এদিকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে দলটির সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে একজনকে মনোনয়ন দেবে জাপা। সংরক্ষিত নারী আসনে জাপার কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ নিয়েও দলে আলোচনা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপদেষ্টা ও তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরের। এর বাইরেও সাবেক একজন নারী এমপি মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন। উল্লেখ্য, মাসুদা রশীদ চৌধুরী গত ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris