বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

তীব্র গ্যাস সঙ্কট সামালে অতিরিক্ত দামে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ

Paris
Update : বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এফএনএস : দেশে গ্যাস সঙ্কট তো কমছেই না, বরং দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দেশজ গ্যাসের প্রমাণিত মজুত কমতে থাকায় গত দেড় যুগ ধরেই চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঘাটতি বাড়ছে। বর্তমানে গড়ে দৈনিক ঘাটতি ১৩০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছেছে। বর্তমানে গ্যাস সঙ্কটে দেশের শিল্প উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে কমে গেছে সিএনজিচালিত যানবাহনের চলাচল। হ্রাস পেয়েছে কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সার উৎপাদনও। গ্যাস সঙ্কটে ভুগছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও।

এমন পরিস্থিতিতে মাত্রাতিরিক্ত দামে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও জ্বালানি বিভাগ বিশ্ব বাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি সঙ্কটের কারণে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বর্তমানে দরপত্রের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে কেনা হচ্ছে তিন কার্গো এলএনজি। তার মধ্যে এক কার্গো চলতি মাসেই আনা হবে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ববাজারে বর্তমানে এলএনজির দামের ঊর্ধ্বমুখিতা লাগামহীন হয়ে উঠছে। গত ৬ মাসে পণ্যটির দাম প্রায় ৪৩৭ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এতো বেশি দামে এলএনজি কেনার রেকর্ড নেই। মূলত দেশে গ্যাস সঙ্কট সামাল দিতেই আকাশচুম্বী উচ্চমূল্য থাকা সত্ত্বেও এলএনজি কেনা হচ্ছে। তার আগে স্পট মার্কেট থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৯-২০ ডলারের মধ্যে কেনার কথা জানিয়েছিল জ্বালানি বিভাগ।

সূত্র জানায়, এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্য এলএনজির দাম গত এক সপ্তাহে প্রায় ১০ শতাংশবেড়েছে। আর দ্রুতই পণ্যটির বাজার স্থিতিশীল হয়ে ওঠার কোনোও সম্ভাবনা নেই। বরং ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও সরবরাহ সংকটে স্পট এবং ফিউচার মার্কেটে পণ্যটির দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ গত বছরও প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়েছিল ৩ দশমিক ৮৩ ডলার। কিন্তু দাম ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকায় চলতি বছরের শুরুতে পণ্যটি আমদানিতে যতি টানা হয়। স্পট মার্কেট থেকে কিনতে না পারায় জানুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় গ্যাস গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসে।

দৈনিক ৮০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের বিপরীতে ওই সময় সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ৩৯ কোটি ঘনফুট। এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় ওই সময় দেশে অন্তত ২ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যু কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। পাশাপাশি শিল্প-কারখানায়ও গ্যাসের চাপ কমে যায়। ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি) চাপে কারখানাগুলোর গ্যাস পাওয়ার কথা থাকলেও তা ৩-৪ পিএসআই মাত্রায় নেমে যায়। রেশনিং করে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও বিতরণ কোম্পানিগুলো হিমশিম খেতে থাকে।

সূত্র আরো জানায়, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়তির দিকে থাকলেও পেট্রোবাংলা চলতি বছরের জুলাইয়ে জাতীয় গ্রিডে পুনরায় এলএনজি সরবরাহ বাড়ায়। ওই সময় উচ্চমূল্যের একটি এলএনজিবাহী কার্গো কিনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তখন গ্রিডে প্রায় ৭০ কোটি ঘনফুট এলএনজির সরবরাহ করা হয়। তারপর অব্যাহতভাবে আগস্ট পর্যন্ত সরবরাহ ঠিক থাকলেও চলতি মাসের শুরুতে তা আবার ৬০ কোটি ঘনফুটে নেমে যায়।

মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রেক্ষাপটে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। ফলে আবারো বাড়তে থাকে গ্যাসের চাহিদা। আর বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি ওই চাপকে আরো বাড়িয়ে তুলে। সরকার প্রতি বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনেই সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু এবার তা করা যায়নি। বরং গ্যাস সঙ্কটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় সরবরাহ কমাতে হয়েছে। এখন দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২২৫ কোটি ২০ লাখ ঘনফুট। তার বিপরীতে পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারছে ১৩০ থেকে ১৪০ কোটি ঘনফুট।

এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি বিভাগের মোট ৫ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু উচ্চমূল্য থাকায় জুলাইয়ে এক অনুশাসনের মাধ্যমে তা স্থগিত করা হয়। তারপর থেকে এতোদিন এলএনজির আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ সংকট আরো বেড়েছে। তাতে বিপাকে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত। পরিস্থিতি সামাল দিতে কখনো আবাসিক, আবার কখনো শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ কমানো হচ্ছে। এখন পরিবহন খাতেও তার প্রভাব পড়েছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ বাড়াতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনার ভিত্তিতে বর্তমানে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্যই জ্বালানি বিভাগ ৩ কার্গো এলএনজি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। কার্গো ৩টির ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গ্রিডে এলএনজির দৈনিক সরবরাহ ১০ কোটি ঘনফুট বাড়বে। ওই হিসাবে গ্রিডে গ্যাসের দৈনিক মোট সরবরাহের পরিমাণ ৭০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়াবে। আমদানীকৃত ওই এলএনজি দিয়ে জ্বালানি বিভাগের আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরবরাহ বজায় রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

অন্যদিকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এলএনজির আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল হয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। মূলত সরবরাহ সঙ্কটে এলএনজির স্পট মার্কেট ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে। ফিউচার মার্কেটেরও একই পরিস্থিতি। উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে এলএনজির গড় মূল্য ২৬ ডলার ৫০ সেন্ট থেকে ২৭ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। কারণ বর্তমানে অনেক দেশেই এখন কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম গতি পেয়েছে। ফলে এলএনজির চাহিদাও ক্রমেই বাড়ছে। তার বিপরীতে এলএনজি সরবরাহকারী কোনো কোনো দেশ এখন সরবরাহ ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে পণ্যটির বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর শীতকালে পণ্যটির চাহিদা আরো বাড়বে।

ওই হিসেবে এলএনজির বাজারের বর্তমান অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৩ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। আর দেশে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্যাসের সংকট চলবে। তবে শীতে দেশে বিদ্যুতের প্রয়োজন কমে যায় বলে গ্যাসের চাহিদাও তখন সময় কম থাকে। বিশ্ববাজারেও ওই সময় এলএনজির দাম পড়তে থাকে। যে কারণে জানুয়ারিতে আবার স্পট মার্কেট থেকে পেট্রোবাংলার এলএনজি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সংকট মেটাতে দাম যা-ই হোক, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সংগ্রহ করা হবে। সেক্ষেত্রে বাজার বিবেচনায় দরদাম করেই এলএনজি কেনা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris