শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা মুজিবনগর সরকার আমাদের প্রেরণা : আসাদ

মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঝুঁকি ও যানজট ঠেকাতে প্রবেশাধিকার সীমিত করতে যাচ্ছে সরকার

Paris
Update : বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এফএনএস : দেশের মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও যানজট এড়াতে প্রবেশাধিকার সীতি করতে যাচ্ছে সরকার। কারণ এদেশে যেখান-সেখান দিয়ে পথচারীরা মহাসড়ক পারাপার হয়। পাশাপাশি মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ধীরগতির যানবাহনও। তাছাড়া ফসল শুকানোসহ গৃহস্থালি নানা কাজেও মানুষ মহাসড়ক ব্যবহার করে। মহাসড়কের ওপর গড়ে উঠেছে হাটবাজার, এমনকি কোথাও কোথাও মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী জায়গায় অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

এর ফলে একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও যানজট যেমন বাড়ে, তেমনি মহাসড়কের আয়ুও দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে মহাসড়ক আইন ২০২১-এ পথচারী ও যানবাহনের প্রবেশাধিকার সীমিত করতে যাচ্ছে সরকার। আইন অমান্যকারীদের জন্য জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন আকারে ওই আইনের বিল প্রকাশ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বিগত ১৯২৫ সালের হাইওয়ে অ্যাক্ট রহিত করে মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবাধ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ যান চলাচলের জন্য নতুন আইনটি বিল আকারে চলতি মাসেই জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। নতুন আইনের অধীনে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার বলে দেবে কোন সড়ক বা মহাসড়কে কে প্রবেশ করবে আর কে প্রবেশ করবে না। আর কোনটাকে এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন মহাসড়কগুলোয় টোল নেয়া হবে। মহাসড়ক আইন ২০২১-এর উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ফসল, খড় বা অন্য কোনো পণ্য শুকানো বা অনুরূপ কোনো কাজে মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে না। মহাসড়কের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থান দিয়ে পদযাত্রা করা যাবে না। এ দুই ধারার অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড।

সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া মহাসড়কে কোনো বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, তোরণ বা অনুরূপ কিছু স্থাপন করা যাবে না। ধীরগতির যানবাহন নির্ধারিত লেন ছাড়া অন্য কোনো লেনে চলতে পারবে না। সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত গতির যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চালানো যাবে না। নির্ধারিত স্থান ছাড়া কোথাও ইউটার্ন নির্মাণ করা যাবে না। মহাসড়ক বা মহাসড়ক-সংশ্লিষ্ট কোনো স্থানে নির্মাণসামগ্রাী রাখা যাবে না। গাড়ি চলাচলের জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে এমন কোনো বস্তু রাখা যাবে না। কোনো ব্যক্তি এসব বিধান অমান্য করলে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

একইভাবে নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে গবাদিপশু প্রবেশ করানো, পারাপার, চরানো, হাঁটানো বা অবস্থান করানো যাবে না। ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত হয় এমন যানবাহন চালানো যাবে না। এ দুই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ২৫ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। একই সাথে মহাসড়কের সীমানার পাশে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করলে তার বেদির উচ্চতা কোনোভাবে মহাসড়কের উপরিতলের বেশি রাখা যাবে না। মহাসড়ক, প্রান্তসীমা বা মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট কোনো অংশে ময়লা, আবর্জনা বা অন্য কোনো বস্তু নিক্ষেপ করা কিংবা স্তূপ করে রাখা যাবে না। ট্রাফিক সাইন, সাইন পোস্ট, সড়ক মার্কিং, সড়কবাতি, সড়ক নিরাপত্তাসামগ্রী, সড়ক নিরাপত্তা বেষ্টনী, সড়কের সীমানা নির্ধারণী পোস্ট, কিলোমিটার পোস্ট ইত্যাদি অপসারণ, ক্ষতিসাধন, ধ্বংস, পরিবর্তন বা কোনো বস্তু দ্বারা আচ্ছাদিত করা যাবে না।

এসব অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। আর মহাসড়কের সংরক্ষণ রেখার মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে, কোনো অংশ থেকে বালি, মাটি, পাথর বা সংশ্লিষ্ট কিছু উত্তোলন করলে সর্বোচ্চ ৫ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, নির্ধারিত মাশুল প্রদান সাপেক্ষে নাগরিক সেবা প্রদানকারী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পরিষেবার সংযোগগুলো মহাসড়কের প্রান্তসীমা বরাবর স্থাপন করতে পারবে। তবে শর্ত হচ্ছে মহাসড়কের উন্নয়ন, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের সময় প্রয়োজন হলে ওই পরিষেবা সংযোগগুলো সেবা প্রদানকারী-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে নির্দিষ্ট সময়ে অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে স্থানান্তর করবে। আইন অনুযায়ী অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাষিত বা বেসরকারি সংস্থা মহাসড়কের ভূমি ব্যবহার করে কোনো অবকাঠামো স্থাপন করতে পারবে না। কোনো প্রতিষ্ঠান এ বিধান লঙ্ঘন করলে তা হবে একটি অপরাধ।

ওই অপরাধের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিরা বা তাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শুধুমাত্র সরকার বা সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মহাসড়ক উন্নয়ন, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ, মহাসড়ক-সংশ্লিষ্ট সুয়ারেজ সিস্টেম, ড্রেন, কালভার্ট, সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করবে। বিলে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব থেকে মহাসড়কের সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসের জন্য মহাসড়ক নেটওয়ার্কের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সহনশীল টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

তাছাড়া মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সময় এ কাজের জন্য নিয়োজিতদের ব্যক্তি ও মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করতে হবে বিলে তাও বলা হয়েছে। বিলে মহাসড়ক বা সড়কের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি, অবৈধ দখল কিংবা প্রবেশমুক্ত রাখার জন্য কী করণীয় হবে এবং সার্ভে করার জন্য কতদূর মানুষের বাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে পারবে সেসব বিষয়েও বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী, শিশু ও বায়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মহাসড়কে নির্দিষ্ট স্থান ও নিরাপদে ব্যবহারের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার বিধানও রাখা হয়েছে।

এদিকে সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনটি প্রয়োগের আগে এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। কারণ আইনটিতে মহাসড়কে পথচারী ও যানবাহনের ওপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য জায়গা দিয়ে পথচারীরা চলতে বা পারাপার হতে পারবে না। কিন্তু এদেশের বেশির ভাগ মহাসড়কে ওই নির্দিষ্ট স্থান করে দেয়া নেই। ধীরগতির যানবাহন মহাসড়কে চলতে পারবে না বলা হয়েছে। কিন্তুএখনো সব মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন নেই। পথচারী ও যানবাহনের ক্ষেত্রে এ ধরনের যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী মহাসড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন করার আগেই যদি আইনটি প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তার সুফল পাওয়া যাবে না।

মহাসড়কের ওপর বা ১০ মিটারের মধ্যে হাটবাজার না করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দেশের অনেক মহাসড়কে তো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরই দীর্ঘমেয়াদে হাটবাজার ইজারা দিয়ে রেখেছে। সেজন্যই আইনটি প্রয়োগের আগে আনুষঙ্গিক সব বিষয় প্রতিপালন করা প্রয়োজন। তা না হলে এটি কেবল কাগুজে আইন হয়েই থাকবে। অন্যদিকে নতুন আইন সম্পর্কে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর জানান, ১৯২৫ সালের যে হাইওয়ে অ্যাক্ট তাতে মহাসড়ক উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের আইনি কাঠামো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

সেজন্যই আগের আইনটি রহিত করে নতুন আইন করা হচ্ছে। আইনটি ইতোমধ্যে বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। আইনটি পাস হওয়ার পর মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনার মতো কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris