বৃহস্পতিবার

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নামেই শুধু পশু হাসপাতাল

Paris
Update : শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শামীম রেজা, মচমইল : রাজশাহীর বাগমারায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কার্যক্রম। জনবল সংকটে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। কেবল নাম দিয়ে চলছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালের কার্যক্রম। সরকারের সকল সেবা জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে দেয়া হয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর। সেখানে প্রাণিসম্পদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রতি মাসে দেয়া হয় হাজার হাজার টাকার সরকারী ঔষধ। সরকার ঔষধ দিলেও সেটা সেবাপ্রত্যাশীদের মাঝে বিতরণের নেই উপযুক্ত লোক।

গরু-ছাগল সহ বিভিন্ন প্রাণির চিকিৎসা নিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে এসে পাচ্ছে না সঠিক সেবা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১১টি পদের স্থলে রয়েছে মাত্র ৪ জন। অবশিষ্ট পদগুলো প্রায় দীর্ঘ সময় ধরে শূণ্য রয়েছে। আছে বলতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার, ভি.এফ.এ. ২জন এবং ড্রেসার পদে এক জন। নেই কোন ভেটেরিনারি সার্জন। তাছাড়া ভিএলএ পদে একজন, ভি.এফ.এ পদে একজন, কম্পাউন্ডার ১ জন, এফ. এ.আই পদে ১ জন, অফিস সহায়ক ১ জন, এবং অফিস সহকারী ১ জনের পদও রয়েছে শূণ্য।

রাজশাহীর সর্ব বৃহৎ উপজেলা বাগমারা হলেও প্রাণিসম্পদ সেক্টরের অবস্থা জরাজীর্ণ। তবে সরকারী লোকবল না থাকায় সাধারণ জনগণের দ্বারা দেয়া হচ্ছে হাতে গণা কিছু লোকজনকে সেবা। ভেটেরিনারি সার্জন না থাকায় অসুস্থ পশু নিয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গেলেও সেবা না নিয়ে বাড়িতে ঘুরে যেতে হচ্ছে লোকজনকে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় প্রতি দিনই ব্যাহত হচ্ছে প্রাণির চিকিৎসা সেবা। আনিছুর রহমান, সাইদুর রহমান, সামসুদ্দীন সহ বেশ কয়েকজন গরুর মালিক বলেন, আমরা সরকারী কোন লোকজন দিয়ে গরুর চিকিৎসা করাতে পারিনা। গরুর কোন রোগ হলে বাহিরের গ্রাম্য চিকিৎককে দেখাতে হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে ১৯৩ টি। এতে দেশী জাতের গরু আছে ৭৭ হাজার ৯৯৬টি, সংকর জাতের রয়েছে ৩০ হাজার গরু, মহিষ রয়েছে ৫০টি। ছাগলের খামার রয়েছে ২৭০টি। এতে ছাগল রয়েছে ৬০ হাজার, উন্নত জাতের ছাগল রয়েছে ৭ হাজার। ভেড়ার খামার রয়েছে ৯৭টি। ভেড়া রয়েছে ৬ হাজার। গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে ২৮৫টি। হাঁসের খামার রয়েছে ৮৫টি। এতে দেশী জাতের হাঁসের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার এবং রাজ হাঁসের সংখ্যা ৬ হাজার। লেয়ার মরগীর খামার রয়েছে ৩২০টি, ব্রয়লার মুরগীর ৩৩০টি এবং সোনালী মুরগীর খামার রয়েছে ৯৫টি। এতে মুরগী রয়েছে ১৩ লাখ। কবুতরের খামার রয়েছে ২০টি। কবুতর রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার। এছাড়াও কোয়েল পাখি রয়েছে ৩ হাজার এবং টার্কি রয়েছে ১১ শত।

এদিকে যে সকল বাড়িতে ৫ টি বা ততাধিক গরু রয়েছে তাদেরকে একটি খামার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতোগুলো খামার থাকলেও সেগুলো দেখভালের কোন সরকারী পশু চিকিৎসক নাই। গ্রামাঞ্চলের মানুষের আমিষের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হয় গরু-ছাগল, হাস-মুরগী দিয়ে। এদিকে হাস-মুরগীর খামারীরাও পড়েছেন বিপাকে। খামারীদের দু একজন প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার করলেও বেশির ভাগেরই নেই পশু-পাখির রোগ ব্যাধি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান। ফলে খামারের হাস-মুরগী মরে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তাদের অভিযোগ সরকারী প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যদি ভালো ভেটেরিনারি সার্জন থাকে তাহলে সেখান থেকে পশু-পাখির বিভিন্ন রোগ ব্যাধি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারতো।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ এস.এম.মাহবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই অনেক পদ শূণ্য রয়েছে। এ সকল পদে জনবল প্রাপ্তির জন্য উপর মহলে অনেক বার বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত লোক না থাকায় সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে এ সকল পদে জনবল পেলে আর কোন সমস্যা থাকবেনা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris