মঙ্গলবার

১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের ৩২৪ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল

Paris
Update : সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার, লালপুর : উত্তরবঙ্গের ভারী শিল্প নাটোরের লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ৩২৪ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পাঁচবার দরপত্র আহব্বান করেও যখন কোন ঠিকাদার পাওয়া যায়নি, তার পরে বিএসএফআইসি ৩য় দফায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৩শ ২৪ কোটি টাকা থেকে ৯শ২৭ কোটি টাকায় উন্নীত করে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়।এই প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬শ ৩ কোটি টাকা। অস্বাভিক ব্যয় দেখে প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে নতুন করে বিস্তারিত সমীক্ষার ভিত্তিতে পুনরায় প্রকল্পটি তৈরির জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া,২০১৪ ইং সালে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির কথা উল্লেখ্য করে এবং সারা বছর চিনি পরিশধনের পরিকল্পনা তুলে ধরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস্ লিমিটেডর (নবেসুমি) নামে বাংলাদেশ চিনিও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন শিরোনামে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ২০১৪ ইং সালে পাশ হয়। ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছরের (২০১৬) ইং সালের মধ্যে প্রকল্পটি কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এই প্রকল্পটিও বাতিল করে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। জানা যায়, একে,একে পাঁচ বার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহব্বান করেও ঠিকাদার না পাওয়ায় তিন দফায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়। ইউরোপ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির কথা বলে প্রকল্পের ব্যয় ৭৩ কোটি টাকা থেকে ৩শ ২৪ কোটি টাকায় উন্নীত করে ২০১৮ ইং পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ীয়ে আবার একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়। কিন্তু আরও দুবার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহব্বান করেও সর্বনিন্ম দরদাতা ঠিক করতে পারেনি বিএসএফআইসি। এই কারণে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গেছে বলে জানা গছে। তবে প্রকল্পটি ব্যস্তবায় না হলেও এতে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি টাকা। এই অর্থ থেকে ক্রয় করা হয়েছে একটি জিপ, পাঁচটি ট্যাংক লরি এবং একটি ডাবল কেবিন পিকআপ। এবিষয়ে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম কাওসার এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন পিন্টু যৌথ ভাবে বলেন, কৃষক ও কর্মচারী সহ শ্রমিকদের স্বার্থে মিলটিকে লাভজনক অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে। এ অবস্থায় গৃহিত প্রকল্পটি বাস্তবায় করা জরুরী প্রয়োজন।
এবিষয়ে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল কাদের বলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের নিজস্ব জমি প্রায় ৫ হাজার একর জমিতে আখের আবাদ হয়ে থাকে। এতে অনেক সার প্রয়োজন হয়। সর্ম্পূণ সার বে-সরকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা লাগে। এতে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যায়। মিলের নিজস্ব সার তৈরি করখানা থাকলে, অনেক টাকা ব্যয় কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, মিলের নিজস্ব মোলাসেচ (চিটাগুড়) হয়ে থাকে।এই দিয়ে ডিস্টিলাইজার (মদ) কারখানা তৈরি করলে অনেক টাকা আয় আসবে এবং মিল লাভবান হবে। এই অবস্থায় গৃহিত প্রকল্পটি বাস্তবায় করা জরুরী প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এবিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলটিকে লাভজনক অবস্থায় আনার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রথম যখন অনুমোদন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় কম ধরার কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়েছে।
এবিষয়ে নাটোর-১লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শ্রমিক ও কর্মচারী সহ এলাকাবাসীর স্বার্থে এবং সুগার মিলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করার লক্ষ্যে প্রাকলন প্রস্তাবিত আকারে জাতীয় সংসদে উৎথাপন করি এবং বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে বুঝাতে সক্ষম হয়। পরে পরিকল্পনা কমিশন (একনেকে) সভায় প্রকল্পটি পাশ করা হয়। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার বিষয়টি খুবই দুখজনক ঘটনা। শ্রমিক ও কর্মচারীদের সহ এলাকার স্বার্থে এবং মিলকে লাভজনক অবস্থায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্পটি পুনরায় নতুন করে বাস্থবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এবিষয়ে নাটোর-১লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, প্রকল্প ব্যয় বর্তমান বাজারেরর সঙ্গে সাম্যঞ্জস না হওয়ায় তা বাতিল হয়েছে। এ মিলের অবকাঠামো ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে লোকসান কাটিয়ে লাভজনক করতে হবে। নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির ব্যপারে সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris