বুধবার

১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ

Paris
Update : শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এফএনএস : মহামারি করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের কারণে দুই দফা পেছানোর পর আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরইমধ্যে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা-প্রচারণা। যদিও ভোটের প্রচারে প্রার্থীরা সময় পেয়েছেন মাত্র একদিন। সিলেটের তিনটি উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্জুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা নির্বাচনের আগে-পরে দু’দিন করে এবং ও নির্বাচনের দিন মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে এমনটিই জানা গেছে।

এদিকে ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল, প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে বেড়ে যায় স্নায়ুচাপ। গতকাল শুক্রবার শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের মধ্যে চলছিল ভোট নিয়ে হিসাব-নিকাশ, চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও দলটির সাবেক সংসদ সদস্য ও দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমদ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা তার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারে না থাকলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, শেষমেশ বিএনপির নীরব ভোট শফি আহমদের বাক্সেই যাবে। আবার নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের একটা অংশ মনে করছে, বিএনপির ভোট আতিকুর রহমান আতিকের লাঙ্গল প্রতীকে পড়তে পারে। উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিব।

আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী। জুনায়েদ শুরু থেকেই তেমন প্রচারে না থাকলেও আটঘাট বেঁধে মাঠে আছেন অন্য তিন প্রার্থী- হাবিব, আতিক ও শফি। শফির ওপর দল নাখোশ থাকায় স্থানীয় পর্যায়ের নেতা আর গোষ্ঠীভিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে অন্য দুই প্রার্থী হাবিব ও আতিক চেষ্টা চালাচ্ছেন, বিএনপির ভোটও নিজেদের পক্ষে টানতে। প্রার্থী হওয়ার কারণে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে শফি আহমদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। শুরুর দিকে শফির পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির কয়েকজন নেতা প্রচারে অংশ নেন। পরে কঠোর অবস্থানে থাকা বিএনপি ওই নেতাকর্মীদেরও বহিষ্কার করে।

এরপর শফির পক্ষে প্রকাশ্যে বিএনপির আর কাউকে দেখা যায়নি। অনেকটা একাই ভোটের প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। সিলেটের বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রচারের মতো ভোটের মাঠেও নীরব থাকবেন তাদের দলের নেতা-কর্মীরা। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বিএনপির কেউ। এ সরকারের অধীনে সকল নির্বাচনই তারা বর্জন করবেন। তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এ তিন দলেরই এখানে বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে মনে করা হয়। একসময় সিলেট-৩ আসন ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। টানা তিনবার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির আবদুল মুকিত খান।

২০০১ সালের নির্বাচনে মুকিত খানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিলেও সিলেট-৩ আসন উন্মুক্ত রাখা হয়। সে নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। আতিককে আলাদা প্রার্থী দেয় জাতীয় পার্টি। আর বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শফি আহমদ। আতিক-শফি দুজনকে হারিয়ে সেবার বিজয়ী হয়েছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও আসনটি নিজের দখলে রাখেন কয়েস। যদিও দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি।

সবশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হলেও কয়েসের সঙ্গে পেরে ওঠেননি শফি আহমেদ চৌধুরী। তবে মহাজোটের সমীকরণে পড়ে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ আসনে আর প্রার্থী হননি আতিক। ৪ সেপ্টেম্বরের উপ-নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী না থাকায় বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা কাকে ভোট দেবে, এমন প্রশ্নে শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছেন। নেতারা মাঠে না নামলেও কর্মীরা আমার পক্ষে প্রচারে আছেন। তারা আমাকে ভোটও দেবেন। শফি আহমদ এমন দাবি করলেও ভোটের মাঠের বাস্তবতায় ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। একে তো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন, তার ওপর প্রচারের শুরুর দিকে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে তাদের রোষানলে পড়েছেন।

ফলে দলের ভোট ব্যাংকই এবার হারাতে হতে পারে শফি আহমদকে। এছাড়া স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ অনেক দিন ধরেই প্রবীণ এ নেতার বিপরীত অবস্থানে। সবশেষ নির্বাচনে এ আসনে শফির পাশাপাশি দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার আবদুস সালাম ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এম এ কাইয়ূম চৌধুরী। বিএনপির এ ক্ষুব্ধ ও নিষ্ক্রিয় অংশকেই নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন হাবিব ও আতিক। নেতারা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকলেও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছেন তারা। স্থানীয়রাও মনে করছেন, বিএনপি অংশের ভোট যে যত বেশি টানতে পারবে, সে-ই এগিয়ে থাকবে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, সব এলাকায় লাঙ্গলের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে মানুষ আমার পক্ষে আছেন। আশা করি সবার ভোটই আমি পাবো। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। সিলেট-৩ আসনের মানুষ ৪ সেপ্টেম্বর উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রতীক নৌকায় ভোট দেবেন। তবে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেছেন, এ ভোট চোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিএনপি এ উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আমাদের নেতা-কর্মীরাও ভোটকেন্দ্রে যাবে না। এরইমধ্যে নেতা-কর্মীদের সে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি। ফলে কারো পক্ষে বিএনপির ভোট যাচ্ছে, তা ভাববার কোনো সুযোগ নেই।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris