এফএনএস : বাংলাদেশ রেলওয়ের জনবল কাঠামোর বিপুলসংখ্যক পদই বিলুপ্ত করা হচ্ছে। বিগত ১৯৮৪ সালে এনাম কমিটি বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৬৮ হাজার ৫২৪টি পদ নির্ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে নতুন করে আরো ১৪ হাজার ৩৬৮টি পদ সৃষ্টি করা হয়। ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট জনবল ৮২ হাজার ৮৯২-এ দাঁড়ায়। কিন্তু ২০১৯ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিকায়ন ও তার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ওই জনবল কাঠামোর অপ্রয়োজনীয় পদ বিলুপ্তি এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃজনের সুপারিশ করা হয়েছিল। ওই সুপারিশের আলোকে গত বছরের আগস্টে রেলওযের জনবল কাঠামোতে ১৯৫টি বিসিএস ক্যাডার পদ স্থায়ীভাবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।

তাছাড়া অস্থায়ীভাবে ৫ হাজার ৩৪৪টি নন-ক্যাডার পদসহ মোট ৫ হাজার ৫৩৯টি নতুন পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি বিদ্যমান ৮২ হাজার ৮৯২টি পদ হতে ১০২টি বিসিএস ক্যাডার পদসহ মোট ৪০ হাজার ৭২৮টি পদ বিলুপ্ত করে ৪৭ হাজার ৭০৩টি পদের বিপরীতে রেলের সংশোধিত জনবল কাঠামো অনুমোদনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়। পরবর্তীতে সম্মতির জন্য তা অর্থ বিভাগে পাঠানো হলে ৪৭ হাজার ৭০৩ পদ থেকে কমিয়ে ৪৭ হাজার ৬৩৭টি পদের অনুমোদন দেয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিকায়নে জনবল কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সেজন্যই বিদ্যমান ৮২ হাজার ৮৯২টি পদ থেকে ১০২টি ক্যাডার পদসহ মোট ৪০ হাজার ৭২৮টি পদ বিলুপ্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সৃজন করা হচ্ছে ১৯৫টি ক্যাডার পদসহ ৫ হাজার ৪৭৩ নতুন পদ। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি পুরনো-নতুন মিলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ৪৭ হাজার ৬৩৪ জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে। তবে ক্যাডার পদ স্থায়ীভাবে সৃজন ও পদ বিলুপ্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুল এবং প্রয়োজনে নিয়োগবিধিতে সংশোধনী আনার পরামর্শ দিয়েছে সচিব কমিটি। তাছাড়া বিলুপ্তির জন্য সুপারিশ করা পদে জনবল কর্মরত থাকলে ওই জনবলের অবসর গ্রহণ, স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ, চাকরিচ্যুতি, পদত্যাগ, মৃত্যুজনিত বা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হলে বিলুপ্তির আদেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমানে তীব্র জনবল সঙ্কটে ভুগছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেই একটি সিন্ডিকেট মামলা ঠুকে দেয়। তাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে যায়। ওই কারণে বিভিন্ন পদ বছরের পর বছর ধরে খালি আছে। এ নিয়ে সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এবং জনবল সঙ্কট সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়। বর্তমানে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে সর্বস্তরর লোকবল সঙ্কট রয়েছে। বর্তমানে রেলওয়ের শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। তার মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০ হাজারের ওপরে এবং দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণিতে বাকি শূন্যপদ।

সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলওয়ে থেকে ১ হাজার ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসর নিয়েছে। তার বিপরীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৭৮ জন। তাদের মধ্যে কর্মচারীর সংখ্যা ৫৪৪ জন। আর সর্বশেষ দুই অর্থবছরে রেলওয়ের জনবল ২ হাজার ২৮০ জন কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেলওয়ের শূন্যপদ ছিল ১১ হাজার ৯৪১টি। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে ১৩ হাজার ১৭৮-এ উন্নীত হয়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শূন্য হয় আরো ১ হাজার ৪৩টি পদ।

ওসব পদের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে খালি আছে স্টেশন মাস্টার (এসএম), সহকারী স্টেশন মাস্টার (এএসএম), পয়েন্টম্যান, গেটম্যান ও সান্টিংম্যানের মতো গুরুপূর্ণ পদ এদিকে এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ড. ভুপেন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সচিব কমিটি রেলের আধুনিকায়ন ও কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অপ্রয়োজনীয় পদ বিলুপ্তি ও প্রয়োজনীয় পদ সৃজনসহ নতুন জনবল কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে। এখন আরো কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। ওসব প্রক্রিয়া শেষে নতুন জনবল কাঠামো কার্যকর করা হবে।