শুক্রবার

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! বাগমারায় এক স্কুলের সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এলাকাছাড়া! বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চার নেতা কখনো মৃত্যু ভয় করেননি : লিটন প্রেমিককে কুপিয়ে জখম করল প্রেমিকা! গোদাগাড়ীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ২ আসামি গ্রেপ্তার এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশ সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তিন প্রতারক রাজশাহীতে গ্রেফতার পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন পুত্রবধূ! রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আরডিএ’র জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ! সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা

সেই মা-বাবাকে হাইকোর্ট যা বললেন

Paris
Update : বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এফএনএস : দুই শিশুকে নিয়ে তাদের মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাবা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের অনড় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনারা একটু পজিটিভলি ভাবুন, আমরা চাই শিশু দুটি পারিবারিক পরিবেশে থাকুক। শিশু দুটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার বিষয়ে বাঙালি বাবা ও জাপানি মায়ের মতামত নিয়ে শুনানিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালতে মায়ের পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির ও বাবার পক্ষে অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ শুনানি করেন। শুনানির একপর্যায়ে ওই দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাবার কাছে নাকি মায়ের কাছে থাকতে চায় সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে একান্তে কথাও বলেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতিদের খাস কামরায় প্রায় আধাঘণ্টা শিশুদের সঙ্গে কথা বলার পর আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, আমরা চাই শিশুরা পারিবারিক পরিবেশে থাকুক। আপনারা সবাই বিষয়টি পজিটিভলি দেখুন। এর আগে গত ১৯ আগস্ট শিশুসহ তার বাবা ও ফুফুকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

আদেশ অনুযায়ী দুই মেয়েসহ তাদের মা-বাবা এবং ফুপু গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টে উপস্থিত হন। এরপর দুইপক্ষের আইনজীবীর শুনানি শুরু হয়। একপর্যায়ে আইনজীবীসহ দুই মেয়ে এবং তাদের মা-বাবা ও ফুপুকে খাস কামরায় ডেকে সবার বক্তব্য শোনেন আদালত। শুনানির শুরুতে মায়ের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতকে বলেন, শিশুদের মা ঢাকার বারিধারায় একটি বাসা ভাড়া করেছেন। আমরা চাই ওই বাসায় বাচ্চারা মায়ের সাথে থাকুক। বাচ্চাদের বাবাও তার মতো করে ওই বাসায় আসুক-থাকুক। কারণ, এই কয়দিনে বাচ্চাদের মধ্যে যে একটা ট্রমা তৈরি হয়েছে তা কাটুক।

তারপর আপনারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো আদেশ দেন। তবে বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম শুনানিতে বলেন, বাচ্চারা বাবার বাসায় থাকুক। মা বাচ্চাদের দেখতে আসুক কোনো সমস্যা নেই। মা যে বাসাটার কথা বলছে সে এরিয়ায় বাচ্চাদের থাকার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। শুনানিতে দুপক্ষের এমন দ্বিমুখী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে আদালত বলেন, আমরা চাই বাচ্চা দুটি পারিবারিক পরিবেশে থাকুক। আপনারা একটু পজিটিভলি ভাবুন। এরপর বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া আদালতকে বলেন, আমরা তাহলে আবার দু-পক্ষ একটু বসে সিদ্ধান্ত নিই। তারপর আপনাকে জানাই।

আপনি তখন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এরপর আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য বেলা ৩টায় সময় নির্ধারণ করেন। দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট জাপানি নারীর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে দুই মেয়েসহ তাদের বাবা ও ফুপুকে আগামী ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ওই দুই মেয়েকে নিয়ে বাবা আগামী ৩০ দিন বিদেশ যেতে পারবেন না বলেও নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। এরপর দুই মেয়েকে বাবার হেফাজত থেকে সিআইডি উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে।

বিষয়টি গত ২৩ আগস্ট মেয়েদের বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চের নজরে আনেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখার নির্দেশ দেন। এ সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাবা শিশুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন আদালত। সে অনুযায়ী বা-মা শিশুদের সঙ্গে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সময় দেন। একপর্যায়ে দুইপক্ষের আইনজীবী আদালতে এসে জানান, শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

তখন আদালত উভয় পক্ষকে বলেন, কোথায় থাকলে ভালো হয় সে বিষয়ে সমঝোতা করে সিদ্ধান্ত জানাতে। তবে ৩০ আগস্ট রাত পর্যন্ত বাবা-মা এ বিষয়ে একমত হয়ে কোনো সমঝোতায় আসতে পারেননি বলে জানান দুইপক্ষের আইনজীবী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাবা-মা একমত হয়ে আদালতে আবেদন দাখিল করলে জাপানি দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার আদেশ দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্ট। ওইদিন শিশুদের বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক আদালতে বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দুই শিশুর কষ্ট হচ্ছে। শিশুদের বাবা হোটেলের সব খরচ বহন করবেন। আমরা শিশুদের হোটেলে রাখার জন্য আবেদন করেছি।

আমাদের আবেদনটি শুনুন। তখন আদালত বলেন, শিশুদের মা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নিয়ে কোনো অভিযোগ করছেন না। তারা বলছেন, শিশুরা ভালো আছে। আপনারা উভয়পক্ষ যদি শিশুদের হোটেলে বা কোনো বাসায় রাখতে একমত হন, তবেই আমরা শিশুদের হোটেলে রাখার বিষয়ে আদেশ দিতে পারি। এর আগে বুধবার জাপানি দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সুবিধামতো রাজধানীর যেকোনো একটি উন্নতমানের হোটেলে রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তাদের বাবা। শিশুদের বাবার পক্ষে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ এ আবেদন করেন। তার আগে গত ২২ আগস্ট ওই দুই শিশুকে হেফাজতে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তখন ওই দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। তারও আগে ১৯ আগস্ট তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। গত ১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যাশিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই কন্যাশিশুকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।

এর আগে আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris