শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জুলহাস-তনয় হত্যাকান্ডে মেজর জিয়াসহ ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ

Paris
Update : বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এফএনএস : বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু লোকনাট্যদলের শিশু সংগঠন পিপলস থিয়েটারের কর্মী মাহবুব তনয় হত্যা মামলায় চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়াসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশও দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়া, আকরাম হোসেন, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ। এদের মধ্যে মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক রয়েছেন।

মামলার অন্য দুই পলাতক আসামি সাব্বিরুল হক চৌধুরী ও মওলানা জুনায়েদ আহম্মেদকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, বাংলাদেশের জন নিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে স্বাধীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত আসামিদের অভিন্ন অভিপ্রায় ছিল জুলহাস মান্নান ও তনয়কে হত্যা করা। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত আসামিদের কারো ভূমিকা ছোট বা বড় করে দেখার সুযোগ নেই।

এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জুলহাস মান্নানের ভাই বলেছেন, ঘাতকরা আমার অজ্ঞাত। আমার সন্তোষ বা অসন্তোষ প্রকাশের অবকাশ নেই। রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী জুলহাসের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমনের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভাইকে অজ্ঞাত পরিচয় দূষ্কৃতিকারীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বাদী হিসেবে আমি তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত বিচার চেয়ে মামলা করি। দীর্ঘদিন পর গতকাল মঙ্গলবার রায় হয়েছে। ঘাতকরা আমার অজ্ঞাত। আমি কাউকে সুনির্দিষ্ট করে অভিযুক্ত করতে পারিনি। রায়ে আমার সন্তোষ বা অসন্তোষ প্রকাশের অবকাশ নেই।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি বলে মন্তব্য করে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ বি এম খায়রুল ইসলাম জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তারা। তিনি বলেন, ওই মামলার এজাহারে প্রথমে তাদের নাম ছিল না। পরে ওই ছয়জনকে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। বিচারক সংক্ষিপ্ত রায় পড়েছেন। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

অন্যদিকে সমকামিতার অভিযোগেই হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু। মামলার রায়ের বিবরণ দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু বলেন, জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয় ছিলেন একটি সমকামী সংগঠনের নেতা। তাই তাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা। সে অনুযায়ী তারা ওই দুইজনকে হত্যা করে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আইনে সমকামিতা নিষিদ্ধ। তাদের বিচার করার জন্য আইন আছে। সেই আইনে সমকামীদের বিচার হবে। কিন্তু কেউ সমকামিতা করলে তাকে হত্যা করা যাবে না।

আদালতে আসামিদের অসদাচরণ নিয়ে তিনি বলেন, আদালতে যখন বিচারক রায় পড়ছিলেন আসামিরা হাসাহাসি করছিলেন। এর আগে কাঠগড়ায় হাতকড়া পরা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা বা ভয় ছিলো না। এ থেকেই বোঝা যায় তারা অপরাধের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত ছিলেন। এই আসামিরা গ্রেপ্তারের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

এর আগে ২৩ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রায় ঘোষণার জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করেন। মামলায় বিভিন্ন সময়ে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে ঢুকে জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় জুলহাসের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন বাদী হয়ে হত্যা মামলা এবং সংশ্লিষ্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শামীম অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১২ মে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় দায়ের করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris