বুধবার

১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিপুল বকেয়া বিদ্যুৎ বিলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিতরণ কোম্পানি

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। ফলে ওসব প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে আছে। বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রায় পৌনে ২ হাজার কোটি টাকা। বিতরণ কোম্পানিগুলো বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে বারবার চিঠি দিলেও বিল পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত গড়িমসি করে যাচ্ছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। ফলে কোম্পানিগুলোর পক্ষে নিজ অর্থায়নে বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবার মান বাড়ানো দুরূহ হয়ে উঠছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ৬টি বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত। বর্তমানে সরকারি ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ওসব বিতরণ কোম্পানির ১ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। ওই পাওনা পরিশোধে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নানা সময়ে তাগাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তা পরিশোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল নিয়ে আশঙ্কা বেশি। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনা বেসরকারি পর্যায়ে বকেয়া থাকা মোট বিলের দুই-তৃতীয়াংশ। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অনীহা রয়েছে।

সূত্র জানায়, হালনাগাদকৃত তথ্যানুযায়ী সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলোর মোট পাওনা ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি। তার মধ্যে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছে পাওনা ৫ হাজার কোটি টাকা। টাকার অংকে বেসরকারি খাতের কাছে পাওনা বেশি। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলনামূলক বেশি সময় ধরে বিলগুলো বকেয়া রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তিন-চার বছর ধরে পাওনা বিল আটকে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলো বিল পরিশোধ করছে না।

সূত্র আরো জানায়, বিতরণ কোম্পানিগুলো সরকারি পর্যায়ে বকেয়া মোট বিলের মধ্যে শুধুমাত্র ৮ প্রতিষ্ঠানের কাছেই পাবে ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা পাবে। আর ৪৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে বাকি ২৩২ কোটি টাকা। তার মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে। বিভাগটির কাছ থেকে মোট ৮৬৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাবে বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই বিভাগের অধীন বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়নের কাছে ওসব বিল পাওনা রয়েছে। বিল পরিশোধে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা বিল পরিশোধ না করলে তাদের বরাদ্দ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিলে তার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কোনো দায় থাকবে না বলেও জানানো হয়েছে। বিল বকেয়া রাখার দিক থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরই রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ বিল বাবদ মন্ত্রণালয়টির কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলোর মোট পাওনা ২৫০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে বকেয়া রয়েছে ১১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তবে ইতিমধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বকেয়া বিল পরিশোধে তৎপর হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়। তার মধ্যে কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে বিল পরিশোধ শুরুও করেছে। তবে তার সংখ্যা খুবই কম। আর বাকিরা বিলের বিষয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কোনো ধরনের আশ্বাস দেয়নি।

এদিকে এ বিষয়ে বিদ্যুতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার বছরের পর বছর ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। তার ওপর বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়লে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মূলত বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপরই বিদ্যুতের অবকাঠামো, সেবার মানসহ সব বিষয় নির্ভর করে। আগে বকেয়া বিলের পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বেশি ছিল। এখন ধীরে ধীরে তা কমে এসেছে। বিল আদায়ে বিদ্যুৎ বিভাগও তৎপরতা বাড়াচ্ছে। আর তা সফল হলে বকেয়ার পরিমাণ কমে আসবে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কিছুটা হলেও বকেয়া বিল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া সরকারি বকেয়া বিল আদায়ে খুব বেশি সমস্যা হবে না। বিশেষ করে মিউনিসিপ্যালিটি বিলগুলো দ্রুতই পাওয়া যাবে। মূলত কভিডের কারণে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তবে নিশ্চিত তা পাওয়া যাবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris