শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে গমের বাজারে অস্থিতিশীলতা দেশেও ঊর্ধ্বমুখী আটা-ময়দার দাম

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : বাজারে আটা-ময়দার দাম ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। বিগত কয়েক সপ্তাহে দেশের বাজারে আটা ও ময়দার দাম মণপ্রতি কয়েকশ টাকা বেড়েছে। মহামারীর প্রাদুর্ভাব পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে আঘাত হেনেছে। ফলে গমের আন্তর্জাতিক বাজার এখন পুরোদমে অস্থিতিশীল। তাছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়ায় গমের বৈশ্বিক উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। আর পূর্বাভাস রয়েছে আগামী উৎপাদন মৌসুমেও একই পরিস্থিতি বজায় থাকার। বৈশ্বিবাজারে গমের বাজারের অস্থিতিশীলতার দেশের খাদ্য ও নিত্যপণ্যের বাজারেও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। যেজন্য এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে গম ও গমজাত পণ্য আটা-ময়দার দাম। বাজার সংশ্লিষ্ট এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চাহিদার চেয়ে গত অর্থবছরে দেশে কম গম আমদানি হয়েছে। ফলে বাজারে এখন গমের সরবরাহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তারই প্রভাব আটা-ময়দার উৎপাদন খরচে পড়েছে। বাজারে গমের সরবরাহ ঘাটতির কারণে পণ্যটির দাম মণে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে। দীর্ঘ সময় লকডাউনে নিজস্ব মিলে ভেঙে আটা বা ময়দা উৎপাদন করে বাজারে পাইকারি দরে বিক্রিকারী ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা প্রায় বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন লকডাউন উাার বাজারে গম আমদানি কম থাকায় মিলে ভাঙানোর মতো পর্যাপ্ত গম পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম খুবই বেশি। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে গমের সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। তাছাড়া করোনার সময় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গম আমদানির ঝুঁকি নেয়নি। আবার যেসব দেশে গম উৎপাদন হয়, তারাও গম সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে বাজারে গমের সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত এক মাস ধরেই গমের দাম মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) গড়ে ২০০ টাকা বেড়েছে। সর্বশেষ ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) পদ্ধতিতে কানাডা থেকে আমদানীকৃত ভালো মানের গম প্রতি মণ ১ হাজার ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ভারত থেকে আমদানি করা গমের দামও। বর্তমানে ভারতীয় গম বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকায়। আর ভোগ্যপণ্যের আরেক বড় পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে কানাডীয় গম ১ হাজার ৩৮০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি মণ ইউক্রেনীয় গম ১ হাজার ৪০ ও ভারতীয় গম ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে কানাডীয় গমের দাম বেড়েছে মণে ৩০০ টাকা। তাছাড়া ইউক্রেনীয় গমের দাম মণপ্রতি ১৪০ টাকা ও ভারতীয় গমের দাম বেড়েছে মণে ৫০-১৫০ টাকা।

সূত্র জানায়, গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক বেড়েছে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি আটা ও ময়দার দামও। গত দুই সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে আটার দাম মণপ্রতি প্রায় ২০০-২৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৮০ থেকে ১ হাজার ৪২০ টাকায়। আর ময়দার দাম মণপ্রতি প্রায় ২৫০-৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে বর্তমানে ভালো মানের আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে সেখানে পণ্যটির দাম বেড়েছে বস্তায় ১৫০ টাকা। তবে কিছুটা নিম্নমানের আটা প্রতি বস্তা ১ হাজার ২৮০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। আর ভালো মানের ময়দা এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ৫০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

তবে সমপরিমাণের কিছুটা নিম্নমানের ময়দা বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি আড়াই হাজার টাকায়। খোলা আটা-ময়দার দাম বাড়ায় বাজারে এখন মোড়কজাত আটা-ময়দার দামও ঊর্ধ্বমুখী। গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে ব্র্যান্ডেড আটা-ময়দার দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী গত এক অর্থবছরের ব্যবধানে দেশে গম আমদানি ১৫ শতাংশের বেশি কমেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশে গম আমদানি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৪৩ লাখ টন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। আর ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে মূলত কানাডা, ভারত ও রাশিয়ান গমের চাহিদাই বেশি। তার মধ্যে গম থেকে আটা-ময়দা তৈরিতে কানাডীয় গমই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘদিন গমের ডিও লেনদেন কিছুটা স্থবির থাকলেও মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বর্তমানে হঠাৎ করেই গমের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

সারা দেশে বর্ষা মৌসুমের পর আটা ও ময়দার চাহিদা বেড়ে যায়। শীত মৌসুমে পিঠা-পুলি তৈরি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণের কারণেও আটা-ময়দার চাহিদা বেশি থাকে। যে কারণে বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাড়তি চাহিদা সামনে রেখে মজুদ ও ডিও বেচাকেনা বেড়ে গেলে দামও বেড়ে যায়। তাছাড়া সংকটকালে কভিড ঝুঁকিতে বন্ধ থাকা দোকানপাট ও পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়ার কারণে হঠাৎ করেই আটা-ময়দার চাহিদাও বেড়ে গেছে। কারণ প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর হওয়ায় গমের বাজার চাইলেই নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে দেশে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী জানান, গমের সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেকারি পণ্য উৎপাদন, ফাস্ট ফুড ও হোটেল-রেস্তোরাঁয়। ২০২০ সালের মার্চের পর প্রায় দেড় বছর দেশে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে লকডাউনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। যে কারণে ব্যবসায়ীরাও আমদানি কমিয়েছেন। তাছাড়া লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী গম উৎপাদন কমে যাওয়ায় দামও ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে। সার্বিকভাবেই দেশে গমের সাময়িক সরবরাহ সংকট রয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris