শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে নারীরাই বেশি ব্যবহার করছেন ইন্টারনেট

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১

আরা ডেস্ক : বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার পর থেকে নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মের কারণে ভিডিও কল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং অনলাইন ভিডিও দেখার পরিমাণ বেড়েছে বলে উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়। জিএসএমএ মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২১ থেকে জানা গেছে, মহামারির সময়ে প্রায় ৬২ শতাংশ নারী মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে মোবাইলে ফ্রি ভিডিও দেখেন এমন নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা নয় শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে ২০২০ সালে। স্বল্প পরিসরে আটটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে গত ৪ অক্টোবর ২০২০ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২১ এর মধ্যে এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করা হয়েছে।

মোবাইল ইন্টারনেট বাংলাদেশি নারীদের উপকারে এলেও বেশিরভাগ নারী এই সেবার বাইরে রয়েছেন। সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নারীদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা গত বছরের তুলনায় মাত্র তিন শতাংশ বেড়ে ১৯ শতাংশ হয়েছে। যেখানে পুরুষদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে শতকরা ৩৩ শতাংশ।

সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দেশের ৪৭ শতাংশ নারী মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কে জানলেও ব্যবহার করছেন না। বয়স ভেদে মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের পরিমাণ কম বা বেশি রয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ইন্টারনেট গ্রাহকদের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের পরিমাণ ১৭ শতাংশ। যেখানে ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই হার ৪৬ শতাংশ। মহামারিতে নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বাড়লেও স্মার্টফোনের মালিকানা বাড়েনি। ২০১৯ সালে ২১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্মার্টফোন ছিল।

২০২০ সালেও সংখ্যাটি অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে ২০২০ এ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। ২০১৯ এ সংখ্যাটি ছিল ৩৬ শতাংশ। মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কে নারীদের মধ্যে সচেতনতার পরিমাণ গত কয়েক বছরে অভাবনীয় হারে বেড়েছে। ২০২০ এ সচেতনতার হার ছিল প্রায় ৬৬ শতাংশ ছিল, যা ২০১৭ সালে ছিল ৩৪ শতাংশ। পুরুষদের মাঝে ২০২০ এ সচেতনতার হার ছিল ৭৫ শতাংশ, যা ২০১৭ সালের ছিল ৫০ শতাংশ। ২০২০ এ মাত্র ১৪ শতাংশ নারীর মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের অ্যাকাউন্ট ছিল এবং পুরুষদের মধ্যে এই হার ৪০ শতাংশ। তবে এই হার ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। দেশ দুটিতে যথাক্রমে চার ও পাঁচ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী এই ধরণের অ্যাকাউন্টের গ্রাহক।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মানুষ ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় দেশে ডেটা (মোবাইল ইন্টারনেট) ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। ‘তিনি বলেন, ‘অনেক নারী এখন তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়াও, দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ফোরজি নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ গ্রামীণ নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা না বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ দাম এবং এ ধরণের ফোন ব্যবহারে পারদর্শিতার অভাবকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নারীরা স্মার্টফোন ব্যবহারে পারদর্শী না। এ ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে।’ তিনি জানান, ২০১৭ সালে সরকার দেশে মোবাইল ফোন সংযুক্তিকরণ ও উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার পর থেকে দেশে স্মার্টফোনের দাম নিম্নমুখী। মন্ত্রী বলেন, ‘তবে স্মার্টফোনের দাম আরও কম হওয়া উচিত।

আমার ধারণা, দুই বছরের মধ্যে স্মার্টফোনের দাম আরও কমে আসবে।’ ইতোমধ্যে গত জুনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো এক কোটি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুনে গত বছরের তুলনায় ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যা ১৮ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রাক-মহামারি সময়ের তুলনায় এখন ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। সে হিসেবে বলা যায়, মহামারির কারণে ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যা ৪৩ লাখ বেড়েছে। বিটিআরসির তথ্যে আরেকটি মাইলফলকের কথা উল্লেখ ছিল। জুনের শেষে মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১২ দশমিক নয় কোটি, যে সংখ্যাটি এক মাস আগে ছিল ১১ দশমিক ৭৩ কোটি। জুনে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৬৪ কোটি হয়েছে। যা মে মাসে ছিল ১৭ দশমিক ৫২ কোটি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris