এফএনএস : তালেবান বাহিনী আফগানিস্তানের বড় দুটি শহরের দখল নেওয়ার খবরের মধ্যেই কাবুল থেকে দূতাবাস খালি করার তোড়জোড় শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দুই দশকের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তাদের সর্বশেষ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তালেবান তখন একের পর এক এলাকা দখল করে নিয়ে এগোচ্ছে রাজধানী কাবুলের দিকে। বৃহস্পতিবার তারা দেশটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার ও হেরাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে খবর এসেছে। তালেবান বাহিনীর একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, বড় শহরগুলোর পতনে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে আফগানরা তালেবানকে ‘স্বাগত জানাচ্ছে’।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। বেশিরভাগ কর্মীকে সরিয়ে নিয়ে সেখানে শুধু মূল কূটনৈতিক উপস্থিতি থাকবে। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, দূতাবাস থেকে কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র। অগাস্টের শেষ নাগাদ এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করার আশা করছেন তিনি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কাবুল শহর থেকে সরিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে নেওয়ার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে বলে পশ্চিমা কূটনীতিকদের একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং দেশটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছেন। এ সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের জন্যও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য বলেছে, তাদের নাগরিক এবং আফগান দোভাষীদের সরিয়ে আনতে ৬০০ সেনা মোতায়েন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি তাদের সব নাগরিককে অবিলম্বে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বলেছে।
আর জাতিসংঘ হুঁশিয়ার করে বলেছে, তালেবান বাহিনী কাবুল দখল করে নিলে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, কাবুলে দূতাবাসের কর্মী কাটছাঁটের এই ঘোষণা আসার আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে ধারাবাহিক বৈঠক ও ফোনকল করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। বাইডেন প্রশাসনের মূল্যায়ন হচ্ছে ২০০১ সালের পর তালেবানের সামরিক শক্তি এখন সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। এমনকি ওই গোষ্ঠীর সাফল্যও খুব দ্রুত আসছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কর্মকর্তার কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের মূল্যায়ন হচ্ছে, কাবুল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে- তালেবানের হাতে পতনের সম্ভাবনাও রয়েছে- কয়েক সপ্তাহের মধ্যে না হলেও, কয়েক মাসের মধ্যেই তা হতে পারে।
গজনির পুলিশ সদরদপ্তরে এখন তালেবান পতাকাগজনির পুলিশ সদরদপ্তরে এখন তালেবান পতাকা’গভীর উদ্বেগ’ সিএনএন লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত করেন এবং এরপরই প্রেসিডেন্ট দূতাবাস থেকে কর্মী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, “নিরাপত্তা পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে একটি অপরিহার্য কূটনৈতিক উপস্থিতিতে দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “সবসময়ই আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে আফগানিস্তান এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের যেসব নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
যেমনটি আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, তালেবানের সামরিক আগ্রাসন এবং এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতা এবং আফগানিস্তানজুড়ে অস্থিতিশীলতা গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।” পেন্টাগনের মুখপাত্র কিরবি জানান, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মেরিনের দুটি ও যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিন কাবুল পৌঁছাবে এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করতে সহায়তার জন্য। তারা সেখানে এরইমধ্যে দায়িত্ব পালনরত ৬৫০ জন সেনা সদস্যের সঙ্গে যোগ দেবেন। এই পদক্ষেপকে ‘যৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে প্রাইস বলেন, মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ‘এটা কূটনৈতিক স্থাপনা পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার পূর্ব-প্রস্তুতি’ – এমন ধারণাও নাকচ করেছেন তিনি।
প্রাইস বলেন, “এটা পূর্ণ প্রত্যাহার নয়। দূতাবাস খোলা থাকবে এবং আফগানিস্তানে আমরা আমাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।” দূতাবাস কাবুল শহর থেকে সরিয়ে বিমনবন্দরে নেওয়া হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন তিনি। পরিস্থিতির এমন অবনতির পর বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বদলাবেন কি না, সেরকম কোনো ইঙ্গিত তার কর্মকর্তারা দেননি। কিরবি বলেছেন, দূতাবাসের কর্মী প্রত্যাহারের কাজটি সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ৩১ আগস্টের মধ্যেই শেষ করা হবে।