শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরীমণি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন প্রথম স্বামী

Paris
Update : রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : স্মৃতি এখন আর আমার স্মৃতিতে নেই, স্মৃতি এখন পরীমণি। তাকে নিয়ে ভাববার সময় নেই।’ ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণির কথা তুলতেই এভাবে জবাব দিলেন যশোরের কেশবপুরের যুবক ফেরদৌস কবীর সৌরভ। পরীমণিকে স্ত্রী দাবি করা সৌরভ আক্ষেপ করেই কথাগুলো বলেছেন। দীর্ঘদিন পর পরীমণিকে জড়িয়ে তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে বিব্রত হন। বৃহস্পতিবার থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করছেন সৌরভ। শুক্রবার সকালে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে কেশবপুর পৌর এলাকায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন। তবে তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে রাজি হননি।

না কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি বিরূপ ধারণার কথা জানালেন। কেন বিরূপ ধারণা সে সম্পর্কে সৌরভ বললেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমার বক্তব্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে বিভিন্ন গণমাধ্যম; এসব কথা আমি একবারও বলিনি। যার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন সম্পর্কই নেই, তাকে নিয়ে কেন হঠাৎ কথা বলবো। সংবাদ প্রকাশের আগে কেউ আমার মতামত জানার চেষ্টা করেনি। অথচ সবাই আমার বক্তব্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তারা কোথায় পেয়েছে আমার বক্তব্য, জানি না।’ সৌরভের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ২০১৪ সালের জুন মাসের ঘটনা।

একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ পাতায় স্মৃতি (পরীমণি) ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসের একটি শাড়ি এবং পাঞ্জাবির বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। সৌরভ তখন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) হয়ে ফুটবল খেলেন। থাকেন ঢাকার বনশ্রীতে একটি সাবলেট বাসায়। রাতে বাড়ি ফিরে তিনি বিজ্ঞাপনটি দেখেন। দেখার পর স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন এসব কী হচ্ছে? জবাবে স্মৃতি জানান, তিনি চলচ্চিত্রে কাজ করতে চান, নায়িকা হতে চান। এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সৌরভ জানতে চান, তার সঙ্গে ঘর-সংসার করবে, নাকি চলচ্চিত্রে কাজ করবে। পরীমণি সাফ জানিয়ে দেন, তারকা হবেন।

মূলত চিত্রনায়ক ফেরদৌসের সঙ্গে বিজ্ঞাপন করার মধ্য দিয়েই রুপালি জগতে যাত্রা শুরু হয় স্মৃতির। ‘ওই দিনের ঘটনার পরই মূলত সম্পর্কে ফাটল ধরে। দুজন আলাদা হয়ে যাই। এরপর এ নিয়ে একটা শব্দও করিনি। স্বামীর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করিনি। ঢাকা ছেড়ে চলে আসি কেশবপুরের বাসায়’,বলছিলেন সৌরভ।স্মৃতির সঙ্গে পরিচয় ও বিয়ের বিষয়ে সৌরভ বলেন, ‘২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর দাদার বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া থানার মরিচবুনিয়া গ্রামে বেড়াতে যাই। স্মৃতির নানার বাড়ি ভান্ডারিয়া উপজেলার ভগীরথপুরে। দুটি গ্রাম পাশাপাশি।

একদিন ভগীরথপুর বাজারে ফুফাতো ভাইদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ওই সময় প্রথম দেখি স্মৃতিকে। এরপর ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে স্মৃতির সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন স্মৃতি দশম শ্রেণির ছাত্রী। পরিচয়ের সূত্রে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় দুই বছর চলে প্রেম। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে তাকে নিয়ে পালিয়ে কেশবপুরের বাসায় আসি। ২৮ এপ্রিল আমাদের বিয়ে হয়। স্থানীয় কাজি ইমরান হোসেন বিয়ে পড়ান। বিয়েতে আমার বাবা-মা আত্মীয়স্বজন উপস্থিত থাকলেও স্মৃতির পরিবারের কেউ ছিল না। কারণ, স্মৃতির বাবা-মা জীবিত ছিলেন না। পিরোজপুরে স্মৃতি নানার বাড়িতে থাকতো। কিন্তু তার পৈতৃক নিবাস নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাঁকা গ্রামে।

বিয়ের সময় সে জন্য কাবিননামায় বাবার বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করেছিল স্মৃতি।’ বিয়েতে তাকে কিছু উপহার দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সৌরভ বলেন, ‘বিয়েতে সাধারণত যেসব জিনিস দেওয়া হয়; তাই দিয়েছি। তবে উল্লেখ করার মতো কোনও উপহার দিইনি। এ ছাড়া ওই সময়টাতে আমাদের বয়সের কথা ভাবুন। স্মৃতি এসএসসি পাস করলো আর আমি এইচএসসিতে পড়ছি। এজন্য বড় কোনও উপহারের কথা তখন মাথায় আসেনি।’ সৌরভ বলেন, ‘বিয়ের কয়েক মাস পর স্মৃতির নানু আমাদের বাসায় এসেছিলেন। তিনি আমাদের বিয়ে মেনে নেন। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

কেশবপুরের বাসায় তাকে রেখে আমি ঢাকায় চলে যাই। তখন আমার ঢাকার একটি টিম থেকে ডাক এসেছিল। তিন মাসের মাথায় স্মৃতিকে নিয়ে বনশ্রীর একটি বাসায় সাবলেটে উঠি। ঘর-সংসারের জিনিসপত্র আমার আব্বু-আম্মু কিনে দিয়েছিলেন। এইচএসসি পাস করে রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এ বিবিএতে ভর্তি হই। পাশাপাশি স্মৃতিকে মিরপুর কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি করি।’ তিনি বলেন, ‘সংসারের পাশাপাশি আমি তখন ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত। এই সুযোগে চলচ্চিত্র জগতের তারকা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর স্মৃতি।

বিয়ের পর খেলা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম, স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার কথাও মাথায় আসেনি। বয়স কম থাকায় আসলে এসব কথা মনেও পড়েনি। তবে স্মৃতিকে নিয়ে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাগরদাঁড়ির বাড়িতে এবং আশপাশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরেছি।’স্মৃতি কীভাবে চলচ্চিত্র জগতে ঢুকলেন জানতে চাইলে সৌরভ বলেন, ‘স্মৃতির সঙ্গে জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা পল্লবের আগ থেকেই পরিচয় ছিল। স্মৃতির বাবা একসময় সাভারে থাকতেন। পল্লবের সঙ্গে স্মৃতির বাবার ভালো সম্পর্ক ছিল। সে জন্য তার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতো স্মৃতি।’

সৌরভ বলেন, ‘পল্লব ভাইয়ের সঙ্গে স্মৃতি আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। তার বাসায়ও গেছি কয়েকবার। ঠিক কীভাবে যে স্মৃতি পরীমণি হয়ে গেলো, তা বলতে পারবো না। প্রথম যেদিন পত্রিকায় তার ছবি ও বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম, সেদিন তার নাম পরীমণি ছাপা হয়েছিল। পরীমণি নাম কার দেওয়া তা আমার জানা নেই। তবে এটা নিশ্চিত, পল্লব ভাইয়ের মাধ্যমে মডেলিং জগতে প্রবেশ স্মৃতির।’ স্মৃতি আর আপনার এটাই প্রথম বিয়ে? জবাবে সৌরভ বলেন, ‘প্রথম বিয়ে। তবে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে দেখতেছি, আগেও বিয়ে হয়েছিল তার।

কিন্তু আমাদের যখন প্রেমের সম্পর্ক, তখন স্মৃতি দশম শ্রেণির ছাত্রী। পরে শুনেছি, তার আরও দুটি বিয়ে হয়েছে। একজন এফএম রেডিওর পরিচালক, অন্যজন সিনেমার পরিচালক। আমি তাদের নাম জানি না।’ সর্বশেষ কবে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল জানতে চাইলে সৌরভ বলেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে স্মৃতির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না। ২০১৬ সালে স্মৃতি ফোন করেছিল। তখন তার নাম পত্রিকায় বেশ প্রচার হয়। আমার এক বন্ধু আমাদের বিয়ের দু’একটা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। ওসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার কারণ জানতে স্মৃতি তখন ফোন দিয়েছিল।

অনুরোধ করেছিল, এসব ছবি যেন ফেসবুকে পোস্ট না করি। এসব তার ক্যারিয়ারের জন্য খারাপ হবে। তখন তার ভালো চেয়ে আমি এসব গোপন রাখি।’ ডিভোর্স না দিয়েই স্মৃতি একাধিক বিয়ে করেছেন, আপনি আইনি পদক্ষেপ নেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে সৌরভ বলেন, ‘ডিভোর্স দেওয়ার আগেই স্মৃতি আমার নাগালের বাইরে চলে গেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে দুজনের পথ আলাদা হয়ে গেছে। এরপর তাকে নিয়ে ভাবনা ছিল না। পরে বিয়েই অস্বীকার করেছে। বিয়ে অস্বীকারের পর ডিভোর্স দেওয়া প্রয়োজন মনে করিনি। কারণ, তাকে নিয়ে আর সংসার করার ইচ্ছে ছিল না।

আমি নতুনভাবে সংসার সাজাতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ভাই। বড় ভাই এখনও বিয়ে করেননি। শিগগিরই বিয়ে হবে। বড় ভাইকে রেখে পালিয়ে স্মৃতিকে বিয়ে করে ভুল করেছি। আমি যে বয়সে বিয়ে করেছি, সেটি বলতে পারেন জীবনের প্রথম ভুল। আমি ওই ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখছি।’ তিনি বলেন, ‘স্মৃতির সঙ্গে যখন আমার টানাপড়েন, সে সময় খবর পাই বাবা স্ট্রোক করেছেন। প্রায় দেড় মাস যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বাবা চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ওই সময় ঢাকার একটি ফুটবল টিম থেকে খেলতে বলা হয়েছিল; আমি যেতে পারিনি। কারণ, বাড়িতে মা ছাড়া কেউ ছিল না। তখনও স্মৃতিকে পাশে পাইনি। কাজেই তাকে নিয়ে ভাবনা বাদ দিয়েছি। ২০১৯ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর আর ঢাকায় যাইনি। আমার টিমমেটরা এখন জাতীয় দলে ও লিগে খেলছে। অথচ আমি কেশবপুরে। এখন খেলা আর রাজনীতি নিয়ে সময় কাটছে আমার।’ স্মৃতির বিপদে পাশে দাঁড়াবেন কিনা জানতে চাইলে সৌরভ বলেন, ‘আগেই বলেছি স্মৃতি এখন আর স্মৃতি নেই। স্মৃতি এখন পরীমণি।

তারকা পরীমণি যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হোক, আমি সেটাই চাই। যেহেতু তার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই সেহেতু তাকে সহযোগিতার প্রশ্নই ওঠে না।’ আলাপের শেষ পর্যায়ে আক্ষেপ করে সৌরভ বলেন, ‘ওই সময়ে যদি আমাদের ডিভোর্স হয়ে যেতো তাহলে আজ আমাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। ডিভোর্স না দিয়েও ভুল করেছি।’ সৌরভের বাবা জাহাঙ্গীর কবির ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, মা শাহানা কবির ফাতেমা কেশবপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর।

জাহাঙ্গীর-শাহানা কবির দম্পতির দুই ছেলে। তাদের ছোট ছেলে সৌরভ। গত বুধবার সন্ধ্যায় বনানীর বাসায় র‌্যাব অভিযান চালিয়ে পরীমণিকে আটকের পর তাকে স্ত্রীকে দাবি করে আলোচনায় আসেন ২৬ বছর বয়সী ফুটবল খেলোয়াড় সৌরভ। এতদিন বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। বর্তমানে ফুটবল খেলা আর ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মেতে আছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris