বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বিশে^র প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর আগমী রোববার থেকে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে

ছেলের কান্নায় জ্ঞান ফিরে যার কাছেই যাই, দেখি সেই মৃত!

Paris
Update : শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : দুই বছরের কোলের বাচ্চার কান্নার শব্দে জ্ঞান ফিরে। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পর্যন্ত নেই। মেঝেতে পড়ে থেকেই দেখতে পায়, সবাই আমার মতোই পড়ে আছে। কয়েকটা শিশু কান্না করছে। আমাকে দাঁড় করানোর জন্য চিৎকার করছি, কিন্তু মনে হচ্ছে আমার কথা কেউ শুনতে পায় না। হাত-পায়ে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। একটু পর কে যেন এসে মাটি থেকে আমাকে তুললো। উঠে দেখি সবাই মৃত। স্বামী, বাবা, নানা-নানি, মামা-মামী, খালা, খালাতো ভাই, চাচাতো বোন, ননদের স্বামী সবাই মারা গেছে। এভাবেই বজ্রপাতের ঘটনার বর্ণানা দিচ্ছিলেন বরের বড় বোন ও সেদিনের বরযাত্রী সেলিনা খাতুন।

ছোট ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ৪৭ জন বরযাত্রীসহ কনের বাড়িতে বর-বউ আনতে যাচ্ছিলেন তারা। কনের বাড়িতে পৌঁছার আগেই বৃষ্টিতে আটক পড়ে বজ্রপাতে ১৭ জনের প্রাণহানি হয়। গন্তব্যের ৫ মিনিট দুরত্ব থেকে লাশ হয়ে ফিরে এসেছে বরযাত্রী। বজ্রপাতের ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন বরযাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার (০৪ আগষ্ট) দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিন পাঁকা ঘাটে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।

এসময় বরপক্ষের ১৬ জনসহ স্থানীয় এক মাঝি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। বরপক্ষের মোট ৪৭ জন সদস্য নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। বরের বাড়ি সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়নপুর গ্রাম থেকে বরযাত্রী পদ্মা নদী পার হয়ে কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনের বরযাত্রী, নিহতের স্বজন ও প্রতক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (০২ আগষ্ট) শিবগঞ্জের দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে সুমি খাতুনের সাথে বিয়ে হয় সদর উপজেলার সূর্যনারায়নপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে আল মামুনের।

বুধবার (০৪ আগষ্ট) সকালে ৪৭ জন আত্মীয়স্বজন নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওনা হন বরযাত্রীরা। নৌকাটি দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের ঘাটে এসে পৌঁছাতেই শুরু হয় বৃষ্টি। এ সময় বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় নেন ঘাটের ছাউনিতে। সেখানেই হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটে এবং ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়। বজ্রপাতে কবলে পড়ে বেঁচে ফেরা বরের বোন সেলিনা খাতুন বলেন, বজ্রপাত হওয়ার কিছু সময় পর স্থানীয় লোকজন এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে। উঠে স্বামীর কাছে গিয়ে তার মুখ-হাত নাড়াচাড়া করছি, কিন্তু কোন সাড়া নেই। বাবার কাছে গিয়ে দেখি তিনিও মারা গেছেন।

খালার কাছে গেলাম, খালাও বেঁচে নেই। যার কাছেই যাই, দেখি সেই মৃত। যে কয়েকজন জীবিত ছিল, তাদেরকে মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যেও কয়েকজন এখনও (বৃহস্পতিবার দুপুরে) মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। সেলিনা খাতুন আরও বলেন, ঘটনাস্থলেই আমার মামা-মামী মারা গেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তাদের কোলে থাকা ৩ বছরের মেয়ে বেঁচে গেছে।

বাচ্চাটি এখনও মেডিকেলে ভর্তি আছে। খালা ও খালাতো ভাই মারা গেলেও, তাদের পরিবারের খালাতো ভাবী বেঁচে গেছেন। তিনি জানান, বৃষ্টির কবলে পড়ে ছাউনিতে আশ্রয় নেয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই বজ্রপাত হয়। এসময় একসাথেই সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। যে ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তার টিনে আগুন ধরেছিল। স্বামীকে হারালেও দুই বছরের ছেলের জন্যই আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে মনে করেন তিনি।

বজ্রপাতে নিহত ১৭ জন হলেন- সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ঘাটাপাড়ার সাত্তার আলীর ছেলে সহবুল (৩০), চর সূর্যনারায়নপুর গ্রামের টিপুর স্ত্রী বেলী বেগম (৩২), মহরাজনগর ডানপাড়ার জামালের ছেলে লেচন (৫০), রফিকুল ইসলামের ছেলে বাবলু (২৬), একই গ্রামের মৃত সৈয়ব আলীর ছেলে তবজুল (৭০), তবজুলের স্ত্রী জমিলা (৫৮), ছেলে সাদল (৩৫), তেররশিয়া দক্ষিণপাড়ার মৃত মহবুলের ছেলে রফিকুল (৬০), সূর্যনারায়নপুরের ধুনু মিয়ার ছেলে সজিব (২২), একই গ্রামের সাহালালের স্ত্রী মৌসুমী (২৫), বাবুডাইংয়ের মকবুলের ছেলে টিপু (৪৫), কালুর ছেলে আলম (৪০), মোস্তফার ছেলে পাতু (৪০), সুন্দরপুরের সেরাজুলের ছেলে আতিকুল ইসলাম ডাকু (২৪), ফাটাপাড়ার সাদিকুলের স্ত্রী টকি বেগম (৩০) ও জনতার হাট গ্রামের শাহালাল ওরফে বাবুর ছেলে তামিম (৫) ও নৌকার মাঝি শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম।

বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মীয়-স্বজন ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিয়েবাড়িতে এখন শোক আর আহাজারি। নিহতের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris