শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিকের শিক্ষকরা চূড়ান্ত হতে যাওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিতে হতাশ

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য একটি যৌক্তিক নিয়োগবিধির দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এখন শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগে প্রস্তাবিত যে নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কারণ নতুন বিধি কার্যকর হলে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি পদোন্নতিও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। অতিসম্প্রতি নতুন নিয়োগবিধিটি প্রশাসন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) পর্যন্ত হতে পারতেন। কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগবিধি ১৯৮৫ শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে পিএসসির নিয়োগবিধি ১৯৯৪ জারি হলে এটিইও পদে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারতেন।

আর ২০০৩ সালে সরকারি গেজেটেও এটিইও পদে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের কথা বলা ছিল এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের বোঝানো হয়েছে। সর্বশেষ নিয়োগ পর্যন্ত এভাবেই চলেছে। কিন্তু এবার সচিব কমিটিতে পাস হওয়া নিয়োগবিধি ২০১৯-এ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীর সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ওই বিধিমালা চূড়ান্ত হলে সহকারী শিক্ষকরা জীবনে আর কখনো কর্মকর্তা পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। সূত্র জানায়, সম্প্রতি সচিব কমিটিতে পাস হওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে- সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ২ হাজার ৫৮৯টি পদে সরাসরি নিয়োগ হবে। নিয়োগে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে।

বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বুঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ন্যূনতম ৩ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সরাসরি নিয়োগে উন্মুক্ত প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। তাছাড়া অফিসারদের আর একটি পদ ইনস্ট্রাক্টর (উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টার)।

তার ৫০৫টি পদের নিয়োগে মোট পদের ৩৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৬৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। পদোন্নতির জন্য উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইন্সট্রাক্টর/পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে ন্যূনতম ৭ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির বিএডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি।

সরাসরি নিয়োগে বয়স ৩০ বছর, তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সের কোনো উল্লেখ নেই। ইউআরসি সহকারী ইন্সট্রাক্টরের ৫০৫টি পদে নিয়োগও একই নিয়মে হবে। তবে সেখানেও বিভাগীয় প্রার্থী বলতে শুধু প্রধান শিক্ষকদের বোঝানো হয়েছে। অথচ দেশের ৬৭টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সাধারণ ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ইনস্ট্রাক্টর পদেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি।

এদিকে এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের মতে, উচ্চপদে বর্তমান নিয়োগবিধিতে সহকারী শিক্ষকের বিভাগীয় আবেদনের সুযোগ না রাখলে মেধাবী ও যোগ্য লাখ লাখ সহকারী শিক্ষক হতাশায় ভুগবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা নতুন যোগদান করা সহকারী শিক্ষকরা এই ডিপার্টমেন্টকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করবে, যা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন নিয়োগবিধি কার্যকর হলে মেধাবীরা প্রাথমিক শিক্ষায় আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

তাতে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমে যাবে। ফলে শিক্ষার ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়বে। অথচ দক্ষ শিক্ষকদের কর্মকর্তা পদে সুযোগ দিলে শিক্ষার মান আরো বাড়বে। তাছাড়া সহকারী শিক্ষকরা বেশিরভাগ সময়েই পদোন্নতি পান না। তাতে তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। অথচ সরকারের অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই ব্যক্তি তার নিজ নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেয়ে থাকে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন জানান, শিক্ষকদের সম্মান-মর্যাদার কথা শুধু মানুষের মুখে মুখে। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৯৮৫ সালের আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা হতে পারতেন। তারপর কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগবিধি ১৯৮৫ পাস হওয়ার পর ওই সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়।

১৯৯৪ সালের সংশোধিত নিয়োগবিধিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা সরাসরি পদোন্নতি না পেলেও বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হতে পারতেন। কিন্তু নিয়োগবিধি-২০১৯ সচিব কমিটিতে পাস হওয়ার পর সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দূরে থাক, বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করারও কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পণ্ডিত জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা সব ধাপে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।

মন্ত্রিসভা থেকে এলে ছোটখাটো কিছু কাজ আছে সেসব শেষ করে সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা বাস্তবায়ন করা হবে। ১৯৮৫ সালের পরে এ নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হয়নি। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। সেসব সমাধানের মাধ্যমে এ নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত ৭৬টি পদে নিয়োগ-পদোন্নতি ও কর্মকর্তাদের গ্রেড সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ রয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris