মঙ্গলবার

১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চারঘাটে মোবাইল গেমস আসক্তি বাড়ছে

Paris
Update : বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

চারঘাট প্রতিনিধি : রাজশাহীর চারঘাটের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের আচরণে দেখা দিয়েছে নানা পরিবর্তন। লেখাপড়ায় নেমেছে ধস। কোনোভাবেই তাদের এ পথ থেকে ফেরানো যাচ্ছে না। তাই অনলাইন গেমে আসক্তদের নিয়ে পরিবারের স্বজনদের মতো শিক্ষকেরাও শঙ্কিত। কারণ করোনা পরিস্থিতি শেষে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুললে শিক্ষকদের এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ১২টি কলেজ, ৫৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০টি মাদ্রাসা ও ৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মোট ১৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৮ হাজার ১৩৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী কোনো–না কোনোভাবে অনলাইন গেমে আসক্ত বলে দাবি করেছে উপজেলা শিক্ষক সমিতি।

অনলাইন গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম পাবজি, ফ্রি-ফায়ার, কল অব ডিউটি, পেস-২০২১, রিয়েল ক্রিকেট ২০২০, তিন পাত্তি গোল্ড অন্যতম। পাবজি অ্যাপে টাকা দিয়ে ইউসি (ডলার) কিনতে হয়। আর ফ্রি ফায়ারে ডায়মন্ড। মূল্য কমপক্ষে ৫০০ টাকা থেকে শুরু। কার্ড (তাস) গেমটা মূলত গ্রামবাংলার তিন তাস গেম, যা বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ টাকার বিনিময়ে খেলেন। কার্ড গেমের এক কোটি চিপসের মূল্য ২০-২৫ টাকা। একইভাবে চলছে অনলাইনভিত্তিক ক্রিকেট ও ফুটবল গেম।

তারা প্রায় সারা দিনই এ গেমে পড়ে থাকে। তাদের জীবনে অনলাইন গেম এখন আর বিনোদন নয়। ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে যাদের মোবাইল নেই তারা বড়দের পেছনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছে এবং খেলোয়াড়কে পরামর্শ দিচ্ছে। অবাক করা বিষয় হলো গেমস খেলার জন্য আঙুলে লাগানোর মোজাও বের হয়েছে। এ মোজা পরে খেললে আঙুল দ্রুত নাড়ানো যায় বলে গেমসে আসক্ত কয়েকজন কিশোর জানায়।

উপজেলার রাওথা গ্রামের শফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান, ‘এখন শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু করোনার কারণে ঘরে থাকায় তারা শুধু মোবাইলে গেমস খেলছে। এতে তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। মানা করলেই মা-বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করে না। তাদের আচরণেও দেখা দিয়েছে নানা পরিবর্তন।

স্কুলশিক্ষক রোজিনা খাতুন জানান, দীর্ঘ ছুটিতে এমনটি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা ভাবলে এর বাইরে কিছু করার নেই। তবুও অনলাইন গেমে আসক্তদের নিয়ে পরিবারের স্বজনদের মতো তাঁরাও শঙ্কিত। করোনার ক্রান্তিকাল শেষে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে তখন তাঁদের এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এ ছাড়া পাবজি ও ফ্রি-ফায়ার সংঘাতপূর্ণ গেমস, যা মানুষে মানুষে প্রতিহিংসা সৃষ্টি করে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম বলেন, তিনি যেমন একজন শিক্ষক, তেমনি একজন বাবা। এ উপজেলায় অনলাইন গেম–আসক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ শিশু আসক্ত হয়ে পড়েছে। যার প্রভাবে হয়তো অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়বে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, বিষয়টি তাঁরাও অবগত।

প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থী কোনো–না কোনোভাবে অনলাইন গেমে আসক্ত। তাঁরা স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করছেন বাসায় আরও অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে কীভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখা যায় সে ব্যাপারে। শিশু কিশোরদের গেমস আসক্তির বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, শিশু কিশোরদের গেমস আসক্তি নিয়ে তারা চিকিৎসকরাও চিন্তিত। এতে শারিরিক ও মানসিক ভাবে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি মোবাইলের রেডিয়েশনের ফলে ব্রেণ ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris