শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
বাগমারায় রাস্তায় বসতবাড়ির সিঁড়ি নির্মাণের অভিযোগ, ঘটছে দুর্ঘটনা গোদাগাড়ীতে কোন শর্ত মানছেন না বালুর খনির ইজারাদার মোহনপুরে ফলজ গাছ বাঁচানোর অজুহাতে রাস্তার শত শত বনজ গাছ কেটে সাবাড়! পুঠিয়ায় দশ চাকার ট্রাকে গিলে খাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সড়ক! রাজশাহীসহ দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, বাড়তে পারে আরো তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৭ দিন বন্ধ তীব্র তাপদাহে রাজশাহীতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাইমারি স্কুলে অ্যাসেম্বলি না করানোর নির্দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে : জাতিসংঘ

মেধাবী এরশাদ আলীর বিপন্ন জীবনের গল্প

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

আরিফ সাদাত, পুঠিয়া : নাম এরশাদ হলেও তিনি কুঁড়ে ঘরে জন্ম নেয়া এক রিকশাচালকের সন্তান। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া তুখোর ছাত্র এরশাদেরও স্বপ্ন ছিল ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা আর সহপাঠীদের সাথে হেসে খেলে দিন কাটছিল এক সময়কার মেধাবী ছাত্র এরশাদ আলীর। ১৯৮৮ সালে পুঠিয়া পিএন হাই স্কুলে সবে মাত্র দশম শ্রেণীতে উঠেছেন তিনি। চলছিল অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। এরমধ্যে তার দুটি পায়ের হাড়ের ভেতর ব্যথা শুরু হয়। মাঝে মধ্যে পায়ের তীব্র ব্যথার কারণে নিয়মিত স্কুলে যাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটতো তার।

আর এ কারণে তার বাবা চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান তাকে। কিন্তু তৎকালিন একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত আজও দিতে হচ্ছে এরশাদ আলীকে। দশটি ইনজেকশান দেয়ার পর তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। এরপর দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবত হুইল চেয়ারেই কাটছে তার জীবন। বর্তমানে তিনি ৫০ বছরে পা রেখেছেন।

এরশাদ আলী রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদরের কাজিপাড়া এলাকার মৃত এছার আলীর ছেলে। চার ভাই আর তিন বোনের মধ্যে এরশাদ আলী তৃতীয়। সে সময় তাদের মোট নয় সদস্যের পরিবার ছিল। বাবা এছার আলী পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। সারাদিন রিকশা চালিয়ে তিনি যা আয় করতেন তা দিয়েই কোনো মতে তাদের পরিবার চলতো।

এরশাদ আলীর মা আয়মলা বেগম বলেন, ছেলেটা পড়াশুনায় অনেক ভালো ছিল। তার বাবা চেয়েছিলেন সকল ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখুক। কিন্তু এরশাদের কপাল খারাপ। অজানা রোগে তার সব শেষ। এখন জীবিত আছে এটাই বড় কথা। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তারা বাবা মারা যাওয়ার পর ছেলে-মেয়েরা আর পড়াশুনা করতে পারেনি। পেটের দায়ে যে যেমন পেরেছে কাজে নেমেছে। এখন এরশাদ বাদে সকলেই বিবাহিত এবং আলাদা সংসার। এরশাদ আলীর ঠাঁই হয়েছে ছোট ছেলে এনামুলের কাছে।

বাড়ির সামনে পুঠিয়া-আড়ানী সড়কের সাথে ছোট ভাইয়ের দোকান ঘরের সামনে হুইল চেয়ারে বসে দিন কাটে এরশাদ আলীর। তিনি বলেন, প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেরা ছাত্রদের মধ্যে ছিলাম। ক্লাসে ভালো পড়াশুনা করার কারণে শিক্ষকরাও খুব ভালো বাসতো। কিন্তু দুই পায়ের অসুস্থতার কারণে পড়ায় আর এগুতে পারিনি। আর আমাদের পরিবারে এতো টাকা-পয়সা ছিল না যে তখন উন্নত চিকিৎসা করাতে পারবে। তবে সে সময় আমাকে উপজেলা হাসপাতালের ডাঃ মিজানুর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি কি চিকিৎসা করলেন যে আমি পুরো প্রতিবন্ধি হয়ে গেছি।

তবে সে সময় স্কুল শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহায়তায় রামেক হাসপাতালে দুই বার পায়ে অপারেশন করানো হয়। কিন্তু ফলাফল শূণ্য। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মাত্রাতিরিক্ত পাওয়াফুল ইনজেকশন দেয়ার কারণে দুই পা শুকিয়ে অকেজ হয়ে গেছে। এরপর থেকে আমি পরিবারের বোঝা হয়ে গেছি। বর্তমানে ছোট ভাইয়ের সাথে আছি। তিনি যতটুকু পারছেন আমাকে দেখভাল করছেন।এখন বয়সের সাথে শরীরে নানা রোগ বাসা বেধেছে।

তিনি আরো বলেন, একমাত্র প্রতিবন্ধি কার্ডে সরকার যে অনুদান দেন তাতে আমার মাসের ১০ দিনের ঔষুধের খরচ হয় না। যদি কোনো দয়াবান আমাকে সহযোগিতা করতেন তবে বেঁচে থাকার বাকি দিন গুলো নিশ্চিন্তে কাটতো। ছোট ভাই এনামুল বলেন, যতই অচল হোক তিনি আমার বড় ভাই। আমি যতটুকু পারবো ভাইয়ের জন্য সেবা করবো।

পৌরসভার কৃষ্ণপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুকুল শেখ বলেন, এরশাদ আলী আমাদের খুব কাছের মানুষ। আমি সব সময় তার পাশে আছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মতিন বলেন, এরশাদ আলী মাঝে মধ্যে এখনে চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি প্রতিবন্ধি হিসাবে আমাদের সকলের কাছে একটু সুবিধা পান। এই হাসপাতাল থেকে যে সকল ঔষুধ সরবরাহ হয় তার সুবিধা তাকে দেয়া হয়।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris