বুধবার

২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এভারগ্রীণ’র দখল করে নির্মাণাধীণ কাউন্টার উচ্ছেদ করলো আরডিএ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেতো : প্রধানমন্ত্রী

করোনা মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ

Paris
Update : রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : দেশে প্রাণঘাতী করোনার পর এবার ডেঙ্গু রোগের প্রকোপও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের চিরুনী অভিযানেও সফলতা আসছে না। বিদ্যমান অবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ে মানুষ এখন আতঙ্কিত। চলতি বছর ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দুই হাজারেরও বেশি রোগী হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র জুলাই মাসের ২৮ দিইে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আগের ৬ মাসের মোট আক্রান্তের প্রায় ৫ গুণ বেশি। তাছাড়া প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকায় অস্বাভাবিক হারে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসায় সুবিধার জন্য আলাদা ৪টি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল ও টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল। ওই ৪টি হাসপাতালের পাশাপাশি আরো ক’টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর যেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়, সেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। তাই আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অতিসম্প্রতি দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে এডিসসহ অন্যান্য মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে যে বাসা-বাড়িতে রোগী পাওয়া যাবে, হাসপাতাল থেকে ওই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা নিয়ে তার বাসাসহ ওই এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষ চিরুনী অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আর ওই বৈঠকের পর থেকেই নতুন উদ্যমে চিরুনী অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে অংশ নেয় ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান চলাকালে যেখানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে সেই স্থাপনার মালিককেই আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে। এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও (ডিএনসিসি) নতুন উদ্যমে চিরুনী অভিযান শুরু করে। অভিযানের উদ্বোধনী দিনে খোদ নিজেদের এক কাউন্সিলরকে জরিমানা করে ডিএনসিসি।

৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তোফাজ্জল হোসেনের অংশীদারে মালিকানা থাকা একটি বিপণিবিতানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে অংশ নেয় ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই অভিযান আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত চালাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকেও সচেতন হতে হবে।

বিশেষ করে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা জরুরি। কারণ এডিস মশার মাধ্যমেই ডেঙ্গু ছাড়ায়। দেশে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। তাই এ সময়টাই ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম। তবে ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে এবার মে ৩ জুন মাস পর্যন্ত খুব কম মানুষই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু জুলাইয়ের শুরু থেকে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং মধ্য জুলাইয়ের পর থেকে বেশি বাড়ে। আর বিগত ক’দিন ধরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে।

সূত্র আরো জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষই জানে না তারা ওই রোগে ভুগছেন। তাছাড়া এখন কারো জ্বর আসলেই মনে করে কারোনা হতে পারে, তাই তারা শুধু করোনা টেস্ট করায়। ফলে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর তারা আর চিকিৎসা নেয় না। এর ফলে এক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং টেস্টের পর জানতে পারেন ডেঙ্গু হয়েছে। এমন অবস্থার অবসানে করোনার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুরও টেস্ট করা প্রয়োজন।

তাছাড়া ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে সবাইকে নিজ নিজ বাসস্থান ও চারপাশে স্বচ্ছ পানি যাতে জমে না থাকতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করা এডিস মশা আশপাশের মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর বাহক এডিশ মশা যেন বংশবিস্তার করতে না পারে সেজন্য ঘরের ভেতর ও বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে সবাইকে মশারি ব্যবহার করতে হবে।

আর জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত মশানাশক স্প্রে করতে হবে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর কারো জ্বর হলে সেটাকে সাধারণ জ্বর মনে করে অবহেলা না করে টেস্ট করতে হবে। কারো জ্বর, গা-ব্যথা, বমি এবং হাতে-পায়ে ফুসকুড়ি কিংবা র‌্যাশ হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। এদিকে চিকিৎসকদের মতে, করোনা ও ডেঙ্গু রোগের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে।

দুটো রোগের ক্ষেত্রেই জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি, কাশি এবং স্বাদ না থাকার লক্ষণ থাকতে পারে। তাই একই রোগী করোনা এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা অধিকতর জটিল হয়। করোনার ক্ষেত্রে ওসব লক্ষণের সঙ্গে নাকে ঘ্রাণ না পাওয়া, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও কারো কারো পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে এমন হয় না।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গুর বাহক এডিস নিয়ন্ত্রণে চিরুনী অভিযান চলছে। যেখানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে সেই ভবনের মালিককেই জরিমানা করা হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যতদিন মশা থাকবে ততদিন মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান অব্যাহত থাকবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris