বুধবার

১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনার সনদ ছাড়াই দেশে ঢুকছে ভারতীয় ট্রাকচালকরা

Paris
Update : রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

এফএনএস : পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও করোনার সনদ ছাড়াই যশোরে বেনাপোল স্থলবন্দরে অবাধে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও হেলপাররা। এদিকে জেলায় প্রতিদিন বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ও দেশের রপ্তানিখাতকে বাঁচাতে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমস হাউজ খোলা রেখে সব কাজই চলছে। এদিকে ভারত থেকে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য কোনো সংগঠন দাবিও করেনি। সবার দাবি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বন্দরের কাজ সম্পন্ন করা হোক।

গত শুক্রবার পর্যন্ত বেনাপোল পৌর এলাকাসহ শার্শা উপজেলায় করোনায় এক হাজার ২১ জন আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। এরমধ্যে বন্দর, কাস্টমস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের কেউ নেই। তবে অনেকের শরীরে উপসর্গ রয়েছে। তারা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে। গতকাল শনিবার বন্দর অভ্যন্তরে ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় চালক-হেলপাররা অনায়াসে বন্দরের শ্রমিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন।

ভেতরে অনেকেই ব্যবহার করছেন না মাস্ক। ফলে করোনার ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জানা যায়, করোনা শুরুর প্রথমদিকে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করেছিলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে চালক ও হেলপাররা বন্দরে প্রবেশ করবে। তবে আজ পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। প্রথমদিকে বন্দরের পক্ষ থেকে তাপমাত্রা দেখা, ভারতীয় ট্রাকে জীবানুনাশক স্প্রে, পিপিই ও মাস্ক পরে আসলেও এখন শুধুমাত্র জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

ভারতীয় চালক ও হেলপাররা মাস্ক পরলেও বাংলাদেশে প্রবেশের পর তা খুলে ফেলছে। আগে ইচ্ছামতো বন্দর ও বন্দরের বাইরে ঘোরাফেরা করলেও এখন প্রশাসনের তদারকির কারণে ঘোরাফেরা করতে পারছে না তারা। তবে যাদের ট্রাক থেকে দিনের দিন পণ্য খালাস হচ্ছে না, তারা বিশেষ পাস নিয়ে সন্ধ্যার দিকে ভারতে চলে যাচ্ছেন। পরের দিন সকালে আবার বন্দর এলাকায় ফিরে আসছেন। অন্যদিকে, গত ২৬ মে বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেনকে জানানো হয়, প্রতিদিন ভারত থেকে আমদানি পণ্য পরিবহনের সঙ্গে ৬০০-৭০০ চালক ও হেলপার বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। এতে বন্দরে নিযুক্ত প্রায় দুই হাজার শ্রমিক, কয়েক হাজার সিঅ্যান্ডএফ ট্রান্সপোর্ট কর্মচারী-কর্মকর্তারাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। তিনি মতবিনিময় সভা শেষে জানান, ভারত থেকে যে ট্রাকগুলো বন্দরে আসে সেসব ট্রাকের চালক ও হেলপারদের গতিবিধি কীভাবে আরও নিয়ন্ত্রিত করা যায়?, আমাদের দেশের ট্রাকচালক ও শ্রমিকরা যারা কাজ করছেন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কীভাবে সবাইকে টিকার আওতায় আনা যায়?- সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় দেড় মাস পার হলেও বন্দরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের টিকার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বাংলাদেশে প্রবেশেরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ভারতে করোনার ভয়াবহ অবস্থা।

এ অবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থায় বেনাপোল বন্দর সচল রাখা হয়েছে। তবে এখানে ভারতীয় ট্রাকচালক থেকে শুরু করে বন্দরের শ্রমিক কেউ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এতে সম্প্রতি সীমান্তে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে একটি পত্র বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিস্ট সবাইকে দেয়া হলেও কার্যকরী কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, আমদানি-রপ্তানি গেটেই প্রতিদিন ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোতে স্প্রে করা হচ্ছে।

বন্দরের নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যদের ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপাররা যাতে বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য নজরদারি রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল স্বল্পতার কারণে ভারতীয় চালকদের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

ঈদে ৪ দিন বন্ধ থাকবে আমদানি-রপ্তানি: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা চার দিন বন্ধ থাকবে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। গতকাল শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান। তিনি জানান, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ২০ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ কাস্টমস ও বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

২৪ জুলাই সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল হলেও গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্দর ও কাস্টমসের সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বন্দর সূত্রে জানা যায়, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ২০ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল আজহা এবং ২৩ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটিতে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২৪ জুলাই সকাল থেকে পূর্বের ন্যায় এ বন্দরে আমদানি-রপ্তানি সচল হবে। কাস্টমস হাউস ও বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু হবে ২৫ জুলাই সকাল থেকে।

জানা যায়, দেশে চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব আদায়কারী স্থলবন্দর বেনাপোল। স্থল পথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৪০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। প্রতি বছর এ বন্দর থেকে সরকারের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে। বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দরে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা দিনে-রাতে বন্দর এলাকায় টহল দেবে। পাশাপাশি বেনাপোল পোর্ট থানা কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি বলা হয়েছে। বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি (অপারেশন) আজিজুল হক বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দর এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ও দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিশেষ নজরদারি নেয়া হয়েছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব জানান, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে এ পথে নতুন করে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার আগে যারা আটকে-পড়েছিলেন তারা দূতাবাস থেকে ছাড়পত্র, কোভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে সপ্তাহে তিন দিন যাওয়া আসা করতে পারবেন। ঈদের ছুটিতে তাদের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেয়। তবে যারা ফেরত আসবে তাদের অবশ্যই নিজ খরচে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris