বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে তৈরি হচ্ছে মজবুত এক কিলোমিটার রাস্তা!

Paris
Update : শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : অটোরাইস মিলের পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে অভিনব উপায়ে দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন। হর্টিকালচার সেন্টারের নালা ও জঙ্গলে এখন দৃশ্যমান এই মজবুত রাস্তা। এতে অবাক হয়েছেন অটোরাইস মিলের শ্রমিক, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে রাস্তা তৈরি করে সকলের প্রশংসার দাবিদার হয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে প্রায় ৩ হাজার ট্রাক্টর ছাইয়ের তৈরি রাস্তা এতোটাই মজবুত হয়েছে যে, ভারী যানবহন চলাচলেও সক্ষম এই রাস্তাটি।

কোনরকম সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই ছাই দিয়ে তৈরি এই রাস্তা দিয়েই হর্টিকালচার সেন্টারে একটি পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন। অথচ ১ বছর আগেও আয়তনে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের প্রায় ১০ একর জায়গা জঙ্গলের মধ্যে ছিল। ঝোপঝাড় ও জঙ্গলের মধ্যে থাকা এসব জায়গায় ব্যবহার করতে পারতোনা হর্টিকালচার কর্তৃপক্ষ। এমনকি প্রায় দক্ষিণ অংশের প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে ঝোপঝাড়ের কারনে কেউ যেতেই পারতো না। এর সুযোগে স্থানীয় বখাটে ও মাদকসেবিদের আড্ডাখানায় পরিনত হয়েছিল জঙ্গলে ঢেকে ঢাকা বিশাল এলাকা। বিভিন্ন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়ে পড়ে জঙ্গল এলাকা।

গতবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে যোগদান করার পর বিশাল অরক্ষিত এলাকা উদ্ধারে উদ্যোগ নেন উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন। শুরু করেন জঙ্গল পরিষ্কার অভিযান। প্রায় ১০ একর জায়গা পরিষ্কার হলেও পানির নালা ও রাস্তা না থাকায় কাজে লাগানো যাচ্ছিল না। তাই উদ্বার হওয়া জমি ব্যবহার উপযোগী করতে হর্টিকালচার সেন্টারের সীমানা প্রাচীরের পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করেন কৃষিবিদ মোজদার হোসেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখলেন, এরপর দীর্ঘদিন অপেক্ষাও করলেন। কিন্তু বরাদ্দ আসেনি কোন রাস্তা নির্মাণের জন্য।

৫-৬ ফুট গভীরতার নালা ভরাট করে দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে প্রয়োজন অন্তত অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা। রাস্তা নির্মানের জন্য এতো টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাবে না জেনেও চেষ্টা অব্যাহত রাখেন উপ-পরিচালক। হঠাৎ করে কৃষিবিদ মোজদার হোসেনের মাথায় আসে জেলার বিভিন্ন জায়গা ও রাস্তার ধারে পড়ে থাকা অটোরাইস মিলের অকেজো, অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত ছাইয়ের কথা। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ও অন্যান্য কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় গত ১০ মাস ধরে ছাই দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর ১ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে রাস্তা নির্মাণের কাজ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ববিদ মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর দেখেছি মোট ৬৮ একর জমির মধ্যে ১০-১৫ একর জমি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। আমরা ওই বিশাল অংশটুকু ব্যবহার করতেও পারতাম না। উপ-পরিচালক মহোদয় জায়গাটি পরিষ্কার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। পরিষ্কার করার পর আমরা দেখলাম, এখানে যাওয়া আসার কোন রাস্তা ছিল না৷ যার কারনে বর্ষার সময়ে পুরো এলাকাটি পরিষ্কার করার পরেও পানিতে নিমজ্জিত থাকতো।

উপ-পরিচালক স্যার একজন উদ্ভাবনী শক্তির সম্পন্ন মানুষ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অটোরাইস মিলের ছাই নেয়ার পরিকল্পনা আসে ডিডি স্যারের মাথা থেকে। সেখানে বিনামূল্যে এই ছাই দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুধুমাত্র ছাই দিয়ে সীমানা প্রচীরের পাশ দিয়ে দীর্ঘ ১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। রাস্তাটি নির্মাণের ফলে প্রায় ৩০ বিঘার অধিক পরিমান জমি ব্যবহার করতপ পারবে হর্টিকালচার। যেখানে মাতৃগাছ থেকে বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন করে তা বাজারজাত করা হবে৷ হর্টিকালচার সেন্টারের ডরমেটরি ও স্টাফদের বাসায় যাওয়ার রাস্তা দুটিও ছাই দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নবাব অটো রাইস মিলের ছাই বহনকারী ট্রাক্টরের চালক মো. অলি আহমেদ জানান, অটোরাইস মিলের পরিত্যক্ত ছাইগুলো ফেলার কোন নিদিষ্ট জায়গা নেই। তাই আগে আমরা অটোরাইস মিলের ছাইগুলো রাস্তার ধারে ফেলতাম। এতে অনেক মানুষের গালমন্দ শুনতে হতো। অনেক খুঁজে খুঁজে জায়গা বের করতে হতো এগুলো ফেলার জন্য। কিন্তু ডিডি স্যার আসার পর এই ছাইগুলো আমরা গত ১০ মাস থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে এনে ফেলছি।

তিনি আরও জানান, আমরা খুব আশ্চর্য হয়েছি, যে এভাবেও রাস্তা তৈরি করা যায়! নিজেরাই প্রতিদিন ছাই ফেলতে আসি, অথচ বর্তমানে আমাদের তৈরি রাস্তা দেখে আমরাই অবাক হয়। গর্ত, নালা, ডোবা ভর্তি করে ছাই দিয়েই তৈরি হয়েছে চমৎকার একটি রাস্তা। একদিকে আমাদের ছাই ফেলার নিদিষ্ট জায়গা পেয়েছি, তেমনি অব্যদিনে হর্টিকালচার সেন্টারে মজবুত একটি রাস্তাও তৈরি হয়ে গেছে।

অটোরাইস মিলের ট্রাক্টরের ছাই ফেলা শ্রমিক মো. উমর আলী জানান, এখন যেখানে রাস্তা তৈরি হয়েছে, সেখানে অনেক জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। সেগুলো পরিষ্কার করার পর ছাই ফেলছি, আর রাস্তা তৈরি হচ্ছে। আমাদের মালিকের ভালো হয়েছে চাই ফেলার একটি নিদিষ্ট জায়গা পাওয়া গেছে। বর্ষাকালে কোথাও একটু জায়গা পায় না ছাই ফেলার। আমাদেরও সুবিধা হয়েছে, হর্টিকালচারও বিনামূল্যে রাস্তা তৈরি করছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, এখানে আসার পরপরই দেখলাম বিশাল জায়গা জঙ্গলে ঢেকে আছে। যা আমরা ব্যবহার করতে পারিনা। তাই জঙ্গল, ঝোঁপঝাড় পরিস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরিষ্কার করার পর সেসব জায়গা ব্যবহার ও যোগাযোগের সুবিধা করতে রাস্তার প্রয়োজন পড়ে। এনিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দিলেও সাড়া মেলেনি। পরে এর বিকল্প হিসেবে ছাইকে ব্যবহারের উদ্যোগ নিলাম।

কারন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচুর পরিমানে থাকা অটোরাইস মিলের পরিত্যক্ত ছাই তারা বাইরে ফেলে দেয়। যেটি অনেক বিপদজনক। এই ফেলে দেয়া ছাইকে রাস্তার তৈরির কাজে কিভাবে লাগানো যায় সেই চিন্তা থেকে সকল অটোরাইস মিলের মালিকদের পত্র দিলাম ও দাওয়াত করে বিষয়টি বোঝালাম। তারাও বিষয়টতে সাড়া দিয়ে ছাই দিতে আগ্রহী হয়। তিনি আরও বলেন, ছাই দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষের পথে। আগামী এক মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।

ছাই দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে দেখে অনেকেই তাদের নিজ জমি বা বাড়ির আশেপাশে ছাই ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণ করছে। হর্টিকালচার সেন্টারের রাস্তাটিকে ঘিরে রয়েছে নানা পরিকল্পনা। কাজ সম্পন্ন হলে একটু দূরে দূরে পুকুরের চারপাশ দিয়ে মোড় ও দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হবে। ছাই দিয়ে তৈরি রাস্তাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা চার চাকার গাড়ি নিয়ে একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে।

উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের আশেপাশে তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র নেই। তাই হর্টিকালচার সেন্টারের এই এলাকাতে এতে মানুষ যাতে পরিবার নিয়ে একটু প্রকৃতির নির্মল হাওয়া ও বিনোদন পেতে পারে সে লক্ষ্যে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দর্শনার্থীরা পুকুরে লাল শাপলা, দুই ধারে হরেক রকমের ফুল-ফলের গাছপালা দেখতে পাবে।

বর্তমানে নবাব অটো রাইস মিল ছাড়াও হক অটো রাইস মিল, রাজু অটো রাইস মিল, সেলিম অটো রাইস মিলসহ কয়েকটি অটোরাইস মিলের পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, হর্টিকালচার সেন্টারের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে সেখান থেকে এবছর উদ্বার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম সূর্যডিম ও আমেরিকান রেড পালমার জাতের ৩টি আম গাছ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris