বৃহস্পতিবার

১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছোট্ট কাঁধে সংসারের বড় বোঝা

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১

একে আজাদ, চারঘাট : বাবা অসুস্থ, বিছানাগত। তাতে কি! জীবন তো আর থেমে থাকে না। অভাবের সংসার। তাই জীবিকার তাগিদে ভ্যান চালায় শিশু শাওন। কোমল হাতে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের হ্যান্ডেল নিয়ন্ত্রণ করেই চলছে তার বেঁচে থাকার লড়াই। শাওন পিরোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বয়স ৯ বছর। করোনার কারনে বিদ্যালয় প্রায় দেড় বছর যাবৎ বন্ধ। এ সুযোগে ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলে শাওনের পরিবারের খরচ।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মেরামাতপুর গ্রামে বাড়ি শাওনের। তারা দুই ভাই দুই বোন। বড় ভাই নিজের সংসার নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। বোনদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা মন্টু মিয়া (৫৫) ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। গত এক বছর ধরে শরীরে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ বাসা বেধেছে। স্বাভাবিক চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েছেন তিনি। ফলে তার সংসারে নেমে আসে চরম অভাব। অবশেষে সংসারের হাল ধরতে ছোট ছেলে শাওন শুরু করেছে ভ্যান গাড়ি চালানো।

শাওনের মা পিঞ্জিরা বেগম জানান, শাওনের বাবা মন্টু মিয়া দীর্ঘ এক বছর যাবৎ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। নিজেদের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে চিকিৎসা করিয়েও এখনো কাজ-কর্ম করতে পারছেন না। তাই দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে রাস্তায় ভ্যান নিয়ে নামতে হয়েছে শিশু শাওনকে। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে বাবার ওষুুধ ও সংসার খরচ। শাওনের বাবা মন্টু মিয়া বলেন, অসুস্থতার কারণে আমি কর্ম করতে পারি না।

শাওন ভ্যান চালালে আমাদের দু’বেলা খাবার জোটে। ভ্যান চালাতে গেলে ওর মা সব সময় চিন্তা করে। কিন্তু কি আর করার, ব্যাটা ভ্যান না চলালেও তো হয় না। স্কুল বন্ধ তাই রাস্তায় ভ্যান চালাচ্ছে। শিশু শাওন জানায়, মা-বাবার কষ্ট দেখে খারাপ লাগতো। কিছুদিন দিন ঠিকমত খেতেও পাইনি। পরে নিজেই ভ্যান চালানো শুরু করি। ভ্যান চালিয়ে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়।

পাশাপাশি আমার পড়ালেখা করি। শত কষ্ট হলেও পড়ালেখা শেষ করতে চায় শাওন। শাওন যে স্কুলে পড়ে সেই পিরোজপুর-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরাদুল ইসলাম বলেন, শাওন অত্যন্ত নম্র, বিনয়ী ছেলে। সে ছাত্র হিসেবেও ভালো। এই বয়সে সে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। তবে তার পড়াশোনা করার যথেষ্ট আগ্রহ আছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, পরিবারটির খোঁজ খবর নিয়ে সাধ্যমত সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris