বুধবার

২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার রাজশাহীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এভারগ্রীণ’র দখল করে নির্মাণাধীণ কাউন্টার উচ্ছেদ করলো আরডিএ যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেতো : প্রধানমন্ত্রী শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানির তীব্র সংকট, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনরা নিয়ামতপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড রাজশাহীতে নারীর মোবাইল ফোন-ব্যাগ ছিনতাই, তিন ছিনতাইকারী গ্রেফতার

আউশ উৎপাদন বাড়াতেও নানামুখী উদ্যোগ

Paris
Update : বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১

এফএনএস : চলতি বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধানের উৎপাদনের পর সরকার এখন আউশের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। সেজন্য নেয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ। আউশ ধানের ফলন বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনাসহ পতিত জমি আউশ আবাদের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বছর ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ওই জমি থেকে ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই লক্ষ্য অর্জনে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছে। ফলে কৃষি মন্ত্রণালয় বোরোর মতো আউশেরও বাম্পার ফলন আশা করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এদেশে আউশ, আমন ও বোরো- তিন মৌসুমে ধানের চাষ করা হয়। বোরো ধান চাষে প্রচুর ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক উত্তোলনে পানির স্তর দিনে দিনে নিচে নেমে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের আউশ ধানের আবাদ বৃষ্টিনির্ভর। ফলে আউশ ধান উৎপাদনে সেচ খরচ সাশ্রয় হয়। যেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রচলিত শস্য পর্যায় পরিবর্তন করে বোরো ধানের চাষ বাদ দিয়ে শস্য পর্যায়ে আউশ ধান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। পাশাপাশি চলতি আউশ মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

ওই প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ৪ লাখ ৫০ হাজার বিঘা জমিতে চাষের জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার কৃষককে (কৃষক প্রতি ১ বিঘা) বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। তবে দেশের মৌলভীবাজার জেলায় সবচেয়ে বেশি জমি পতিত থাকে। ওই জমি চলতি মৌসুমেই আউশ ধান চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলার ৩ হাজার কৃষকের মাঝেই বিনামূল্যে ১৫ মেট্রিক টন আউশ বীজ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আশা করা হচ্ছে প্রণোদনা ও কৃষিকর্মীদের সহযোগিতার কারণে এ বছর আউশ আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ইতিমধ্যে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার হেক্টর।

সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় বিগত ২ বছর ধরেই আউশের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে। সেজন্য নেয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। যার মধ্যে অন্যতম প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আউশ বীজ ও সার বিতরণ। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং কৃষকদের মধ্যে আউশ আবাদের সুফল যথাযথভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। যে কারণে দেশে আউশের আবাদ ও উৎপাদন দুটোই বাড়ছে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে ৯ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছিল, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছর তা বেড়ে ১০ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়।

পরের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরো এক লাখ হেক্টর বেড়ে ১১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়। গত মৌসুমে (২০২০-২১) দেশের ১৩ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে আউশ আবাদ হয়েছিল। আর আউশ চাল উৎপাদিত হয়েছিল ৩৪ লাখ ৫১ হাজার টন। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি আউশ মৌসুমেও (২০২১-২২) ফসলি জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। আর ওই জমি থেকে আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার টন।

সূত্র আরো জানায়, আউশ আবাদে সেচ কম লাগে। সার ও পরিচর্যা খরচও কম। স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠকর্মীরা এই কথাগুলো মাঠপর্যায়ে কৃষকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কাজ করছে। ধান উৎপাদনে পরিচিত জেলাগুলোসহ সারাদেশে আউশ আবাদ জনপ্রিয় করতে কৃষকের কাছাকাছি কর্মকর্তাদের পৌঁছাতে তৎপর মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি আউশ মৌসুমকে সামনে রেখে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কৃষকদের সরকারি প্রণোদনা।

আর ওই প্রণোদনার মধ্যে থাকছে উচ্চ ফলনশীল জাতের আউশ বীজ, সার। আউশ আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও নিবিড় মনিটরিং। ফলে সেচসাশ্রয়ী আউশ আবাদে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে কৃষকরা। যার সুফল পাচ্ছে পুরো দেশ। আউশের আবাদ বাড়াতে চলতি বছর আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করেছে সরকার। তাছাড়া মৌলভীবাজারের পতিত জমিও চাষের আওতায় আনতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৩ হাজার কৃষকের মাঝে ১৫ টনের বেশি আউশ বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

প্রতিজন কৃষককে এক বিঘা জমি চাষের জন্য বীজ ৫ কেজি (প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে ৩২৫ টাকা), ডিএপি ২০ কেজি (প্রতি কেজি ১৪ টাকা দরে ২৮০ টাকা), এমওপি ১০ কেজি (প্রতি কেজি ১৩ টাকা দরে ১৩০ টাকা), পরিবহন প্রতি কেজি ৩ টাকা দরে ৩৫ কেজির জন্য ১০৫ টাকা ও আনুষঙ্গিক ১ টাকা হারে ৩৫ কেজির জন্য ৩৫ টাকা হিসেবে মোট ৮৭৫ টাকা প্রদান করা হয়। ওই প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় ২ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন বীজ, ৯০০০ মেট্রিক টন ডিএপি, ৪৫০০ মেট্রিক টন এমওপি বিনামূল্যে কৃষককে প্রদান করা হয়।

তাতে বীজ বাবদ ১৪ কোটি ৬২ লাখ ৫ হাজার টাকা, ডিএপি ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, এমওপি বাবদ ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ও পরিবহন ও আনুষঙ্গিক বাবদ ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা হিসেবে মোট ৩৯ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তাছাড়া বর্তমানে অবমুক্তকৃত উচ্চফলনশীল জাতের চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। আউশ ধান দু’ভাবে চাষ করা হয়। বোনা আউশ এবং রোপা আউশ। বোনা আউশের জনপ্রিয় আধুনিক জাতসমূহ ব্রি ধান ৪৩, ব্রি ধান ৬৫, ব্রি ধান ৮৩ এবং বিনা ধান-১৯। রোপা আউশ ধানের আধুনিক জাতসমূহ ব্রি ধান ৪৮, ব্রি ধান ৮২, ব্রি ধান ৮৫, বিনা ধান-১৯ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান ৭।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আউশের প্রতিটি জাতই উদ্ভাবকদের প্রত্যাশার চেয়ে অন্তত ৫০০ কেজি থেকে দেড় টন পর্যন্ত বেশি ফলন দিচ্ছে। জাতগুলো হেক্টর প্রতি বোরো মৌসুমের মতো ফলন দিতে সক্ষম। বোরো ধান কাটার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন জাতের আউশ ধান আবাদ করা যায়। আউশের পর আগস্টে আমন ধান করা যায়। এক জমিতে কৃষক তিনবার ধান ফলাতে পারে। এ জাতগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আউশ মৌসুমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

এদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ জানান, ২-৩ বছর ধরেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বৃষ্টিনির্ভর আউশ চাষে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ তাতে ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় কম। সরকার বীজ-সার প্রান্তিক কৃষকদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছে। কৃষকরাও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ পেয়ে খুশি। আর কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির করতে হলে একমাত্র আউশ ফসলই হচ্ছে ভরসা। এ ধান আবাদে সেচ কম লাগে। খরচও একেবারে কম। আবার সময়মতো আবাদ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানান, দেশে আউশের আবাদ একেবারেই কমে গিয়েছিল। অথচ এই একটি ফসল কম খরচে স্বল্প সময়ে বেশি উৎপাদন করা যায়। সেজন্যই আউশের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার জন্য যা যা করণীয় তা করতে প্রস্তুত মন্ত্রণালয়। আউশ আবাদ বাড়াতে চলতি মৌসুম থেকে আরো বেশি প্রান্তিক কৃষককে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার কাজ করছে মন্ত্রণালয় ও কৃষি অধিদফতর।

তাছাড়া এদেশে অনেক পতিত জমি আছে। যেগুলোতে এক সময় আউশ ফসল হতো। বিশেষ করে সিলেট, বরিশাল অঞ্চলের ওই পতিত জমিগুলোতেই আউশ আবাদের জন্য বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। নানা প্রণোদনা ও সুবিধা দেয়া হচ্ছে যাতে জমির মালিকরা তাদের পতিত জমিগুলোতে আউশ আবাদ করে। ইতিমধ্যে তাতে ভালো সাড়াও পাওয়া গেছে। আশা করা যায় বোরোর পর আউশেও কৃষক ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris