বৃহস্পতিবার

১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্লাস বন্ধ মাঠে জমেছে ঘাস!

Paris
Update : রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

শামীম রেজা : শিক্ষায় জাতির মেরুদন্ড। সেই শিক্ষা দানের প্রধান উপাদান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। মেধার মূল্যায়ণ না করে দেয়া হচ্ছে অটোপাশ। এক সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মূখরিত ছিল শিক্ষাঙ্গণ। পাঠদানে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছিল শিক্ষকদের। ছিল না আরাম আয়েশের সময়। সময় হলেই লেগে পড়তেন শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করতে। ক্লাস হলেই খুশি হতেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে সেই দিন। এক বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শ্রেণী কক্ষে পাঠদান।

তবে অনলাইন ব্যবস্থায় ক্লাস হলেও তাতে সাড়া নেই শিক্ষার্থীদের। সরকারী নির্দেশনা মেনে শিক্ষকরা করছেন অনলাইনে ক্লাস। বিশেষ করে গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পিতা কৃষক। কৃষি কাজ করে কোন মতে সংসারের খরচ চালায়। সেই পরিবারে জন্ম নেয়া একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে একটা দামি মোবাইল কিনে সেখানে ডানা উঠিয়ে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই সংসদ টিভির মাধ্যমেও পরিচালিত করা হচ্ছে পাঠদান।

অন্যদিকে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে না পড়ে সে কারনে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বাড়ির কাজ। বিভিন্ন বিষয়ের উপরে প্রশ্ন তৈরি করে বাড়ি থেকে সেটার উত্তর লিখে আনার জন্য বলা হচ্ছে। এতে সঠিক ভাবে জ্ঞান চর্চার বিপরিতে বই দেখে পূরণ করছে ওই সকল প্রশ্নের উত্তর। দেখে দেখে লিখার ফলে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন থেকে ছিটকে পড়ছে শিক্ষা জীবন শুরু করা শিক্ষার্থীরা।
এদিকে যে কয়জন শিক্ষার্থীর হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে তারাও লেখাপড়ার নামে গেইম লেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সকল কিছুই চলছে আগের মতো। দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও ভুলে গেছে তারা কোন ক্লাসের ছাত্র। শিক্ষকরাও ভালো মতো চিনতে পারছেন না তাদের শিক্ষার্থীদের। অনলাইন ব্যবস্থায় ক্লাস নেয়ার কারনে বাড়ি থেকেই চালাতে পারছেন ক্লাস। অফিসিয়াল কার্যক্রমও বন্ধের পথে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তেমন পদচারণা না থাকায় স্কুল কলেজের মাঠে নিরিবিলি বেড়ে উঠছেন ঘাস। সেই ঘাস কেটে এবং গবাদী পশু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন লোকজন।

বাগমারা উপজেলা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাকিব, মিলন, রনি, সৈকত সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, অনলাইনে ক্লাস করে সে ভাবে পড়ালেখা করা যায় না। আমাদের অনেক বন্ধুর মোবাইল নেই। তারা সময় মতো সেই ক্লাসগুলো করতে পারে না। অনেক সময় ডাটা (মেগা) না থাকলে অনলাইনে ক্লাস করা যায় না। সব দিক দিয়ে বিদ্যালয়ের মতো অনলাইনে ক্লাস করে ভালো ফলাফল করা সম্ভব না।

উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, উচ্চ মাধ্যমিক সহ ডিগ্রী কলেজ রয়েছে ২৬টি, উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ৭৬টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৪টি, মাদ্রাসা রয়েছে ৪৫টি, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ এবং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ২২০টি সহ কেজি স্কুল আছে ৬০ টির অধিক। উপজেলার এ সকল বিদ্যালয়গুলোতে নেই আর আগের মতো পাঠদান কার্যক্রম।

পুনরায় বাড়ানো হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি। ভবানীগঞ্জ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলী জানান, করোনা ভাইরাস যেহেতু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে তাই জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে সরকারী নির্দেশনায় শ্রেণী কক্ষে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্রেণী কক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকলেও চালু ছিল অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস। এতে করে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছাড়াই শিক্ষকরা তাদের বিষয়ে অনলাইনে ক্লাস করছেন। বর্তমানে এ্যাসাইনমেন্ট জমা নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন দেয়া হচ্ছে তারা সেটার উত্তর জমা দিচ্ছেন।

সেই এ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে বোর্ডে পাঠানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম. মাহমুদ হাসান জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে সরকারী সিদ্ধান্ত মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী যাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু রাখা হয়েছে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে এ্যাসাইনমেন্ট জমা নেয়া হচ্ছে। সরকারী নির্দেশনা পেলে আবারও খুলে দেয়া হবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris