বৃহস্পতিবার

২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে গ্রীন প্লাজা’র ৫ম প্রকল্পের ‘গ্রীন ছায়েরা মঞ্জিল’ এর শুভ উদ্বোধন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা লাল গালিচা সংবর্ধনা সাবধান! রাজশাহীতে নকল ফ্লেভার্ড ড্রিংকস-আইস ললি রাজশাহীতে জোরপূর্বক একাধিক ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই গোদাগাড়ীতে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ি এজাজুল হক ঝাবু গ্রেফতার রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে প্রতারণার ক্লু ধরে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত চক্রের মুল হোতসহ ৮ জন গ্রেফতার

ডায়াবেটিস রোগীদের আগ্রহ লক্ষণভোগ আমে

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চলছে ফলের রাজা আমের ভরা মৌসুম। সবাই যখন আমের সুমিষ্ট আমের স্বাদে মজে থাকবেন, তখন ডায়াবেটিস রোগীরা নিজেদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আগপিছ ভাবেন। আমে থাকা সুগারের জন্য খাওয়া বাদ দিয়ে এড়িয়ে চলতে চান। তাই বলে কি আম খাওয়া বাদ দেয়া যায়? আর তাই সুমিষ্ট আমের স্বাদ নিতে বিকল্প খুঁজে বের করেছেন ডায়াবেটিস রোগীরা। সাম্প্রতিক সময়ে ডায়াবেটিস রোগীরা ঝুঁকছেন বারি-২ বা লক্ষণভোগ আমের দিকে।

অন্যান্য আমের তুলনায় কম মিষ্টি বা সুগারের পরিমাণ কম, দেখতে ও গন্ধে খুব ভালো হওয়ায় স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে প্রথম পছন্দ এখন লক্ষণভোগ আম। চিকিৎসকরা বলছেন, আমের সুগার প্রাকৃতিক হলেও বেশি খাওয়া উচিত নয়। এটি রক্তের সুগার লেভেলের জন্য ক্ষতিকর।

গ্লুকোজ লেভেলেও প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, বাজারে গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, ফজলি আমের মিষ্টতা বেশি থাকায় সাধারণত ডায়াবেটিকস রোগীরা এসব আম খাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। অপরদিকে লক্ষণভোগ আমে রং, আকৃতি, গুণ ও স্বাদ তুলনামূলক ভালো এবং মিষ্টতা কম। তাই অনেকেই এখন লক্ষণভোগ আমকে ডায়াবেটিস আম বলেও ডাকেন।

আম গবেষকদের মতে, লক্ষ্মণভোগ আম হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা থেকে আসা আমের একটি জাত। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সর্বপ্রথম লক্ষ্মণভোগকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারক জাত হিসাবে বেছে নিয়েছিল। তাই মালদায় লক্ষণভোগকে সেখানকার শ্রেষ্ঠ আমের জাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমনকি ভারতের জাতীয় আম উৎসবে সেরা আম হিসেবেও স্বীকৃতি পায় লক্ষণভোগ।

মালদার পার্শ্ববর্তী এলাকা ও বাংলাদেশের আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জেও চাষকৃত আমের কয়েকটি প্রধান জাতের মধ্যে রয়েছে লক্ষণভোগ। জেলার সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষণভোগ আমের গাছ রয়েছে। তবে কি পরিমাণ জমিতে লক্ষণভোগের চাষাবাদ হয়েছে, এবিষয়ে কোন তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয়ভাবে লক্ষণভোগ আম লখনা নামেই বেশি পরিচিত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার প্রফেসরপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ষার্টোর্ধ্ব আব্দুর রশিদ বলেন, গত ১০-১২ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছি। নিজের বাগানের প্রচুর আম বাড়িতে নষ্ট হয়। খেতে পারি না, ডায়াবেটিসের ভয়ে। তবে এক ভাতিজার পরামর্শে গতবছর থেকে লক্ষণভোগ আম দু-একটা করে খাচ্ছি। আমটা একটু মিষ্টি কম হলেও এর সুঘ্রাণ অন্য সব আমের থেকে বেশি।

পাঁকলে টকটকে হলুদ রং ধারন করে। যা সকল মানুষকেই আকর্ষণ করে। ফার্মেসী দোকানদার আব্দুল মান্নান (৪৫) জানান, প্রায় ৭০ ভাগ মানুষই সুগারের আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করে। ফার্মেসী থাকার সুবাদে জানি, কতো মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। আমি নিজেও চিনিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। এমনকি কোন আম খায় না। তবে মিষ্টি কম হওয়ার কারনে মাঝেমধ্যে লক্ষণভোগ আম খায়।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাজিদুর রহমান গতবছর থেকে অনলাইনে আম ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে মানুষ আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে। এর সুবাদে ডায়াবেটিস না থাকলেও সচেতন ব্যক্তিরা লক্ষণভোগ আম কিনছে। তাই মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে লখনার বাজার ধরতে পারলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দাম কম হওয়ায় অনেকেই এখন বলে থাকেন, দামে কম মানে ভালো লক্ষণভোগ আম।

দেশের সবচেয়ে বড় আমবাজার কানসাটের আড়তদার ও মেসার্স ডিয়ার ফল ভান্ডারের মালিক দোস্ত মোহাম্মদ দোসু বুধবার (২৩ জুন) দুপুরে জানান, বর্তমানে বাজারে লক্ষণভোগের দাম চলছে মণে (৪০ কেজিতে) ৭০০-৮০০ টাকা। বাজারে চাহিদা থাকলেও এখন ক্ষীরসাপাত আমের ভরা মৌসুম থাকার কারনে দাম অনেক কম রয়েছে। আগামী সপ্তাহে লক্ষণভোগ আমের দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাব্বানী জানান, লক্ষণভোগ আমে সুগার নেই বা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অসুবিধার কারন নাই বিষয়টি এমন নয়। যেকোন সুগারই অত্যান্ত হুমকির। তবে লক্ষণভোগ আম কিছুটা মিষ্টি কম হওয়ায় তা অন্যান্য আমের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুবিধাজনক। তবে খাওয়ার পরিমাণ অব্যশই পরিমিত হতে হবে।

আম গবেষকদের মতে, লক্ষণভোগ আমের আঁশ খুবই কম। এর রং ও গন্ধ অসাধারন। খোসা কিছুটা মোটা হলেও আটি পাতলা। আম দ্রুত পচনশীল ফল হলেও অন্যান্য জাতের তুলনায় লক্ষণভোগ অধিক সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। এমনকি লক্ষণভোগ আম পাকার পরেও ৮-১০ দিন ভাল থাকে। এই আমটি ওজনে ১৫০-৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। হালকা মিষ্টি ও অন্যান্য আকর্ষণীয় গুণাবলির কারণে বিদেশিদের পছন্দের শীর্ষে লক্ষণভোগ। এই আমের প্রায় ৭৫ ভাগ অংশই ভক্ষণযোগ্য।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব আম গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য আমের তুলনায় ৫-১০ শতাংশ কম মিষ্টি ডায়াবেটিস রোগীদের খুব পছন্দের জাত লক্ষণভোগ। আমটির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে এর সংরক্ষণ ক্ষমতা। গাছ থেকে পাড়ার পর ৮-১০ দিন পর্যন্ত সহজেই এ আম রাখা যায়। এসব গুণাবলির কারণেই লক্ষণভোগকে রপ্তানিযোগ্য ফল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, নানা সুবিধার কারনে এই জাতের আম চাষাবাদের জন্যেও অনেক উপযোগী। বিরুপ আবহাওয়াতেও ভালো ফলন দেয় লক্ষণভোগ। আম চাষী, ব্যবসায়ী, রফতানিকারক ও গবেষকদের দাবি, রপ্তানিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ আম চাষের প্রসার ঘটানো ও এ আম রপ্তানি করে দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় এবছর প্রায় ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানে প্রায় ২৭ লক্ষ গাছ থেকে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris