শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝোপঝাড় থেকে পাওয়া গেল আমেরিকান পালমার

Paris
Update : বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : হর্টিকালচার সেন্টারের নালার পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় ঝোপঝাড়ে ঢেকে ছিল দুইটি আম গাছ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এতোদিন গাছ দুটি কারো চোখে পড়েনি। গতবছর জঙ্গল পরিষ্কার করার পর গাছগুলো উদ্ধার হলেও ফলন আসেনি। তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। গাছ দুটি থাকা আমগুলোই সবুজের ওপরে লাল রং ছেয়ে গেছে। পরিপক্ব হওয়ার পর আকর্ষণীয় এই আমের জাত নিয়ে ভাবনায় পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন।

হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদদের নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। খুঁজতে থাকলেন এই রঙিন আমের জাত উদ্বারে। শরণাপন্ন হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) বৈজ্ঞানিক আবু সালেহ মো. ইউসুফের নিকট। সরেজমিনে পরিদর্শন করে তিনি জানালেন, রঙিন আমটি বিখ্যাত আমেরিকান রেড পালমার জাতের। আমের পাশাপাশি এর ডালপালাগুলোও লাল রঙয়ের। জানা যায়, আমেরিকার ফ্লোরিডার মিসেস ভিক্টর মেল নামক ব্যক্তির অধীনে ১৯২৫ সালে বীজ থেকে জন্ম নেয় পালমার জাতের আম গাছ।

পরের কয়েক দশক পর্যন্ত এই গাছ সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও ২০০৫ সালে এটি সরকারিভাবে নামকরন করা হয় আমেরিকান পালমার। হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মী মেহেদী হাসান জানান, গতবছর জঙ্গল পরিষ্কার করার পর দু-একটা আম এসেছিল। তারপরও পরের বছর গাছের ফলন ও জাত দেখার জন্য ডিডি মহোদয় গাছটি রাখতে বলেছিলেন। এবছর ব্যাপকভাবে আম ধরেছে। লাল রঙে ছেয়ে গেছে দুটি গাছ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. হাবিবুল্লাহ জানান, গাছ দুটির বয়স প্রায় ৮-৯ বছর।

কিন্তু ঝোপঝাড়ে ঢেকে আমাদের নজর এড়িয়ে ছিল বিখ্যাত ও বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমগুলোর মধ্যে অন্যতম আমেরিকান রেড পালমার। গতবছর হর্টিকালচার সেন্টারের বর্তমান উপ-পরিচালক যোগদান করার পর ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার সীধান্ত নিলে গাছটি উদ্বার হয়েছে। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারের আমন্ত্রণে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমগুলো বিখ্যাত আমেরিকান রেড পালমার বলেই মনে হয়েছে। আম আম পাঁকলে আরও পরীক্ষার দরকার রয়েছে। এছাড়াও এর বিশাল বানিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।

কারন বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকান রেড পালমার জাতের আমের গড় ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম। জুলাই মাসের মাঝামাঝি দিকে পাঁকে বলে বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। দেখতে আকর্ষণীয় বলে অনেকের খুব পছন্দের আম রেড পালমার। এই জাতের আমের আঁশহীন শাঁস রয়েছে। মিষ্টতা (টিএসএস) ১৮ শতাংশ। নাবী জাতের ভালো মিষ্টতা সম্পন্ন এই আমের উদ্ভাবন আমেরিকার বলে জানান তিনি।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, বর্তমানে বিখ্যাত এই আমের জাতটি বিভিন্ন বাসার ছাদে ও টবে চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি। নাবী জাতের হাওয়ায় এর বিশাল বানিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষীরসাপাত-ল্যাংড়া জাতের আম শেষ হওয়ার পর পালমার জাতের আম পরিপক্ক হয়। এছাড়া এই আমের স্বাদ ভালো মিষ্টি।

পালমার জাতের আমের সবচেয়ে বড় গুণ এর আকর্ষণীয় রঙ। যা সকলকে আগ্রহী করে। এই আমের জাত উদ্বারের পাশাপাশি এই আমের সংরক্ষণ, চারা বাজারজাতকরণ ও বিদেশি রপ্তানির সুযোগ করে দিলে জেলার আমচাষীরা লাভবান হতে পারবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, সারাবিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে বিখ্যাত আমেরিকান রেড পালমার জাতের আমের।

বিশ্বব্যাপী চাহিদা ছাড়াও আমাদের দেশে উচ্চবিত্তদের মাঝে এই আমের প্রতি ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে। তাই এটি চাষাবাদে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তিনি আরও বলেন, এই জাতের আম গাছ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল এতোদিন ঝোপঝাড়ে থেকেও বেঁচে আছে।

চারিদিকে পানির নালা থাকার পরেও জঙ্গল থেকে মুক্তি পেয়েই এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা এর চারা তৈরি শুরু করবো। আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেড পালমার জাতের আমের প্রসারে হর্টিকালচার সেন্টারের পক্ষ হতে কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris